৬ কোটি টাকার সেতু পারাপারে সাঁকোই একমাত্র ভরসা
প্রকাশিত:
১৯ আগস্ট ২০২৫ ১১:৫৭
আপডেট:
১৯ আগস্ট ২০২৫ ১৪:৪৮

বরগুনার আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী নদীতে একটি সেতু নির্মাণ হলেও করা হয়নি সংযোগ সড়ক। ফলে ৬ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওই সেতুটি পারাপারে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে এলাকার অন্তত ৩০ হাজার বাসিন্দাদের। বাঁশ ও কাঠের তৈরি সাঁকো দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে সেতুতে উঠছেন তারা।
এ ছাড়াও সংযোগ সড়কের অভাবে সব ধরনের গাড়ি চলাচলও বন্ধ রয়েছে। তবে সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য দ্রুতই দরপত্র আহ্বান করা হবে বলে জানিয়েছেন বরগুনার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী, কুকুয়া ও চাওড়া এ তিনটি ইউনিয়নের সংযোগস্থল আমড়াগাছিয়া বাজার সংলগ্ন গুলিশাখালী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য ২০২৩ সালের ১৯ মে মেসার্স কহিনুর এন্টারপ্রাইজ এ্যান্ড ত্রিপুরা নামের একটি বরিশালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয় এলজিইডি। পরে ৬ কোটি ২২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্ধারিত সময়ের আগে ২০২৪ সালের জুন মাসেই সেতু নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে নির্মাণ কাজ শেষ হলে সেতুটির পশ্চিম পাশের উচ্চতার ৫ ফুটের মাথায় পূর্ব খেকুয়ানি এলাকার চলাচলের জন্য একটি সড়ক থাকায় আটকে যায় সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ। আর এ কারণেই দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সেতুটি পারাপারে বাঁশ ও কাঠের মাধ্যমে নির্মাণ করা সাঁকোই একমাত্র ভরসা স্থানীয় বাসিন্দাদের।
সরেজমিনে সেতুটি ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিন কয়েকটি ইউনিয়নের শিশু বৃদ্ধসহ অসংখ্য মানুষ এ সেতু পার হয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করেন। সেতুটির পূর্ব প্রান্তে বালু ভরাট করে সংযোগ সড়কের কিছুটা কাজ হলেও অপর প্রান্তে নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। এতে চলাচলের সুবিধায় স্থানীয়দের উদ্যোগে পশ্চিম প্রান্তে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। তবে ঝুঁকি নিয়ে মানুষ চলাচল করলেও বন্ধ রয়েছে সকল প্রকার গাড়ি চলাচল।
রাশেদুল হাসান নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সেতুটি সংযোগ সড়কে অভাবে মানুষের কোনো উপকারে আসছে না। আমাড়াগাছিয়া বাজারসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যাওয়া-আসা এবং চিকিৎসা সেবা নিতে দুইটি ইউনিয়নের মানুষ এ সেতুর মাধ্যমেই যাতায়াত করেন। সরকার কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করলেও তা কোনো এক অবহেলায় জনগণের কাজে আসছেনা। এলাকায় কেউ অসুস্থ হলে প্রায় দুই কিলোমিটার পথ ঘুরে দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় লাগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে। তবে সেতুটি চলাচলের উপযুক্ত থাকলে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিটেই যাওয়া সম্ভব হত। আমরা বারবার বিভিন্ন যায়গায় কথা বলেও এখন পর্যন্ত এ সেতুর সংযোগ সড়কের বিষয়ে কোনো সুরাহা পাইনি।
ইউসুফ নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, সেতু দিয়ে কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারে না। সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে সেতুর ওপর উঠতে হয়। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই সাঁকো দিয়ে চলাচল করছেন। যে কোনো সময় একটি দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, তখন তার দায়ভার কে নিবে। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই, যাতে অতি দ্রুত এ সেতুর সংযোগ সড়কের কাজ শেষ করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা অমৃত বলেন, সংযোগ সড়ক না থাকায় বিভিন্ন স্কুলের ছোট-ছোট শিশুদের চলাচলে অসুবিধা হয়। বিশেষ করে কোনো রোগী নিয়ে চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া সম্ভব হয়না। সেতুটি আমাদের জন্য এখন দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দাবি একটাই দ্রুত সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হোক।
এ অবস্থায় সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য দ্রুত দরপত্র আহ্বান করা হবে জানিয়ে বরগুনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান খান বলেন, বরগুনাতে কয়েকটি সেতু রয়েছে যেগুলোর সংযোগ সড়ক আমরা নির্মাণ করতে পারিনি। এর মধ্যে আমতলীতে একটি সেতুর মূল নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। তবে সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মাণে যে পরিকল্পনা ছিল সে অনুযায়ী এখন করা যাচ্ছে না। এ কারণেই ডিজাইন পরিবর্তন করে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে হবে এবং নতুন ডিজাইন অনুযায়ী সবকিছু প্রস্তুত করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই আমরা শুধু ওই সংযোগ সড়কের জন্যই আলাদা টেন্ডার আহ্বান করব। নতুন ঠিকাদার নিয়োগ হলে আশা করি খুব দ্রুতই সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা যাবে।
এসএন/রুপা
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: