শুক্রবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৫, ১১ই বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


বিশেষ সংকেতে ঘুষ লেনদেন

পাসপোর্ট নিয়ে জাল-জালিয়াতির কারবার


প্রকাশিত:
২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৩:৫৯

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:০৩

 ছবি : সংগৃহীত

সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে পাসপোর্ট নবায়ন করতে কালীগঞ্জ উপজেলা থেকে গাজীপুরের আঞ্চলিক অফিসে যান দুজন ব্যক্তি । বৈধ নিয়মে আবেদন জমা দিলে চেয়ারম্যানের সার্টিফিকেট, বিদুৎ বিলের কপি এবং চাকরির প্রত্যয়নপত্র না থাকার অজুহাতে তাদের আবেদন বাতিল করা হয়। এক ঘণ্টার ব্যবধানে দালালের মাধ্যমে করা একই আবেদন জমা দিলে তা গ্রহণ করে পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ।

আবেদনকারীর ফাইল খতিয়ে দেখা যায় একই আবেদন। কাগজপত্রে কোনো পরিবর্তন নেই। শুধু একটি স্লিপের নিচে বিশেষ সিল মেরে দিয়েছে দালাল। বিনিময়ে দুটি আবেদনে তাদের দিতে হয়েছে অতিরিক্ত তিন হাজার টাকা।

পরে ফাইলটি নিয়ে আবারও লাইনে দাঁড়ান আবেদনকারী। দীর্ঘ দু-ঘণ্টা পর সেই একই কর্মকর্তার কাছে গেলে উল্টিয়ে বিশেষ সংকেত দেখে জমা নিয়ে নেন আবেদন। পাসপোর্ট অফিস এলাকায় জেকে-৩, জেইউ-৩ সহ বহু সংকেত ব্যবহার করে ঘুরে বেড়াচ্ছে দালাল চক্র।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দালাল চক্রের একজন জানান, এই অফিসের সামনে ও ভেতরে অন্তত ৩০টি চ্যানেল (দালালকে তাদের ভাষায় চ্যানেল বলা হয়) রয়েছে। যারা গাজীপুর পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে এসব সিল সংকেতের মাধ্যমে অবৈধভাবে টাকা কামাচ্ছে। দিন শেষে দালালের করা লিস্টের টাকার একটা বড় অংশ অসাধু কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে দেয়া হয়।

দালাল ছাড়া এমন হয়রানি যেন পাসপোর্ট অফিসের নিত্যদিনের সঙ্গী। অফিসের সামনের গলিতে খুপরির মতো দেখতে সারি সারি দোকান। সাইনবোর্ড দেখে যে কেউ মনে করবে এসব কম্পিউটার-ফটোকপির দোকান। কিন্তু এর আড়ালে ভেতরে ব্যবসা ভিন্ন। প্রকাশ্যে চলছে পাসপোর্ট নিয়ে জাল-জালিয়াতির কারবার। ভুয়া সিল প্যাড ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে যাবতীয় নকল কাগজপত্র। হাত বাড়ালেই মিলছে সব। আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সামনে এসব দোকানঘর ঘিরেই তৎপর চক্রের সদস্যরা।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, বেশির ভাগ পাসপোর্টপ্রত্যাশী ই-পাসপোর্টের ফরম পূরণ করতে গিয়ে দালালের ফাঁদে পড়ছেন। ফরম পূরণ শেষ হলেই দ্রুত সময়ে পাসপোর্ট করার অফার দেয় দালালরা। পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের জন্য টাকার অঙ্ক ভিন্ন। সিরিয়াল ছাড়া আবেদন জমা করতে ৩ থেকে ৫ হাজার, নামের বানান সংশোধনে সর্বনিম্ন ২০ হাজার এবং জন্মতারিখ সংশোধনে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ পর্যন্ত টাকা চাওয়া হচ্ছে।

আরেক দালাল জানান, অফিসে তাদের লোক আছে। পাসপোর্ট আবেদনে তাদের দেয়া সিল থাকলে আবেদন নিয়ে আর কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না। দিন শেষে নামের হিসাব করে কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয় ঘুষের টাকা। পাসপোর্ট দালালির কাজে তাদের প্রত্যেকের গড়ে দৈনিক আয় হয় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া পাসপোর্টের ‘বড় কাজ’ পেলে তো কপাল খুলে যায়।

গাজীপুর পাসপোর্ট অফিসের পাশে এমন অর্ধশতাধিক দোকানে দিনভর চলছে আজব এই ঘুষ কমিশন ও জালিয়াতির কারবার। বেশির ভাগ দোকানে লোক দেখানোর জন্য রাখা আছে কম্পিউটার এবং ফটোকপি মেশিন। সারাক্ষণ এখানে দালালদের প্রকাশ্য হাঁকডাক। কোনো আবেদনকারী সামনে এলেই তারা বলে ওঠেন: ‘কী কাজ ভাই? আসেন, বসেন। করে দিব। কম (টাকা) লাগবে।’

প্রধান কম্পিউটার, কালীগঞ্জ কম্পিউটার, মা কম্পিউটার, ফরিদ কম্পিউটার, মায়ের দোয়া স্টুডিও নামের বিভিন্ন দোকানে দালালদের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। দেখা যায়, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ পাসপোর্ট সংক্রান্ত বহুবিধ সমস্যা নিয়ে দালালের শরণাপন্ন হচ্ছেন। এদের একটি বড় অংশ পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে সমাধান পাননি অথবা চরম হয়রানির শিকার হয়েছেন।

সাকিব হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী জানান, তার বাবার নামের একটি সংশোধনের আবেদন করেছেন চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। কিন্তু দীর্ঘ ছয় মাসেও এর কোনো সমাধান হয়নি। অফিসে গেলে বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এই পাসপোর্টের জন্য বাবাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে পারছেন না তিনি। এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি চান শিক্ষার্থীসহ গ্রাহকরা।

পাসপোর্ট অফিসে হয়রানি ও নানা অনিয়মের ব্যাপারে গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান জানান, ‘সরকারি সেবার ব্যত্যয় ঘটলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

পাসপোর্ট অফিসের তথ্যমতে, প্রতিদিন এই আঞ্চলিক অফিসে আবেদন পড়ে ৬০০ থেকে ৭০০। আর ডেলিভারি দেয়া হয় ৫০০ থেকে ৬০০-র মতো পাসপোর্ট। ক্যাটাগরি বিবেচনায় সর্বনিম্ন ৪ হাজার ২৫ টাকা থেকে ৮ হাজার ৫০ টাকায় পাসপোর্ট করার সরকারি নিয়ম রয়েছে।


সম্পর্কিত বিষয়:

পাসপোর্ট

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top