মঙ্গলবার, ১৯শে আগস্ট ২০২৫, ৪ঠা ভাদ্র ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


বুনিয়া সোহেলকে বাঁচাতে তৎপর পুলিশ

জেনেভা ক্যাম্পে ককটেল-গান পাউডার উদ্ধার মামলায় পুলিশের কারসাজি


প্রকাশিত:
১৯ আগস্ট ২০২৫ ১৫:৫২

আপডেট:
১৯ আগস্ট ২০২৫ ১৮:১০

ছবি ‍সংগৃহিত

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী সোহেল ওরফে বুনিয়া সোহেলকে বাঁচাতে মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, গত শুক্রবার (১৫ আগষ্ট) বুনিয়া সোহেলের মাদকের আস্তানা থেকে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে প্রায় এক কোটি ১৫ লাখ টাকা, টাকা গণনার মেশিন, ১৩টি তাজা ককটেল বোমা, ২৫টি আধা প্রস্তুত ককটেল, ৪০০ গ্রাম গান পাউডার ও দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র উদ্ধার করে।

উদ্ধার করা এসব টাকা, দেশীয় অস্ত্র, ককটেল ও গানপাউডারগুলো পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে যৌথ বাহিনী। টাকা ও মাদক উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বুনিয়া সোহেল ও তার গ্রুপের সদস্যদের আসামি করা হলেও ককটেল উদ্ধারের ঘটনায় শীর্ষ এই মাদক কারবারি ও তার গ্রুপের সদস্যদের আসামি না করে বিস্ফোরক মামলায় এক নিরপরাধ ব্যবসায়ীসহ শীর্ষ মাদক কারবারিদের আসামি করে মামলা করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, বুনিয়া সোহেলের আস্তানা থেকে উদ্ধার হওয়া এসব বিষ্ফোরক সরঞ্জামাদির মামলায় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বুনিয়া সোহেলের নামে মামলা না দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

‎‎ক্যাম্পের সাধারণ বাসিন্দাদের অভিযোগ, থানা পুলিশ ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে টিকিয়ে রাখছে। এসব মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সাধারণ বাসিন্দারা মুখ খুললেই তাদের নামে উল্টা মামলা দিয়ে মাদক ব্যবসায়ী বানানো হচ্ছে। এতে পুরো ক্যাম্পের প্রায় সব বাসিন্দাদের মাদক ব্যবসায়ী সাজানো হচ্ছে। বিশেষ করে, গত বছরের ৫ আগষ্ট হাসিনা সরকার পালিয়ে যাওয়ার পর ক্যাম্পের মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের সঙ্গে মিশে এ কাজ করছে।

তারা আরও অভিযোগ করে বলেন, ওইদিন সব মিডিয়ার সামনে জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বুনিয়া সোহেলের বাসা থেকে বিপুল পরিমান ককটেল, গান পাউডার উদ্ধার করে নিয়ে যায়। কিন্তু এ ঘটনায় বুনিয়া সোহেলের নাম বাদ দিয়ে মামলা করেছে পুলিশ। এ মামলায় সোহেলের গ্রুপের কাউকেই আসামি করেনি। বরং ককটেল উদ্ধারের ঘটনায় আসামি করা হয়েছে তার প্রতিপক্ষ ক্যাম্পের অন্য আরেক শীর্ষ মাদক কারবারি সেলিম ওরফে চুয়া সেলিম ও তার গ্রুপের সদস্যদের নামে।

এ মামলায় পুলিশ মোটা অঙ্কের টাকা খেয়েছে। নিরপরাধ এক ব্যবসায়ীকেও আসামি করা হয়েছে। যদি বুনিয়া সোহেলের সাথে থানা পুলিশের যোগাযোগ না থাকতো তাহলে কেন তার বাসার পাশ থেকে তার গ্রুপের সদস্যদের বাসা থেকে এ বিস্ফোরক উদ্ধার করার পরও তার প্রতিপক্ষ মাদক ব্যবসাীদের নামে মামলা হয়?

‎‎থানা পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অভিযান অংশগ্রহণ করা সংশ্লিষ্ট সেনা কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, কার বাসা থেকে কী উদ্ধার করা হয়েছে। সব কিছু তালিকা করে থানায় জমা দেওয়া হয়েছে।

‎‎থানায় জমা দেওয়া তালিকাতে দেখা যায়, বুনিয়া সোহেলের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ ককটেল, ককটেল তৈরির উপকরণ (গান পাউডার, কাচ ও পাথরের টুকরা), নগদ কোটি টাকা ও দেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তালিকায় ১০ ধরনের নানা সরঞ্জামাদির নাম উল্লেখ করে জব্দ তালিকাটি থানায় জমা দেন সেনাবাহিনীর শেরে বাংলা নগর ক্যাম্পের ওয়ারেন্ট অফিসার মো. আজিজ। সেটি বুঝে নেন মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. জাহাঙ্গীর আলম।

‎টাকা ও মাদক উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বুনিয়া সোহেল ও তার গ্রুপের সদস্যদের আসামি করা হয়। কিন্তু ককটেল উদ্ধারের ঘটনায় শীর্ষ এ মাদক কারবারি ও তার গ্রুপের সদস্যদের আসামি করেনি পুলিশ। পাশাপাশি, যার বাড়ি থেকে এসব বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। তাকেও মামলায় আসামি করা হয়নি।

বিস্ফোরক আইনের এ মামলায় এক নিরপরাধ কারচুপি ব্যবসায়ীসহ শীর্ষ মাদক কারবারিসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়। এতে ১১ নম্বর আসামি করা হয় জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দা ও কাপড়ের কারচুপির ব্যবসায়ী মো. সারওয়ার নামের একজনকে।

‎অভিযান সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত শুক্রবার (১৫ আগস্ট) মধ্যরাতে বুনিয়া সোহেলকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মিলে জেনেভা ক্যাম্পে যৌথ অভিযান চালায়।

অভিযান শেষে সেনাবাহিনী গণমাধ্যমে পাঠানো এক তথ্যে জানায়, বুনিয়া সোহেলের আস্তানা থেকে ১৩টি তাজা ককটেল বোমা, ২৫টি আধা প্রস্তুতকৃত ককটেল বোমা, ৪০০ গ্রাম গানপাউডার বিস্ফোরক, ২টি সামুরাই তলোয়ার, ১২টি হকিস্টিক, ২৯টি হেলমেট, ২টি ড্রাগন লাইট, ১১ কেজি গাঁজা, ১২ প্যাকেট হেরোইন, নগদ ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা এবং টাকা গণনার মেশিন উদ্ধার করা হয়।

অভিযান শেষে উদ্ধারকৃত টাকা, মাদকসহ সব মালামাল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টাকা ও মাদক উদ্ধার এবং ককটেল উদ্ধারের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করে মোহাম্মদপুর থানা।

‎মামলার বিষয়ে সারওয়ার বলেন, আমি ও আমার পরিবার কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত না। কাপড়ে কারচুপির ব্যবসা করে যা পাই তা দিয়ে সংসার চালাই। আমি অনেক বড় বড় কাপড়ের ব্র্যান্ডের কাজ করি। কিন্তু কী কারণে আমাকে এমন একটি মামলার আসামি করা হলো কিছু বুঝতে পারছি না। কারও সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই।

‎এমন ঘটনায় মামলার বাদী ও মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওহিদুল ইসলাম বলেন, আমি অভিযানে ছিলাম না। অভিযান শেষে উদ্ধারকৃত মালামাল বুঝে নিতে জব্দ তালিকা প্রস্তুতের সময়ে আমি ছিলাম। পরবর্তীতে আমার সিনিয়র স্যারদের নির্দেশে আমি মামলার বাদী হয়েছি। অভিযানের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। টাকা ও মাদক উদ্ধারের ঘটনায় সোহেল ও তার গ্রুপকে আসামি করা হয়েছে। আর ককটেলসহ বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় চুয়া সেলিম ও তার গ্রুপকে আসামি করা হয়েছে। একই মামলায় দুই গ্রুপকে আসামি করা যায় না। তবে কার বাসা থেকে কী উদ্ধার হয়েছে এই বিষয়ে আমার জানা নেই।

‎‎এ বিষয়ে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ইবনে মিজান বলেন, আমি সবার সঙ্গে কথা বলেছি। টাকা ও ককটেল উদ্ধারের ঘটনায় পৃথক মামলা হয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে কেউ যেন বাদ না যায় সেভাবেই দুই গ্রুপের নামে মামলা করা হয়েছে। যদি কোন নিরপরাধ ব্যক্তির নামে মামলা হয়ে থাকে। তাহলে তা তদন্তের মাধ্যমে বাদ দেওয়া হবে।

এসএন/রুপা


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top