শুক্রবার, ১২ই সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮শে ভাদ্র ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


বেপরোয়া ইসরায়েল: ৭২ ঘণ্টায় ছয় দেশে হামলা


প্রকাশিত:
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:৪৮

আপডেট:
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৩:৩৯

ছবি সংগৃহীত

ইসরায়েল ক্রমেই আরও যুদ্ধংদেহী হয়ে উঠছে। তারা যেখানে মন চায় সেখানেই হামলা চালাতে পারছে। তাদের বিরোধিতা করছে না যুক্তরাষ্ট্র; পক্ষান্তরে জাতিসংঘও অপারগ। ফলে গাজায় প্রকাশ্যে গণহত্যা চালানো ইসরায়েল ক্রমেই হয়ে উঠছে আরও বেপরোয়া। কূটনীতি নয়, হামলা ও হত্যাকাণ্ডকে তারা সমাধান হিসেবে দেখছে। ৭২ ঘণ্টায় তারা মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার মোট ছয়টি দেশে হামলা চালিয়েছে।

ইসরায়েল ফিলিস্তিনের গাজায় অব্যাহতভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি তারা নতুন করে কাতারে হামলা চালিয়েছে। ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী গোষ্ঠী হামাস নেতাদের এক বৈঠককে নিশানা করে এই হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত ছয়জন নিহত হয়।

তাদের মধ্যে হামাস নেতা খলিল আল–হায়ার ছেলেসহ তার কার্যালয়ের পরিচালক, তিন দেহরক্ষী ও কাতারের এক নিরাপত্তাকর্মী রয়েছেন। তবে হামাসের শীর্ষ নেতারা হামলা থেকে বেঁচে গেছেন। হামলা হয়েছে তিউনিসিয়ায়ও। এ ছাড়া লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেনে হামলা হয়েছে। এর মধ্যে কাতারে হামলা পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্নে তুলেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কাতার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিলাসী উড়োজাহাজ উপহার দিয়েছিল। কাতারে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি। কিন্তু এগুলো ইসরায়েলের হামলা ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের আরব মিত্ররা এটা থেকে বার্তা নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলেই সামরিক ঘাঁটি করে। কার্যত এই হামলা পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপরই চালানো হয়েছে।

কাতারে হামলা

গত মঙ্গলবার কাতারের রাজধানী দোহায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। সেখানে হামাস নেতাদের লক্ষ্যে পরিণত করা হয়। সেসময় নেতারা যুদ্ধবিরতি আলোচনায় হামাসের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। ওই হামলায় ছয়জন নিহত হন। তাদের মধ্যে হামাস নেতা খলিল আল-হায়ার ছেলে রয়েছেন। সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা বেঁচে যান। কাতারে এটা ইসরায়েলের প্রথম হামলা। যে এলাকায় হামলা হয়েছে, সেটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি থেকে ৩৫ কিলোমিটারের মধ্যে। সেখানে বিদেশি দূতাবাস, স্কুল, সুপারমার্কেট ও আবাসিক ভবন রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধেই হামাস নেতারা কাতারে অবস্থান করছেন।

কাতারে হামলা নিয়ে বিরল প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ভারত সরকার। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এটাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলে বর্ণনা করেছেন। এর আগে ইসরায়েল বিভিন্ন দেশে হামলা চালালেও মোদি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। এমনকি গাজা গণহত্যা নিয়েও তিনি চুপ। সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী নিষেধাজ্ঞার মধ্যে নেতানিয়াহু সরকারের একজন কট্টরপন্থি মন্ত্রী ভারত সফর করেন।

যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও লেবাননে হামলা

গত সোমবার ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান লেবাননের পূর্বাঞ্চলীয় বেকা ও হারমেল এলাকায় হামলা চালায়। এতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের দাবি, তারা হিজবুল্লাহর অস্ত্রভান্ডার ও সামরিক স্থাপনায় আঘাত করেছে। গত নভেম্বরে ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। ওই চুক্তি লঙ্ঘন করে ইসরায়েল প্রায়ই লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালায়। তারা সীমান্তের পাঁচটি পোস্ট দখল করে রেখেছে। গত মঙ্গলবার আবার বৈরুতের দক্ষিণে বারজা গ্রামের প্রবেশমুখে ইসরায়েল ড্রোন হামলা চালায়।

সিরিয়ায় হামলা

গত সোমবার রাতে ইসরায়েল যুদ্ধবিমান দিয়ে সিরিয়ার হোমসের বিমানঘাঁটি ও লাতাকিয়ার কাছে একটি সেনাক্যাম্পে হামলা চালায়। এতে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলাকে সার্বভৌমত্বের ‘সরাসরি লঙ্ঘন’ ও ‘নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ বলে নিন্দা জানিয়েছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর থেকে ইসরায়েল সিরিয়ায় শতাধিক হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস। তারা গোলান মালভূমিতে সিরিয়ার অনেক এলাকা দখলে নিচ্ছে।

তিউনিসিয়ার উপকূলে গাজা ত্রাণবহরে হামলা

গত সোমবার রাতে তিউনিসিয়ার সিদি বউ সাইদ বন্দরে দাঁড়ানো অবস্থায় ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র প্রধান জাহাজ ফ্যামিলি বোটে ড্রোন হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে জাহাজে আগুন ধরে যায়। এটি ৫০টির বেশি জাহাজের একটি বহরের অংশ, যাদের লক্ষ্য ইসরায়েলের গাজায় অবরোধ ভাঙা। এতে ৪৪টির বেশি দেশের প্রতিনিধিরা আছেন।

মঙ্গলবার রাতে একইভাবে তিউনিসিয়ার জলসীমায় যুক্তরাজ্যের পতাকাবাহী আলমা নামের আরেকটি জাহাজে ড্রোন হামলা হয়। এতে জাহাজের ওপরের অংশে আগুন লেগে যায়।

ইয়েমেনের রাজধানী সানায় হামলা

গত বুধবার ইয়েমেনের রাজধানী সানায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। হুতি বিদ্রোহীদের অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। হামলায় সানা বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই বিমান হামলায় রাজধানী সানা এবং উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ আল জওফে অন্তত ৩৫ জন নিহত এবং ১৩১ জন আহত হয়েছেন।

এর আগে গত ৬ মে ইসরায়েল একই বিমানবন্দরে হামলা চালিয়েছিল। আর গত ২৮ অগাস্ট ইসরায়েলের হামলায় হুতি সরকারের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ আল-রাহাউইসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত হন।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top