বুধবার, ১৮ই জুন ২০২৫, ৩রা আষাঢ় ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


কাপ্তাই হ্রদের পানির নিচে চাকমা রাজার রাজবাড়ী


প্রকাশিত:
১৭ জুন ২০২৫ ২০:০১

আপডেট:
১৮ জুন ২০২৫ ০০:৪২

ছবি সংগৃহীত

রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানির নিচে ডুবে আছে চাকমা রাজার সুরম্য রাজবাড়ী। শহরের চেঙ্গীমুখে জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে পূর্বপাশে ৬৫ বছর ধরে জলমগ্ন হয়ে আছে চাকমা রাজার ঐতিহ্যবাহী এ প্রাসাদ। এটিকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে দর্শনীয় স্থাপনা, যা ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসাবে সংরক্ষণ করা যেতে পারে বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

জানা গেছে, ১৯৬০ সালে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত হয় কাপ্তাই বাঁধ। এর ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলরাশি কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টি হলে এতে ডুবে যায় নিচু এলাকার অসংখ্য বাড়ি-ঘর। ডুবে যায় চাকমা রাজবাড়ীও।

সেই থেকে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে হ্রদের পানি কমে গেলে ভেসে ওঠে স্থাপনাটি। এর মধ্যে ১৯৮৬ ও ২০০৬ সালে কাপ্তাই হ্রদের পানি অতিরিক্ত হারে কমে যাওয়ায় পুরোপুরি ভেসে ওঠেছিল পুরোনো সেই চাকমা রাজবাড়ী। তখনও প্রায় অক্ষত ছিল সেই স্মৃতিচিহ্ন। কিন্তু তখন অনেকে প্রাসাদ থেকে ইট খুলে নিয়ে যান।

অনেক সময় শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের তীরে উঁকিঝুঁকি দিয়ে উৎসুক মানুষের জটলা দেখা যায়। তারা শহরের বাসিন্দা। দেখতে যান পানিতে ডুবে থাকা চাকমা রাজার সুরম্য প্রাসাদ। জেলা প্রশাসকের বাংলোর কাছাকাছি হ্রদের তীরে মানুষজন ভিড় জমান অতীত ইতিহাসের সাক্ষী হতে।

স্থানীয়রা জানান, রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে ডুবে থাকা চাকমা রাজবাড়ী এত বছরেও পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি। যা করুণ ইতিহাস নিয়ে জলের নিচে রয়ে গেছে আজও। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর দুঃখ-বেদনার প্রতীক কাপ্তাই হ্রদে জলমগ্ন এ চাকমা রাজবাড়ী। বিশাল জনপদ ডুবিয়ে সৃষ্ট কাপ্তাই হ্রদের ফলে উদ্বাস্তু হয়েছিলেন লক্ষাধিক মানুষ। ডুবে যায় ৫৪ হাজার একর চাষযোগ্য জমি। সেই ইতিহাসই যেন বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় এখানকার বাসিন্দাদের। সরকার ইচ্ছে করলে ঐতিহাসিক এ নিদর্শনটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে পারত। জেলা প্রশাসক বাংলোর নিকতবর্তী করা যেতে পারে দর্শনীয় স্থাপনা।

ইতিহাসিক সূত্রে জানা গেছে, চাকমা রাজাদের আদি রাজধানী ছিল চট্টগ্রামে। রাঙামাটিতে ডুবে যাওয়া বাড়িটি স্থাপনের আগে চাকমা রাজবাড়ী ছিল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়ায়। সেই প্রাসাদে বসে সর্বশেষ রাজত্ব করেছিলেন কিংবদন্তী মহিয়সী নারী চাকমা রাণী কালিন্দী রায়। তিনি ১৮৭৪ সালে মারা যান।

এরপর রাজা হন তার ছেলে হরিশ্চন্দ্র। তিনি রাজা হওয়ার তিন বছর পর চট্টগ্রামে রাঙ্গুনীয়া থেকে চলে যান রাঙামাটি। আর তখন তিনি নির্মাণ করেছিলেন কাপ্তাই হ্রদে ডুবে যাওয়া রাজপ্রাসাদটি। সেই প্রাসাদেই দীর্ঘ ৮৪ বছর রাজকার্য পরিচালনা করেছিলেন চাকমা রাজারা।

১৯৬০ সালে পাকিস্তান সরকার কর্ণফুলী নদীতে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করলে সুরম্য রাজবাড়ীটি ডুবে যায়। এরপর শহরের বর্তমান রাজবাড়ী এলাকায় নির্মিত হয়েছিল চাকমা রাজবাড়ী।

শিক্ষাবিদ ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান বলেন, ডুবে যাওয়া চাকমা রাজবাড়ির কথা আমার এখনো মনে আছে। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন রাজপুণ্যাহ দেখতে যেতাম সেখানে। অসাধারণ স্থাপত্যের সেই বাড়িটি পানির নিচে চলে যাবে, তখন তা ভাবাও যায়নি। আজকে সেই পুরনো চাকমা রাজবাড়ীটি ঐতিহ্যের পাশাপাশি কাপ্তাই হ্রদে অসংখ্য বাড়িঘর, জমিজমা ডুবে গিয়ে উদ্বাস্তু হওয়ার ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এটিকে ঘিরে ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসাবে এর সংরক্ষণসহ দর্শনীয় স্থাপনা করা যেতে পারে।

চাকমারাজ কার্যালয়ের কর্মকর্তা সুব্রত চাকমা বলেন, ১৯৬০ সালে নির্মিত কাপ্তাই বাঁধের ফলে চাকমা সার্কেলের ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ীটি পানির গভীরে তলিয়ে যায়। এরপর শহরে বর্তমান নতুন রাজবাড়ীটি নির্মাণ করা হয়েছিল। পুরোনো রাজবাড়ির পাশেই ছিল ঐতিহ্যবাহী একটি বৌদ্ধবিহার। কিন্তু সেই বৌদ্ধ বিহারটিও ডুবে গেছে। সেই রাজ বিহারের বিশাল বুদ্ধমূর্তি এখনো রয়ে গেছে। এ ছাড়া পুরোনো রাজপ্রাসাদ থেকে একটি ঐতিহ্যবাহী কামান আনা হয়েছিল। সেটি বর্তমান রাজ কার্যালয়ের পাশে রাখা আছে।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top