সাবেক মেম্বারের বাড়িতে মরদেহ : পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলছে পুলিশ
প্রকাশিত:
২৭ জানুয়ারী ২০২৩ ০২:৩২
আপডেট:
৮ মে ২০২৫ ০২:১৬

বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জে দুই নারীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করছে পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা। পারিবারিক কলহের জেরে এই হত্যাকাণ্ড হতে পারে বলে দাবি নিহত গৃহবধূ রিপা আক্তারের ফুফু সীমা বেগমের।
তিনি বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে বলেন, রিপা আক্তারের স্বামী সোলাইমান হোসেনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই পারিবারিক কলহ চলে আসছিল। এ নিয়ে কয়েকবার শালিসও হয়েছে। এমনকি সোলাইমান রিপাকে ডিভোর্স দিয়েছিল। তবে পারিবারিকভাবে সমঝোতা করে পুনরায় সংসার শুরু করে রিপা। এরপরও নানান কারণে ঝুটঝামেলা লেগেই ছিল।
সীমা বলেন, গতকাল রাতে রিপার প্রতিবেশীরা এক যুবককে ঘরের সামনে দেখেন। কিন্তু চিনতে পারেনি। প্রতিবেশীদের দেখে সেই যুবক অন্ধকারে মিলিয়ে যান। আমার ধারণা সেই যুবকই হচ্ছে রিপার স্বামী সোলাইমান। তাছাড়া যেখান থেকে সিঁধ কাটা হয়েছে সেখান থেকে লোক উঠতে পারে না। কোন লোক ওঠেনি। সিঁধ যেখানে তার ভেতরে ঘরের অংশে চৌকির নিচে মাকড়শার জাল রয়েছে। যদি কেউ ওই দিক দিয়ে ঢুকত তাহলে সেগুলো ছিড়ে যেত।
আমি ঘটনার সঠিক তদন্ত করে হত্যাকারীর বিচার চাই।
বাবুগঞ্জ থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) অলিউল ইসলাম বলেন, বুধবার দিবাগত রাত দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের এক থেকে দেড়শ গজ দূরে ঘটনাস্থল। তবে আমরা গিয়ে ঘটনাস্থলে কাউকে পাইনি, তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয়রা।
তিনি জানান, রাত ১১টার দিকে প্রতিবেশী এক নারী টয়লেটে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হন। তখন তিনি বাড়ির মধ্যে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির অবস্থান দেখতে পেয়ে ডাকাডাকি করেন। তবে ওই ব্যক্তি কোনো উত্তর না দিলে ওই নারী ঘরের ভেতর থেকে টর্চ লাইট আনতে যান। এসে ওই ব্যক্তিকে আর না পেয়ে নিজেদের গোয়াল ঘরের দিকে যান। সেখানে গিয়ে গরুসহ সবকিছু ঠিকভাবে দেখতে পান। পরে ঘরে ফেরার সময় সাবেক ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেনের ঘরের দরজা খোলা দেখতে পেয়ে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু ঘরের ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না আসায় তিনি ভয়ে চিৎকার দিলে আশপাশের বাড়ির লোকজনও সেখানে জড়ো হন। পরে স্থানীয়রা মিলে ঘরের ভেতর গিয়ে তিন নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং পুলিশে খবর দেয়।
স্থানীয় দফাদার আবু হানিফ জানান, ঘটনার রাতে ওই বাড়িতে দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী, মা ও ছেলের বউ ছাড়া কেউ ছিলেন না। সার্বিক আলামত দেখে চুরির জন্য নয়, হত্যাকাণ্ডের জন্যই এমনটা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ঘরের এক পাশে একটি ছোট আকারের সিঁধ কাটা হয়েছে, তবে সেটি দিয়ে কোনো মানুষের চলাচল সম্ভব নয়। আর পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে যেটুকু জেনেছি তাতে কিছু স্বর্ণালংকারসহ অল্প কিছু মালামাল খোয়া গেছে।
ইউপি চেয়ারম্যান নূরে আলম বেপারী জানান, ঘটনাস্থলে আমি গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছে হয়তো খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক কিছু মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ঘটনা তদন্তে পুলিশ কাজ করছে। আশা করছি দ্রুত সময়ে রহস্য বেড়িয়ে আসবে।
বাবুগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি পুরোপুরি পরিকল্পিত একটি হত্যাকাণ্ড বলেই মনে হয়েছে। বিষয়টি ভিন্ন দিকে রূপ দেওয়ার জন্য চুরির ঘটনা সাজানো হয়েছে। আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রসঙ্গত, বুধবার (২৫ জানুয়ারি) বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড ভূতেরদিয়া গ্রামের সাবেক ইউপি মেম্বার দেলোয়ার হোসেনের বাড়ি থেকে তার দাদি ও পূত্রবধূর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তার স্ত্রী মিনারা বেগম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: