গাজায় দিনে ২৮ শিশুর প্রাণ কাড়ছে ইসরায়েল
প্রকাশিত:
৫ আগস্ট ২০২৫ ২১:৩৫
আপডেট:
৫ আগস্ট ২০২৫ ২৩:৫২

ইসরায়েলি নির্বিচার বোমা হামলা ও মানবিক সহায়তা প্রবেশে কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে গাজায় প্রতিদিন গড়ে অন্তত ২৮ শিশুর প্রাণহানি ঘটছে। এছাড়া ইসরায়েলের হামলায় গাজায় আরও হাজার হাজার শিশু অপুষ্টির শিকার হয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছে। মঙ্গলবার জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
গাজায় শিশুদের প্রাণহানির বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইউনিসেফ বলেছে, ‘‘বোমায় মৃত্যু। অপুষ্টি ও অনাহারে মৃত্যু। সহায়তা ও জরুরি সেবার অভাবে মৃত্যু।’’
সংস্থাটি বলেছে, গাজায় প্রতিদিন গড়ে একটি শ্রেণিকক্ষে বসার সমপরিমাণ অর্থাৎ ২৮ শিশু মারা যাচ্ছে। বর্তমানে এই উপত্যকার শিশুদের জন্য জরুরি-ভিত্তিতে খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ এবং সুরক্ষা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তবে এর চেয়েও বেশি দরকার এখনই যুদ্ধবিরতি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর গাজায় শুরু করা ইসরায়েলি যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৬০ হাজার ৯৩৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ১ লাখ ৫০ হাজার ২৭ জন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের গণবিধ্বংসী আগ্রাসনে নিহতদের মধ্যে ১৮ হাজারের বেশি শিশু রয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় গড়ে প্রতি ঘণ্টায় একজন শিশু নিহত হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় আরও অন্তত আটজন ফিলিস্তিনি অনাহারে মারা গেছেন। তাদের মধ্যে একজন শিশু রয়েছে। এছাড়া গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দেওয়ার পর থেকে অনাহারে ৯৪ শিশুসহ ১৮৮ জন নিহত হয়েছেন।
কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সাংবাদিক আকসেল জায়মোভিচ বলেছেন, ‘‘যারা বেঁচে আছে তাদের শৈশব এখন শুধু টিকে থাকার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। গাজার বাস্তুচ্যুত শিশু কাদিম খুফু বাসিম বলেছে, তার বাবা চিকিৎসার জন্য মিসরে গেছেন। যে কারণে তাদের ছয় সদস্যের পরিবারের ভার এখন তার ওপর।
‘‘আমি ফুটবল খেলতে ভালোবাসি। কিন্তু এখন বিস্কুট বিক্রি করি। আমার শৈশব হারিয়ে গেছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আমাদের আর কোনও শৈশব নেই।’’
আন্তর্জাতিক আইনে বাসিমের মতো শিশুদের যুদ্ধের প্রভাব থেকে রক্ষা করার কথা থাকলেও গাজায় পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টো।
• গাজা এখন শিশুদের কবরস্থান
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শুধু প্রাণই কাড়ছে না, বরং শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও গভীর প্রভাব ফেলছে। ১০ বছরের বাস্তুচ্যুত শিশু লানার গল্প তাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যুদ্ধের মানসিক ক্ষত। শিশুটির যে আশ্রয় শিবিরে ছিল, তার কাছে এক বোমা বিস্ফোরণের পর সে এতটাই মানসিক আঘাত পেয়েছে যে, তার চুল ও ত্বক সাদা হয়ে গেছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, ট্রমা-জনিত ডিপিগমেন্টেশনের কারণে শিশুটির শরীরে ওই পরিবর্তন এসেছে। এখন সে কথা বলে শুধু তার পুতুলের সঙ্গে। সে পুতুলকে জিজ্ঞেস করে, তুমি কি আমার সঙ্গে খেলবে, না অন্যদের মতো আমাকে নিয়ে হাসবে? তার মানসিক অবস্থা ভয়ানক, বলছেন তার মা মাই জালাল আল-শরিফ।
সেভ দ্য চিলড্রেনের আঞ্চলিক পরিচালক আহমাদ আলহানদাভি বলেন, ‘‘গাজা এখন শিশু ও তাদের স্বপ্নের জন্য কবরস্থানে পরিণত হয়েছে।’’
‘‘প্রতিটি শিশুর জন্য এটি এক দুঃস্বপ্ন—যেখান থেকে পালানোর পথ নেই। এই প্রজন্ম বড় হচ্ছে এই বিশ্বাস নিয়ে, বিশ্ব তাদের ত্যাগ করেছে। সবাই তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।’’
সূত্র: আল জাজিরা।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: