ইউক্রেনের ভয়াবহ ড্রোন হামলায় মস্কোজুড়ে বিমানবন্দর বন্ধ
প্রকাশিত:
২০ জুলাই ২০২৫ ২২:০৯
আপডেট:
২১ জুলাই ২০২৫ ০২:৪০

ইউক্রেনের টানা ড্রোন হামলায় রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর প্রধান সব বিমানবন্দর সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। রোববারের এই হামলার ফলে মস্কো থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে উড্ডয়নের অপেক্ষায় থাকা অন্তত ১৪০টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। রুশ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৩০টিরও বেশি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করেছে দেশটির সামরিক বাহিনী। এর মধ্যে কেবল মস্কোর আকাশেই ধ্বংস করা হয়েছে ২৭টি ড্রোন।
দেশটির বেসামরিক বিমান পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলেছে, ইউক্রেনের হামলায় মস্কোর প্রধান সব বিমানবন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। হামলার কারণে সেখানকার ১৩০টিরও বেশি ফ্লাইটের গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে। পরবর্তীতে সব বিমানবন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম আবারও শুরু করা হয়েছে।
এদিকে, ইউক্রেনে রাশিয়ার রাতভর বিমান হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন বলে দেশটির আঞ্চলিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। রাশিয়ার ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন আটোর বলেছে, ইউক্রেনের ড্রোন হামলার কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় মস্কোর বিমানবন্দরগুলো কমপক্ষে ১০ বার বন্ধ রাখতে হয়েছে।
মস্কোর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কালুগা অঞ্চলেও ইউক্রেনের ড্রোন হামলার প্রভাব পড়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, শনিবার সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের ছোড়া অন্তত ৪৫টি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে। এর ফলে কালুগা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়।
দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেন সীমান্তবর্তী রোস্তভ ও ব্রিয়ানস্ক অঞ্চল এবং কৃষ্ণসাগরেও ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব হামলায় কোথাও কোনও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।
ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় রাশিয়ার আকাশপথে যাত্রী পরিবহনে ব্যাঘাতের ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। গত মে মাসে রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল লক্ষ্য করে একদিনে ৫০০টির বেশি ড্রোন হামলা চালিয়েছিল কিয়েভ। সেই সময় রাশিয়াজুড়ে প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী বিমানবন্দরে আটকা পড়েন বলে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল।
ইউক্রেনের আঞ্চলিক কর্মকর্তারা বলেছেন, দোনেৎস্কের বিভিন্ন স্থানে রাশিয়ার বিমান হামলায় দুজন নিহত হয়েছেন। সুমি অঞ্চলে আবাসিক ভবনে রুশ হামলায় আগুন ধরে যাওয়ায় ৭৮ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ নারী মারা গেছেন।
দেশটির বিমান বাহিনী বলেছে, শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত রাশিয়া অন্তত ৫৭টি ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। এর মধ্যে ১৮টি ড্রোনে গুলি চালিয়ে ভূপাতিত করা হয়েছে। এছাড়া রাডার জ্যাম হওয়ার কারণে আরও সাতটি ড্রোন লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। সুমি ও দোনেৎস্ক ছাড়াও খারকিভ, দিনিপ্রোপেত্রোভস্ক এবং জাপোরিঝিয়াতেও হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
হামলা-পাল্টা হামলার মাঝেই ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে শান্তিচুক্তির বিষয়ে আগ্রহী। তবে মস্কোর মূল লক্ষ্য নিজেদের উদ্দেশ্য অর্জন করা।
পেসকভ বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট পুতিন বারবার বলেছেন, ইউক্রেন পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান যত দ্রুত সম্ভব চাই। এটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, যার জন্য প্রচেষ্টা ও ধৈর্য্য দরকার।’’
এদিকে, শনিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মস্কোর সঙ্গে আলোচনার নতুন এক প্রস্তাব দিয়েছেন। গত জুনে থেমে যাওয়া আলোচনা আবারও শুরু করাই তার এই প্রস্তাবের লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন। অতীতের আলোচনায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির দেখা না মিললেও কয়েকবার বন্দি বিনিময় হয়েছে। জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, শান্তি নিশ্চিত করতে শীর্ষ পর্যায়ে সাক্ষাৎ অপরিহার্য।
সূত্র: বিবিসি।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: