যেসব কারণে ব্যতিক্রম এবারের বাজেট
প্রকাশিত:
২ জুন ২০২৫ ২১:৩৭
আপডেট:
৪ জুন ২০২৫ ১৩:০০

সোমবার (২ জুন) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এবারের বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়েছে বিটিভির ধারণ করা বাজেট বক্তব্যে। সোমবার বিকাল ৩টায় অর্থ উপদেষ্টা বাজেট পেশ করেন। এবারের বাজেট নানা কারণে ব্যতিক্রম। চলুন জেনে নেই সেই ব্যতিক্রমী কয়েকটি বিষয়:
ব্রিফকেসবিহীন
ব্রিফকেস ছাড়া যেন বাজেট কল্পনাও করা যেত না আগের বছরগুলোতে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্রিফকেস হাতে অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করতে আসতেন। তবে এবার ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হলো বাজেট।
অর্থ উপদেষ্টা সোমবার বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) স্টুডিও থেকে সরাসরি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেন। এটি ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নিজের এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট।
এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় ওই বৈঠকে অনুমোদন হয় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট। অনুমোদনের পর তাতে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর বাজেট ডকুমেন্টস নিয়ে রামপুরার বিটিভি ভবনে যান অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। সে সময় তার হাতে কোনো কালো ব্রিফকেস ছিল না।
সেখান থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশন সরাসরি বিকেল ৩টায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট বক্তৃতা প্রচার করা হয়। সে সময় স্বাভাবিক পোশাক পরেই ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বিটিভিতে তার প্রথম বাজেট উপস্থাপন করেন।
আগের তুলনায় ছোট
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট প্রস্তাব করেছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। যা আগের বছরের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবার আগের বছরের তুলনায় ছোট বা কম আকারের বাজেট উপস্থাপন হলো এবার।
এর আগে কখনোই আগের অর্থবছরের তুলনায় কম আকারের বাজেট পেশ হয়নি দেশের ইতিহাসে।
সংসদে উত্থাপিত হয়নি
বর্তমানে সংসদ কার্যকর নেই। তাই এবারের বাজেট সংসদে উপস্থাপনও করা হয়নি। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমে এ বাজেট উপস্থাপন করেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। অন্যান্য সংবাদমাধ্যমেও তা প্রচার হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে বাজেট উপস্থাপন করা হয় ভিন্ন আঙ্গিকে।
সবশেষ সংসদের বাইরে বাজেট দেওয়া হয় ২০০৮ সালে। তখন ক্ষমতায় ছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
সূত্রে জানা গেছে, যেহেতু সংসদ কার্যকর নেই, সেহেতু বাজেটের ওপর জুন মাসজুড়ে সাধারণ আলোচনারও সুযোগ নেই। বিধায় এ বছর সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে বাজেট সম্পর্কিত মতামত নেবেন অর্থ উপদেষ্টা। দেশের যেকোনো নাগরিক বাজেট সম্পর্কিত যেকোনো মতামত অর্থ মন্ত্রণালয়ে পৌঁছাতে পারবেন। এসব মতামতকে একত্রিত করে যা গ্রহণ করা সম্ভব তা তিনি বাজেটে যুক্ত করে আগামী ২৩ জুন অনুষ্ঠিতব্য উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করবেন চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। উপদেষ্টা পরিষদের ওই বৈঠকে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদনের পরে তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে। যা ১ জুলাই ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে।
জুলাই যোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হতাহত ও তাদের পরিবারের জন্য বাজেটে ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণ, গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার পুনর্বাসনসহ গণঅভ্যুত্থানের আদর্শ ও চেতনা রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার কাজও চলমান। শিগগিরই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ‘শহীদদের’ পরিবার এবং আহতদের ভাতা দেওয়ার নীতিমালা করা হবে। এছাড়া তাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ‘শহীদদের’ পরিবার ও আহতদের জন্য ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছি।
তারুণ্যের উৎসব
তরুণ-যুবাদের দেশের উন্নয়নে আরও গভীরভাবে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ‘তারুণ্যের উৎসব’ উদযাপনের জন্য নতুন অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বাজেট বক্তৃতায় উপদেষ্টা বলেন, যুব সমাজের অমিত শক্তি ও সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে দক্ষ যুবশক্তি গড়ে তোলা এবং তাদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ প্রতিপাদ্যকে ঘিরে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’ উদযাপন করা হয়েছে।
আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সারা দেশে সফল যুব উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে বলেও জানান অর্থ উপদেষ্টা।
এছাড়া তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠন করারও প্রস্তাব করেছেন তিনি।
তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য এমন তহবিল এবারই প্রথম উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্য আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়েছে।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: