তিস্তার পানি বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপরে, পানিবন্দি ১৫ হাজার পরিবার
প্রকাশিত:
১৪ আগস্ট ২০২৫ ১৫:২৯
আপডেট:
১৪ আগস্ট ২০২৫ ১৮:৩০

উজানের ঢল ও অব্যাহত ভারী বর্ষণের ফলে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে লালমনিরহাট জেলার তিস্তা তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা ৫২.২৬ মিটার রেকর্ড করা হয়, যা বিপৎসীমা (৫২.১৫ মিটার) এর চেয়ে ১১ সেন্টিমিটার বেশি।
এরপর সকাল ৯টার দিকে পানি আরও বেড়ে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে।
তিনি আরও জানান, তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও এখনো স্বল্পমাত্রার বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তবে যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে।
তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার সদর, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে।
বিশেষভাবে হাতীবান্ধা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৮-১০টি চর এবং পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, আদিতমারীর চর গোবর্ধন ও মহিষখোঁচা,
সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি প্রায় ১৫ হাজার পরিবার গবাদি পশু ও শিশুদের নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ভোটমারীর ইস্ট্রাকো সোলার প্যানেল এলাকায় তীব্র ভাঙনের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, সোলার প্যানেল স্থাপনের কারণে তিস্তার স্রোতের দিক পরিবর্তন হয়ে লোকালয়ের রাস্তার ওপর চাপ পড়ছে। ভাঙন রোধ করা না গেলে কালীগঞ্জ শহরে পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিস্তা পাড়ের বাসিন্দা এনামুল কবির বলেন, সোলার প্যানেলের কারণে পানির চাপ বেড়েছে। বাঁধ ভেঙে গেলে হাজারো পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়বে।
মহিষখোঁচা ইউনিয়নের বাহাদুরপাড়া গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, এই মৌসুমেই আমরা তিন দফা বন্যার কবলে পড়েছি। গবাদিপশু ও শিশু নিয়ে খুবই বিপদে আছি।
হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নের ছয়টি ওয়ার্ডে পাঁচ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি। ঘরবাড়ি, ফসল, রাস্তাঘাট সব পানির নিচে। দ্রুত ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ হোছত জানিয়েছেন, সেখানে তিন হাজারের মতো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচএম রাকিব হায়দার জানান, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। দুর্গতদের সহায়তায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: