শুক্রবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৫, ১১ই বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


সকল অনিশ্চয়তা কাটিয়ে কাল ভোট পাকিস্তানে


প্রকাশিত:
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:০৭

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:২৯

পাকিস্তানের লাহোরে একটি সমাবেশে অংশ নিয়েছেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থকরা। ছবিটি ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল তোলা

নানা অনিশ্চয়তা কাটিয়ে জাতীয় নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে পাকিস্তান। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে আগামীকাল (৮ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে মঙ্গলবার মধ্যরাতে দেশটিতে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হয়েছে।

পাকিস্তানের কয়েকটি অঞ্চলে গত কয়েকদিনে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আশঙ্কার মধ্যেই এই নির্বাচন হতে চলেছে। বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) পৃথক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন, দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল এবং জিও নিউজ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবারের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে অপেক্ষাকৃত দুর্বল নির্বাচনী প্রচারণা মঙ্গলবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। ৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের জন্য সমস্ত রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীদের প্রচারণা থেকে বিরত থাকতেও নির্দেশনা জারি করেছে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন।

প্রচারাভিযানের শেষ দিন পিপিপি চেয়ারপারসন বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি লারকানায় গিয়েছিলেন। এটি পাকিস্তানের রাজনীতিতে ‘ভুট্টো রাজবংশের’ ঘাঁটি। আর পিএমএল-এনের শীর্ষ নেতা নওয়াজ শরিফ প্রচারাভিযানের শেষ দিনে কাসুরকে বেছে নিয়েছিলেন। এটি তার ছোট ভাই শেহবাজ শরিফের নির্বাচনী এলাকা। নওয়াজ শরিফের লাহোরে একটি সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পরে তা বাতিল করা হয়।

ইমরান খানের প্রতিষ্ঠিত দল পিটিআইয়ের ক্ষেত্রে অবশ্য পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। একদিকে দলটিকে তার আইকনিক নির্বাচনী প্রতীক ‘ব্যাট’ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, অন্যদিকে দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান অনেক অভিযোগের মুখোমুখি হয়ে কারাগারে আটক রয়েছেন।

এদিকে এক বিবৃতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী এবং তাদের দলগুলোকে নির্বাচন আইনের ১৮২ ধারা মেনে চলতে বলেছে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন। ১৮২ ধারায় বলা হয়েছে, মঙ্গলবার রাতের পর থেকে কোনও জনসভা, মিছিল, কর্নার মিটিং বা এ জাতীয় কোনও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কোনও ব্যক্তি অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

আইনের উল্লিখিত বিধান লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।

এদিকে ‘নিরাপত্তা’ ইস্যুতে নির্বাচনের দিন ইন্টারনেট বন্ধ রাখার ইঙ্গিত দিয়েছে পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তত্ত্বাবধায়ক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গোহর এজাজ মঙ্গলবার নির্বাচনের দিন (আগামীকাল) যেকোনও এলাকায় নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

তবে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া চলাকালীন সারা দেশে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, নিরাপত্তা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে কোনও জেলা বা প্রদেশ থেকে অনুরোধ পেলেই সরকার ৮ ফেব্রুয়ারি ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করার বিষয়টি বিবেচনা করবে। এজাজ দাবি করেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখনও পর্যন্ত ভোটের দিন ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করার কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি এবং এই জাতীয় যে কোনও পদক্ষেপ শুধুমাত্র একটি প্রদেশ বা সংশ্লিষ্ট জেলার অনুরোধে নেওয়া হবে।

এদিকে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট ব্যবহারের নিশ্চয়তা দিতে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এক খোলা চিঠিতে সংস্থাটি ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় পাকিস্তানজুড়ে প্রত্যেকের জন্য ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মে ‘নিরবচ্ছিন্ন অ্যাক্সেস’ নিশ্চিত করার জন্যও কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

অন্যদিকে মঙ্গলবার বেলুচিস্তানের মাকরান বিভাগ ও প্রাদেশিক রাজধানীতে প্রার্থীদের নির্বাচনী অফিস এবং ভোটকেন্দ্র লক্ষ্য করে অন্তত নয়টি গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে দ্য ডন।

পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী, মোটরসাইকেল আরোহী ব্যক্তিরা রাতে কোয়েটার উপকণ্ঠে অবস্থিত কিলি আহমেদজাইয়ের একটি সরকারি স্কুলে হাতবোমা নিক্ষেপ করে। গ্রেনেডটি স্কুলের আঙিনায় বিস্ফোরিত হয়। এতে ভোটকেন্দ্র হিসাবে মনোনীত এই স্থাপনার জানালার কাঁচ ভেঙে যায়।

এছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো পাসনির একটি সরকারি স্কুলে হামলার চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে। আর বাগ বাজার সরকারি স্কুলের কাছে একটি বিস্ফোরক ডিভাইস পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে ডন।

পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারুল হক কাকার মঙ্গলবার বলেছেন, অসংখ্য চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, সারাদেশে ভোটের দিন শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্নে নির্বাচন পরিচালনার জন্য সম্ভাব্য সর্বোত্তম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাষ্ট্রের দৈনন্দিন কার্যাবলী পরিচালনা এবং নির্বাচনের আগে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে তার দায়িত্ব পালন করেছে। এখন পাকিস্তানের জনগণের ভোটের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করার পালা।

এদিকে আরেক পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ জানিয়েছে, পাকিস্তানে ২০২৪ সালের এই নির্বাচন সব দিক থেকে অনেক বড় হতে চলেছে। গত নির্বাচনের তুলনায় এবারের বিশাল নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন রুপি বরাদ্দ করা হয়েছে।

এবারই পাকিস্তানে মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষ ভোটার হিসেবে তাদের অধিকার প্রয়োগ করবেন। এছাড়া এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সংখ্যাও নজিরবিহীন। এছাড়া ব্যালট পেপার ছাপাতে ২৬০ মিলিয়ন টন কাগজ ব্যবহৃত হয়েছে।

শুধু তাই নয়, ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হবে পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনের চেয়ে ২৬ গুণ বেশি ব্যয়বহুল। পূর্ববর্তী নির্বাচনে ১১ হাজার ৭০০ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছিলেন। আর এই নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। যা আগের নির্বাচনের তুলনায় ৫৩ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এবার অনেক বেশি সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন কারণ পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর আইকনিক ‘ব্যাট’ নির্বাচনী প্রতীক ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং দলটির মনোনীত প্রার্থীরা এবার স্বতন্ত্র হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধ্য হয়েছেন।

ফলস্বরূপ ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা ৬ হাজার ৩৭ জন থেকে ৯৫ শতাংশ বেড়ে ১১ হাজার ৭৮৫ জনে পৌঁছেছে।


সম্পর্কিত বিষয়:

পাকিস্তান এশিয়া ভোট

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top