শুক্রবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৫, ১২ই বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


‘চাল কিনতিই তো ট্যাকা শ্যাষ, মাছ-গোস্ত কি দি কিনব’


প্রকাশিত:
২৭ জানুয়ারী ২০২৪ ১৩:২৭

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:৩৪

রিকশাওয়ালা আব্দুর রহমান

ধানের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে দেশের সর্ববৃহৎ চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরের মিল মালিকরা দফায় দফায় চালের দাম বাড়িয়েছেন। এক মাসের ব্যবধানে মিলগেটে প্রতি কেজি চাল ২ থেকে ৩ টাকা আর খুচরা বাজারে ৪ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চালের এমন দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। কুষ্টিয়া পৌর কাঁচাবাজারসহ শহরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

গত এক মাস আগের ৬২ টাকা কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৬ থেকে ৬৮ টাকায়। মিলারদের কারসাজির কারণেই মূলত চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। পাইকারি বাজারে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খুচরা বাজারেও দাম বেড়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীদের পক্ষে দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা।

তাইজাল স্টোরের মালিক চাল ব্যবসায়ী তাইজাল আলী বলেন, চাল মিল মালিকরা দফায় দফায় দাম বাড়িয়েছে। এজন্য খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে। মিনিকেট চাল ৬৬ টাকা কেজি কিনতে হচ্ছে। পাইকারিতে দাম বাড়ার কারণে খুচরা বাজারে দাম বাড়ে। বর্তমানে লোকসানে চাল বিক্রি করছি। মোকাম থেকে ৬৬ টাকায় কিনে ৬৪ টাকায় বিক্রি করছি।

হক স্টোরের মালিক বলেন, গোল্ডেন মিনিকেট চাল ৬৬ টাকা কেজি দরে কিনে ৬৮ টাকা দরে বিক্রি করছি। মোকামে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য খুচরা বাজারেও দাম বেড়েছে।

হক স্টোরের মতো আলী জেনারেল স্টোরের মালিক আলী ও সিরাজ স্টোরের মালিক সিরাজ প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি করছেন ৬৮ টাকায়। তিনি বলেন, পাইকারি বাজারের চালের দাম বেড়েছে। মিনিকেট চাল ৬৬ টাকা কেজি পাইকারি কিনতে হয়। ৬৬ টাকায় কেনা সেই চাল ৬৮ টাকায় বিক্রি না করলে কিছু থাকে না।

রঞ্জু নামের ৬৫ বছর বয়সী একজন দর্জি বলেন, আমি প্রায় চার যুগ ধরে দর্জির কাজ করি। বর্তমানে আমি প্রতিদিন ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা আয় করি। আমার পরিবারের ছয় জন সদস্য। একমাত্র আমার আয়ের টাকায় সংসার চলে। জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়েছে। ১০ বছর আগে ৪০ টাকা কেজি দামের চাল এখন ৬৮ টাকা কেজি। যা আয় করি তা দিয়ে চাল ডাল সবজি কিনতেই শেষ হয়ে যায়। মাছ মাংস কেনার অবস্থা নেই। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশী। খুব সমস্যার মধ্যে আছি।

রিকশাচালক আব্দুর রহমান (৫৬) বলেন, চালের দাম শুধুই বাড়ে কিন্তু কমে না। আমার পরিবারের পাঁচজন সদস্য। সবাই আমার আয়ের উপর নির্ভরশীল। সারাদিন রিকশা চালিয়ে ৪০০ টাকা আয় হয়। এই টাকা থেকে গ্যারেজে ভাড়া দিতে হয়, তরিতরকারি ও চাল ডাল কিনতে হয়। ‘চাল কিনতিই তো ট্যাকা শ্যাষ, মাছ-গোস্ত কি দি কিনব।’

রাশিদা খাতুন বলেন, আমার স্বামী হার্টের রোগী। ১৫ বছর ধরে অসুস্থ, কাজ কাম করতে পারেন না। আজ ৫০ টাকার টমেটো কিনছি আর ২০ টাকার কলা কিনছি। মুনডা চাইলেও মাছ মাংস কিনতে পারি না। ট্যাকা কোনে পাব যে, মাছ মাংস কিনব। চালডাল আর তরিতরকারিই তো ঠিক মতো কিনতে পারিনে।’

বৃদ্ধা নুরজাহান বলেন, আমার স্বামী শাহজাহানের চায়ের দোকান আছে। আয় কম। চালের দাম বেশি। এজন্য খুব কষ্ট হয়। চালের দাম কমানোর জন্য দাবি জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিকদের কেন্দ্রীয় সংগঠনের সভাপতি আব্দুর রশিদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক সুচন্দন মণ্ডল বলেন, চালের বাজার সরেজমিনে যাচাই করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বেশি দামে চাল বিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বেশি দামে চাল বিক্রি করায় আজকে এক ব্যবসায়ীকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top