সোমবার, ২৩শে জুন ২০২৫, ৯ই আষাঢ় ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


বৃষ্টি হলেই কাঁপে শিক্ষার্থীদের বুক, টিনশেড ঘরে পর্দা টানিয়ে চলে পাঠদান


প্রকাশিত:
২৩ জুন ২০২৫ ১২:০৩

আপডেট:
২৩ জুন ২০২৫ ১৫:২৪

ছবি সংগৃহীত

আধা পাকা টিনশেড ঘর। নেই কোনো জালনা-দরজা। রোদ, বৃষ্টি ঠেকাতে টানানো হয়েছে পর্দা। এরই মধ্যে চলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কর্মসূচি। তবে বৃষ্টি নামলেই বন্ধ হয়ে যায় পাঠদান। কারণ বৃষ্টির পানিতে ভিজে যায় বই, খাতাসহ তারা নিজেরাও।

এমন চিত্র দেখা গেছে, নড়াইল কালিয়া উপজেলার মাউলি পঞ্চপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়টিতে রয়েছে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী। তারা প্রতিদিনই এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে ক্লাস করে চলেছে।

শুধু পঞ্চপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয় নয়। রোববার (২২ জুন) সদর উপজেলার বিছালী ইউনিয়নের সি আর এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়েও একই চিত্রের দেখা মেলে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় নির্মিত টিনশেড ঘরে চলছে পাঠদান। শ্রেণিকক্ষের টিনের চালে ফুটো, ভাঙা টিনের বেড়া। বৃষ্টি নামলেই শ্রেনিকক্ষে ঢুকে যায় পানি। কখনও পার্শ্ববর্তী হাজরা তলা মন্দিরের বারান্দায় করানো হয় পাঠদান।

মাউলি পঞ্চপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র দীপ বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয় ভবনে জানালা-দরজা নেই। বৃষ্টি নামলে বই খাতা ভিজে যায়। ঝড় বাতাস উঠলে আমরা আতঙ্কে থাকি। আমরা ক্লাসে ভালোভাবে মনোযোগ দিতে পারি না।

টিনের ছাউনিযুক্ত আধা পাকা ভবনে চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান। টিনের ছাউনির অনেক স্থানে ফুটো হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি এলে পানি চুঁইয়ে পড়ে বলে জানায় শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া গরমে রোদ বৃষ্টি শীতকালে ঠান্ডা বাতাসে চলে তাদের পাঠদান। তবু শ্রেণিকক্ষে জানালা দরজা না থাকায় বাধ্য হয়ে ওই ভবনে চলে শ্রেণি কার্যক্রম ।

আরেক শিক্ষার্থী বলে, কাপড়ের পর্দা দিয়ে আমাদের রোদ বৃষ্টি থেকে রক্ষা করা যায় না। কাপড় ভিজে পানি ঘরে চলে আসে। যখন মেঘ ঢাকে বা বিদুৎ চমকায় তখন ভয়ে আমাদের বুক কেঁপে উঠে। আমাদের বন্ধুরা ভাল জায়গায় পড়ে তাদের বিদ্যালয়ে চার তলা ভবন রয়েছে। কিন্তু আমাদের নাই, এতে আমাদের মন খারাপ হয়। সরকারের কাছে আমাদের একটা নতুন ভবন দাবি করি।

বিদ্যালয় এমন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সন্তানকে পড়তে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকেরা। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও বিদ্যালয়ের ভবনগুলো সংস্কার করা হচ্ছে না।

সবুজ দাস নামে এক অভিভাবক বলেন, বর্ষাকালে ঝড়, বৃষ্টি,মেঘের ডাকের আতঙ্ক থাকি। দীর্ঘ দিন পেরিয়ে গেলে নতুন ভবন নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের।

মাউলি পঞ্চপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের অদম্য ইচ্ছা শক্তি থাকা সত্ত্বেও শ্রেণি কার্যক্রম সঠিকভাবে করতে পারছি না। কারণ আমাদের ভবনগুলো জরাজীর্ণ। এখানে পরিপূর্ণভাবে ক্লাস করার পরিবেশ বিদ্যমান নেই। যদি ভবনগুলো সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারি তাহলে সুষ্ঠু পরিবেশে আমরা শিক্ষাদান করতে পারব। ভবন না থাকার কারণে আধুনিক যুগে ডিজিটাল ক্লাস নিতে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি উপজেলার যে চারতলা ভবনগুলো হচ্ছে, আমাদের বিদ্যালয়ের জন্য একটি ভবন দেওয়ার সুব্যবস্থা করবেন।

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে ,জেলায় ১৩১টি মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তার ভেতর সদর উপজেলায় ৬৪টি, লোহাগড়ায় ৩৬টি এবং কালিয়া উপজেলায় ৩১টি বিদ্যালয়। এগুলোর মধ্যে ১২টি মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাঠদান করানো হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে, সদর উপজেলা সি আর এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মূলদাইড় তালতলা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, বালিয়াডাঙ্গা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বি আর ডি আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দেবিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শেখহাটি নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, কালিয়া উপজেলার মাউলি পঞ্চপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নোয়াগ্রাম নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মধুমতি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জয়নুল আবেদন নুরুন্নাহার নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

জেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নড়াইল জেলায় বেশ কয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জরাজীর্ণ হয়ে আছে। বিশেষ করে মাউলি পঞ্চপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা খুবই খারাপ। বিদ্যালয়টিতে পর্দা দিয়ে ক্লাস করানো হয়। শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরে এগুলোর নাম দিয়েছি। শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এসব বিদ্যালয়ে বরাদ্দের কোনো খবর এখনও পাইনি। বিদ্যালয়গুলো সংস্কারের জন্য স্থানীয় বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top