সব হারিয়ে আশ্রয়হীন তোজাম্মেল হক, স্বপ্ন শুধু একটি দোকান
প্রকাশিত:
২৫ আগস্ট ২০২৫ ১০:৪৫
আপডেট:
২৫ আগস্ট ২০২৫ ১৯:৩৬

দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার আজিমাবাদ গ্রাম। এখানেই জন্ম তোজাম্মেল হকের, বয়স এখন ৬০। একসময় তিনি ছিলেন সবার কাছে ভদ্র, পরিশ্রমী ও সম্মানিত মানুষ। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে চাকরি করতেন। নিয়মিত আয়, সংসারে ছন্দ, দুই কন্যার বিয়ে—সবই ছিল গুছানো।
কিন্তু হঠাৎ করেই ভেঙে যায় তার সাজানো সংসার। দীর্ঘদিনের দাম্পত্য দ্বন্দ্ব একসময় আদালতের তালাকে গিয়ে ঠেকে। স্ত্রী সংসার ছেড়ে চলে যান। একে একে বিক্রি হয়ে যায় সহায়-সম্পত্তি। জায়গাজমি কিছুই আর অবশিষ্ট থাকেনি।
বর্তমানে সেতাবগঞ্জ অডিটোরিয়ামের এক কোণে পড়ে আছেন তিনি। রাত কাটে মাটিতে বিছানা পেতে, দিন কাটে খালি হাতে। ভাতের ব্যবস্থা হয় কখনো স্থানীয়দের সহানুভূতিতে, কখনো আবার না খেয়েই কেটে যায় সময়।
দুই দিন আগে হাসপাতালের সামনে একটি অটোরিকশা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন তোজাম্মেল হক। আশ্রয়হীন এই মানুষটির দেখাশোনার কেউ নেই। বর্তমানে তিনি বোচাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, মানবিক বিবেচনায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নেই।
তোজাম্মেল হক বলেন, আমি কারো কাছে হাত পাততে চাই না। বর্তমানে থাকারও তো জায়গা নাই আমার। যদি একটা ছোট দোকান পেতাম, তাহলে নিজেই কিছু করে খেতে পারতাম। আমি ভিক্ষুক নই—কাজ করে খেতে চাই।
তোজাম্মেল হকের স্বপ্ন খুব ছোট—একটি দোকান। কিন্তু সেই ছোট স্বপ্নই তার কাছে বড় আশার আলো। হয়তো সমাজের বিত্তবান, মানবিক মানুষ কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেওয়াই পারে তার ভাঙা জীবনকে নতুন করে গড়ে তুলতে।
এলাকাবাসী আজহারুল ইসলাম বলেন, তোজাম্মেল হক ভদ্র মানুষ। সংসারের ঝামেলায় সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব। আমরা খাওয়ার ব্যবস্থা করি, কিন্তু এটা তো স্থায়ী সমাধান না। প্রশাসন যদি সহযোগিতা করে, তাহলে তিনি আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মারুফ হাসান বলেন, তোজাম্মেল হকের বিষয়টি আজ জানতে পারলাম। এর আগে কেউ বলেনি। চেষ্টা করব, উপজেলা প্রশাসন থেকে যতটুকু করা যায়।
এসএন/রুপা
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: