শুক্রবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৫, ১২ই বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


আপানার বাসার কারো করোনা হলে কি করবেন?


প্রকাশিত:
২১ আগস্ট ২০২০ ১৪:৪১

আপডেট:
২১ আগস্ট ২০২০ ১৪:৪৪

ছবি: সংগৃহীত

প্রথম কাজ হলো করোনা রোগীকে এটাচড বাথ্রুম আছে এমন একটি রুমে আইসোলেশনে রাখা ও চিকিৎসা দেয়া। দ্বিতীয় কাজ হলো বাসার অন্যদের টেস্ট করা এবং সেই টেস্টের রেজাল্ট অনুসারে তাদের জন্য ব্যাবস্থা নেওয়া। এবং তৃতীয়ত করোনা রোগীকে যিনি সেবা যত্ন করবেন তার নিরাপত্তা বিধান।

করোনা রোগীর চিকিৎসা

করোনা রোগীকে এটাচড বাথ্রুম আছে এমন একটি রুমে আইসোলেশনে রাখতে হবে। অধিকাংশ করোনা রোগীদেরই বাসায় বসে চিকিৎসা দিয়ে ভালো করা সম্ভব। প্রায় ৮০ শতাংশেরও বেশি রোগীর সাধারণত মাইল্ড ডিজিজ হয়। এ ধরণের রোগীদের সাধারণ সর্দি কাশি গলা ব্যাথা জ্বর হয়। এদের হাসপাতালে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। বাসায় বসে সাধারণ কিছু ঔষধ দিয়েই এদেরকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব।

যেমন জ্বর, গলা ব্যাথা, শরীর ম্যাজ ম্যাজ ও শরীর ব্যাথার জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ নাপা রেনোভা, এইস খেলেই চলে। বেশি জ্বর উঠলে স্পঞ্জিং করতে পারেন। অর্থাৎ দেহের তাপমাত্রা খুব বেশি হলে ভিজা রুমাল দিয়ে শরীর মুছে দিবেন। গলা ব্যাথা থাকলে কুসুম গরম পানি দিয়ে দিনে ৩-৪ বার গড়গড়া করবেন। তবে গরম পানির সাথে নানা মশলা যেমন আদা, লবংগ, জিরা, দারুচিনি, এলাচি, লেবু মিশিয়ে খেলে বা ভাপ নিলে করোনা নির্মূল হয়- এরকম কোন কিছু এখনো গবেষণায় প্রমানিত হয় নি।

সর্দি কাশির জন্য এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ ওরাডিন, এলাট্রল, টোফেন, ফেক্সো ইত্যাদি খেতে পারেন। ডেক্সপটেন জাতীয় কাশির সিরাপও খেতে পারেন।

কারো কারো ঘ্রাণ শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য কোন নাকের ড্রপ বা ঔষধ খাওয়ার দরকার নাই। কিছু দিনের মধ্যে এমনিতেই এটা ঠিক হয়ে যায়। আর যাদের তিন সপ্তাহ পরও ঘ্রাণ ফিরে না আসে তাদের জন্য ঘ্রাণ প্রাকটিসের একটা উপায় অবলম্বন করতে হয়। সেটা হলো প্রতিদিন তিন বেলা ২০ সেকেন্ড করে লেবু, গোলাপ জল ও ইউক্যালিপটাস তেলের ঘ্রাণ নিতে পারেন।

অনেকে খুব বেশি দুর্বল হয়ে যান। এটা কোভিডের প্রভাবে হয়। তবে মাছ মাংস ডিম দুধ সবজি ফল- এগুলো বেশি বেশি খেতে পারলে ধীরে ধীরে এই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

অনেকের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। কিছুদিন পর এমনিতেই স্বাদ চলে আসে। কিন্তু এই সময় তারা একদম খেতে চান না। ডায়াবেটিস না থাকলে এ ধরনের রোগীরা তিন বেলা ২-৪ টি খেজুর খেতে পারেন। খেজুর থেকে বেশ এনার্জি পাওয়া যায়। করোনার সাথে ফাইট করার জন্য ভিটামিন-সি, জিংক, ভিটামিন-ডি দরকার। দুপর ও রাতের খাবারের সাথে এক টুকরা করে লেবু খেলেই ভিটামিন-সি পর্যাপ্ত পাওয়া যায়। এর জন্য প্রচুর পরিমানে টক ফল খেয়ে গ্যাস্ট্রিক বাড়িয়ে ফেলা কোন কাজের কাজ নয়। ডিম, কলা ও কাঠ বাদামে প্রচুর জিংক রয়েছে। এগুলো খেলে আর জিংক ট্যাবলেট খাওয়ারও প্রয়োজন নেই। ভিটামিন-ডি রোদ ছাড়া শরীরে তৈরী হয় না। করোনা রোগীকে যেহেতু রুমের মধ্যে আইসোলেশনে থাকতে হয়, রোদে যাওয়া সম্ভব হয় না তাই করোনা রোগীকে ভিটামিন-ডি ট্যাবলেট খেতে হবে। এগুলো করোনার চিকিৎসা নয়। তবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সারা দিনে ৩ লিটার পানি পান করুন। নরমাল স্যালাইনও খেতে পারেন।

ফাইভ টু টেন পার্সেন্ট কোভিড রোগীদের মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। যাদের বয়স ৫৫ এর বেশি, ডায়াবেটিস, প্রেসার, হার্টের সমস্যা, কিডনির সমস্যা আছে কিংবা ওজন বেশি তাদের ক্রিটিকাল ডিজিজ হওয়ার আশংকা থাকে। এধরনের রোগীদের বাসায় রাখলেও একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের ক্লোজ মনিটরিংয়ে থাকা উচিত, যাতে করে কোন জটিলতা শুরু হওয়া মাত্রই চিকিৎসা শুরু করা যায়। যেমন হাইপোক্সিয়া বা অক্সিজেন স্বল্পতা, পালমোনারি এম্বোলিজম, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলুর, স্ট্রোক ও কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ধরনের সমস্যা শুরুতেই নির্ণয় করে ফেলতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়েই চিকিৎসা শুরু করতে পারলে রোগীকে বড় বিপদ থেকে রক্ষা করা যাবে। তাই এসকল রোগের কোন আলামত পাওয়া গেলেই দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। তো কিভাবে বুঝবেন কোন রোগীকে কখন হাসপাতালে নিতে হবে? সে জন্য কয়েকটি জিনিস মনিটরিং করতে হবে। উপসর্গ ও লক্ষণ মনিটরিং, অক্সিজেন মনিটরিং, প্রেসার মনিটরিং, ডায়াবেটিস রোগীদের সুগার মনিটরিং এবং কিছু রক্ত পরীক্ষা ও বুকের এক্সরে করে শরীরের আভ্যন্তরীণ অবস্থা মনিটরিং। রক্তের রিপোর্ট অনুযায়ী কিছু চিকিৎসা বাসায় বসেই চালানো সম্ভব। এমনকি কোভিড রোগীদের রক্ত জমাট বাধা জাতীয় একটি গুরুতর জটিলতা প্রতিরোধের ইনজেকশনও বাসায় চালানো সম্ভব। তবে সেটা অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হতে হবে।

উপসর্গ ও লক্ষণের মধ্যে পাতলা পায়খানা, বমি, অনেকদিন ধরে জ্বর থাকা, শ্বাস কষ্ট, বুকে ব্যাথা, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও প্রেসার অনেক কমে যাওয়া খারাপ লক্ষণ। এগুলোর কোনটি দেখা দিলে সাথে সাথে আপনার ডাক্তারকে জানাবেন। ঐ মূহুর্তে ডাক্তার সাহেবই আপনাকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারবেন। কিছু ঔষধ দিয়ে রোগীকে বাসায়ই রাখবেন, নাকি হাসপাতালে পাঠাবেন।

কোভিড রোগীদের সবচেয়ে বড় যে জটিলতা দেখা দেয় তা হলো অক্সিজেন কমে যাওয়া। তাই বাসায় বসে অক্সিজেন মনিটরিং করতে হবে। পালস অক্সিমিটার দিয়ে অক্সিজেন মাপা যায়। শোয়া বসা অবস্থায় অক্সিজেন ৯৩ এর নিচে নেমে গেলে অক্সিজেন দিতে হবে। অক্সিজেন কমে যাচ্ছে কিনা সেটা আগাম বোঝার একটা উপায় আছে। রোগীকে ১০-১৫ মিনিট হাঁটতে বলবেন এবং ঐ হাঁটা অবস্থায় অক্সিজেন মনিটরিং করবেন। হাঁটা অবস্থায় অক্সিজেন ৮৮ পর্যন্ত নরমাল। হাঁটা অবস্থায় যদি অক্সিজেন ৮৮ এর নিচে নেমে যায় তাহলে অক্সিজেন দিতে হবে। যাদের পালস অক্সিমিটার মেশিন নাই তারা একটি বিশেষ উপায়ে অক্সিজেন মনিটরিং করতে পারেন। এক দুই তিন চার করে বিশ ত্রিশ পর্যন্ত যতো দূর পারেন এক শ্বাসে গুণতে থাকবেন। যদি এক শ্বাসে ৯ (নয়) এর বেশি গুণতে না পারেন তাহলে বুঝবেন আপনার অক্সিজেন স্বল্পতা রয়েছে। এই অক্সিজেন দেওয়ার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ভালো। বাসায় অক্সিজেন দেয়াটা নিরাপদ নয়। বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হতে পারে। তাছাড়া কার কখন কি মাত্রায় অক্সিজেন দিতে হবে সেটা অভিজ্ঞ ডাক্তার ছাড়া নির্ণয় করা সম্ভব নয়। অতিমাত্রায় অক্সিজেন দিলে ফুসফুসের ক্ষতিও হতে পারে। এ ধরনের রোগীরা হাসপাতালে সিট না পেয়ে বাসায় থাকলে সে ক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অধীনে টেলিফোনে বা ভিডিও কলে চিকিৎসাধীন থাকতে হবে।

বাসার অন্যদের ব্যাবস্থাপনা

বাসার অন্যদের যদি কারো পজেটিভ আসে তাকে করোনা রোগীর মতো একই রকম আইসোলেশনে রাখতে হবে। এবং সিম্পটমস অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। যাদের নেগাটিভ আসবে তাদেরকে হোম কয়ারাইনটাইনে থাকতে হবে। এ সময় সবাই বেশি বেশি আমিশ জাতীয় খাবার, ফল, সবজি, আদা, কালিজিরা, মধু খেতে পারেন। অন্যরা কি করোনা রোগীর সাথে একই রুমে থাকতে পারবেন? না। করোনা রোগীকে আলাদা রুমে থাকতে হবে। তবে যদি এক রুমেই থাকতে হয় তাহলে দুজনকেই সব সময় সার্জিক্যাল মাস্ক পরে থাকতে হবে। তিন ফুট দূরত্ব মেনটেইন করতে হবে। রুমের দরজা জানালা খুলে রেখে আলো বাতাস চলাচল অব্যাহত রাখতে হবে৷ আলাদা টয়লেট ব্যাবহার করতে পারলে খুব ভালো হয়।

বাসায় করোনা রোগীর সেবা শুশ্রূষা কারীর নিরাপত্তা

করোনাভাইরাস একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সংক্রমণকারী জীবাণু। এটি করোনা রোগীর কাছাকাছি আসা যেকোন মানুষকে খুব দ্রুত সংক্রমিত করতে পারে। তাই যারা বাসায় করোনা রোগীর সেবা শুশ্রুষা করছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) নিজেকে রক্ষার জন্য তাদেরকে পাঁচটি নিয়ম মেনে চলতে বলছেঃ

১. যখনই করোনা রোগীর রুমে যাবেন তখনই একটি মেডিকেল মাস্ক বা সার্জিক্যাল মাস্ক পরে যাবেন। এক্ষেত্রে কাপড়ের মাস্ক দিয়ে হবে না। এই মাস্কটি কখনোই টাচ করবেন না। রোগীর কাছ থেকে আসার পরে মাস্কটি সাবধানে খুলে বন্ধ ডাস্টবিনে ফেলে দিবেন। মাস্কটি খোলার আগে সাবান পানি দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুয়ে নিবেন। মাস্কটি ফেলে দেয়ার পর আবার সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলবেন। সাবান পানির পরিবর্তে হ্যান্ড সেনিটাইজার ব্যাবহার করতে পারেন। তবে সেটা এলকোহল বেইজড সেনিটাইজার হতে হবে। যেমন হতে পারে ৭০% আইসোপ্রোপাইল এলকোহল।

২. নিজেকে রক্ষা করার জন্য সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। করোনা রোগীর কোনো কিছু স্পর্শ করলেই তারপরে সাবান-পানি দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে ঘষে ঘষে ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। কোন খাবার রেডি করার আগেও সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। খাবার তৈরি করার পরেও সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। খাবার খাওয়ার পূর্বেও সাবান পানি দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুয়ে নিবেন।

৩. করোনা রোগীর ব্যবহারের জন্য কাপড় চোপড় বিছানার চাদর টাওয়েল থালা-বাসন মগ গ্লাস সবকিছু আলাদা করে রাখবেন এবং ব্যবহারের পর প্রতিদিন এগুলো সাবান পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে রাখবেন। কাপড় চোপড় ধোয়ার পর রোদে শুকিয়ে আয়রন করে দিবেন।

৪. করোনা রোগী যেসব জিনিস বারবার স্পর্শ করে যেমন দরজার হ্যান্ডেল অথবা বাথরুমের দরজার সিটকানি, ফ্যানের সুইচ, লাইটের সুইচ এগুলো প্রতিদিন সাবান পানি দিয়ে ভালো করে মুছে দিবেন। না হলে অন্যরাও আক্রান্ত হতে পারে।

৫. রোগীকে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে। দৈনিক ৩ লিটার পানি খেতে দিতে হবে। রোগীর স্বাস কষ্ট দেখা দিলে বা খারাপ হয়ে গেলে ডাক্তারকে জানাতে হবে বা দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।

ডা: গোলাম মোর্শেদ
Dr. Md. Golam Morshed
MBBS, FCPS, MRCP (UK), MACP (USA)
Medicine, Diabetes, Heart, Chest Pain Super-Specialist & Interventional Cardiologist
Asst Professor, National Institute of Cardiovascular Diseases (NICVD), Dhaka
RP (Lien) National Heart Center, Singapore.



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top