সোমবার, ২৫শে আগস্ট ২০২৫, ১০ই ভাদ্র ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


যুদ্ধ পরবর্তী ভারত-পাকিস্তানের বড় যোগাযোগ, বন্যার আশঙ্কায় সতর্কতা


প্রকাশিত:
২৫ আগস্ট ২০২৫ ১২:০৯

আপডেট:
২৫ আগস্ট ২০২৫ ২২:৩৫

ছবি ‍সংগৃহিত

সামরিক উত্তেজনার পর দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে ফের শুরু হয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ। সিন্ধু নদীর পানি বণ্টন নিয়ে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’ (IWT) অনুযায়ী, সম্ভাব্য ভয়াবহ বন্যার পূর্বাভাস দিয়ে ভারত পাকিস্তানকে সতর্ক করেছে।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, সোমবার ভোরে নয়াদিল্লি ইসলামাবাদকে জানায়, জম্মুর তাওই নদীতে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। ভারতের হাইকমিশন রোববার সকালে ইসলামাবাদে পাকিস্তান সরকারের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেয়। এতে বলা হয়, নদীর উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে তাওই নদীতে পানিপ্রবাহ বেড়েছে, যা পাকিস্তানের নিচু অঞ্চলগুলোয় প্লাবনের আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।

মে মাসে যুদ্ধবিরতির পর এটি ভারত-পাকিস্তান সরকারের মধ্যে প্রথম বড় ধরনের যোগাযোগ। যুদ্ধের কারণে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সিন্ধু পানি চুক্তির কার্যক্রম স্থগিত ছিল। ভারতের সতর্কবার্তার ভিত্তিতে পাকিস্তান সরকার জনসাধারণকে সতর্ক করেছে। নিচু এলাকা ও নদী-সংলগ্ন অঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কাশ্মীরের পেহেলগামে এক ভয়াবহ হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ভারত এ হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং পরে সিন্ধু পানি চুক্তির অধীনে চলমান কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। পাকিস্তান অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করে। পরবর্তী সময়ে, মে মাসে দুই দেশের মধ্যে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র সামরিক সংঘাত শুরু হয়, যা কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হয়। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, তবে যোগাযোগ ছিল পুরোপুরি বন্ধ।

এমন পরিস্থিতিতে ভারত থেকে বন্যা-সতর্কতা সংক্রান্ত তথ্য পাঠানোকে পাকিস্তান সরকার গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। ইসলামাবাদ বলছে, চুক্তির আওতায় পানি ও বন্যা সংক্রান্ত তথ্য ভাগাভাগি করা বাধ্যতামূলক। ভারত যে দীর্ঘ নীরবতার পর তা আবার শুরু করেছে, সেটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।

১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’। এই চুক্তি অনুযায়ী, ভারত সতলজ, বিয়াস ও রাভি নদীর ওপর পূর্ণ অধিকার পায়। অন্যদিকে পাকিস্তান পায় ইন্দুস, ঝিলম ও চেনাব নদীর পানি ব্যবহারের অধিকার। চুক্তি অনুযায়ী, কোনো পক্ষ একতরফাভাবে পানি সরবরাহ বন্ধ করতে পারে না। যদি কোনো বিরোধ সৃষ্টি হয়, তবে সেটি নিষ্পত্তির জন্য নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ, সালিশি আদালত কিংবা আদালতের মাধ্যমে সমাধান করতে হয়।

তবে বাস্তবে বিষয়টি এতটা সহজ নয়। পাকিস্তান বহু বছর ধরেই অভিযোগ করে আসছে যে, ভারত একতরফাভাবে নদীতে বাঁধ নির্মাণ ও ব্যারাজ তৈরি করে পানিপ্রবাহ আটকে রাখছে। এতে পাকিস্তানের কৃষিখাত ও বিদ্যুৎ উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাকিস্তানের কৃষি ব্যবস্থার প্রায় ৮০ শতাংশই ইন্দুস নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল। পাকিস্তানের অভিযোগ, ভারতের কিশনগঙ্গা ও রাতলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো চুক্তিভঙ্গের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে। যদিও ভারত এসব প্রকল্পকে চুক্তির আওতাভুক্ত বৈধ উদ্যোগ বলে দাবি করে আসছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত যদি আগাম সতর্কতা বা পানি ছাড়ার তথ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তাহলে পাকিস্তানে হঠাৎ বন্যার আশঙ্কা বাড়ে। একই সঙ্গে এর ফলে খাদ্য নিরাপত্তা, ফসল উৎপাদন, কৃষকের আয় ও জীবনযাত্রায় ভয়াবহ অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।

পাকিস্তানি কৃষি গবেষক ঘাশারিব শওকত মনে করেন, এ ধরনের সংকট পাকিস্তানের কৃষিকে চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়। তার মতে, এতে ফসলের উৎপাদন হ্রাস পাবে, দাম বেড়ে যাবে এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ক্ষুদ্র কৃষকরা। কৃষক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খালিদ হুসেইন বাথ একে 'যুদ্ধ ঘোষণার সমান' বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, পানি সরবরাহ বন্ধ করা বা চুক্তি উপেক্ষা করা শুধু রাজনৈতিক ইস্যু নয়, এটি মানবিক সংকট তৈরি করতে পারে।

২০২৫ সালের জুনে ‘স্থায়ী সালিশি আদালত’ (Permanent Court of Arbitration) পাকিস্তানের পক্ষেই রায় দেয়। আদালতের মতে, ভারতের একতরফা পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক চুক্তির পরিপন্থী এবং তা আদালত বা নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞের এখতিয়ার লঙ্ঘন করে। আদালত বলেছে, ভারত এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে চুক্তির স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করতে পারে না।

রায়ের পর পাকিস্তান ভারতকে আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন অবিলম্বে চুক্তির নিয়মিত কার্যক্রমে ফিরে আসে এবং আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রতি পূর্ণ আনুগত্য বজায় রাখে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা এই বিষয়ে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাকেও অবহিত করেছে। সূত্র: জিও নিউজ অনলাইন

এসএন/রুপা


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top