জেল থেকে বেরিয়ে ১২ মোবাইল ছিনতাই, ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে খুন ফারুক
প্রকাশিত:
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৩:০০
আপডেট:
১৩ মে ২০২৫ ১১:১৪

তেজগাঁও থানাধীন পানি ভবন সংলগ্ন ফুটপাথে পূর্ব পরিচিত রনির সঙ্গে আড্ডায় মগ্ন ফারুক হোসেন (২৫)। হঠাৎ কয়েকজন যুবক অতর্কিতভাবে তার বাম উরুতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায়। আহত অবস্থায় ফুটপাথেই পড়ে থাকেন রক্তাক্ত ফারুক। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নেওয়া হলে রাত ২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।
ঘটনার পর পুলিশ জানিয়েছিল, নিহত ফারুক পেশায় দিনমজুর। তার বাড়ি জামালপুরে। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে তিনি বসবাস করতেন কারওয়ান বাজার বস্তিতে।
তবে এ ঘটনায় তেজগাঁও থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, ফারুক একজন পেশাদার ছিনতাইকারী এবং তার হত্যাকারীরাও ছিনতাইকারী। ছিনতাইকৃত মোবাইল ফোনের ভাগ-বাটোয়ারার দ্বন্দ্বের জেরেই এ খুনের ঘটনা ঘটে।
গ্রেপ্তাররা হলেন, সাদ্দাম হোসেন সাব্বির ওরফে সিটু সাব্বির ওরফে সাগর (২৩), মো. রনি (২৬) ও মো. বিজয় (৩৪)।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) তেজগাঁও থানা পুলিশের একটি দল রাজধানীর তেজগাঁও থানাধীন পশ্চিম রাজাবাজার ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন মোল্লাবাড়ি বস্তি এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো ছুরি ও ১০টি বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন।
রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. আজিমুল হক বলেন, শুক্রবার ২৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ১২টার কিছু সময় পর তেজগাঁও থানাধীন পানি ভবন সংলগ্ন ফুটপাতে গ্রেপ্তার রনির সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল ফারুক হোসেন। পরে সেখানে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় বিজয় এবং গ্রেপ্তার মূল অভিযুক্ত সাদ্দাম হোসেন সিটু সাব্বির।
আজিমুল হক বলেন, সিটু সাব্বির এক বছর কারাভোগের পর ঘটনার দুদিন আগে জামিনে বেড়িয়ে আসেন এবং দুদিনেই বিভিন্ন মডেলের ১২টি মোবাইল ফোন ছিনতাই করেন। এ ঘটনায় নিহত ফারুক ও গ্রেপ্তাররা ছিনতাইকৃত মোবাইল ফোন বিক্রির অঙ্কের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা ও উদযাপন করতে বারে মদ পান করতে চান। পরে মূল অভিযুক্ত সিটু সাব্বির মদ এনে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগির সময় ফারুক হোসেনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায়। এ ঘটনায় তাদের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে শুরু হয় গালমন্দ, তর্ক-বিতর্ক। এরমধ্যেই নিজের কাছে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে সিটু সাব্বির ফারুক হোসেনের বাম পায়ের উরুতে আঘাত করে পালিয়ে যান। ফলে অধিক রক্তক্ষরণের কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নেওয়া হলেও মারা যান ফারুক।
ডিসি আজিমুল হক বলেন, এ ঘটনায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাৎক্ষনিকভাবে তেজগাঁও থানার দুটি আভিযানিক টিম ঘটনাস্থল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যায়। সংবাদ পেয়ে নিহত ফারুক হোসেনের আত্মীয়-স্বজনরাও হাসপাতালে ছুটে আসেন। সুরতহাল ও পোস্টমর্টেম শেষে ভিকটিমের মরদেহ তার স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ভিকটিমের স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও হত্যাকাণ্ডে সম্ভাব্য জড়িতদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা পুলিশকে জানিয়েছেন, তাদের সঙ্গে নিহত ফারুকের পূর্ব শত্রুতা ছিল। ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন বিক্রির টাকার ভাগ চাওয়ায় হত্যাকাণ্ডটি ঘটায় সিটু সাব্বির।
গ্রেপ্তার সিটু সাব্বিররের বিরুদ্ধে ডিএমপির তেজগাঁও থানা ও হাতিরঝিল থানায় অস্ত্র, দস্যুতা ও মাদক সংক্রান্তে ৭টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার মো. রনির বিরুদ্ধে ডিএমপির তেজগাঁও থানা ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় অস্ত্র-মাদক, দস্যুতা ও ডাকাতি সংক্রান্তে ১৩টি মামলা রয়েছে এবং পাশাপাশি গ্রেপ্তার বিজয়ের বিরুদ্ধে ডিএমপির তেজগাঁও থানা ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় অস্ত্র-মাদক, দস্যুতা ও ডাকাতি সংক্রান্তে ১৭টি মামলা রয়েছে।
এ মামলায় আরও একজন অভিযুক্ত পলাতক রয়েছেন। নিহত ফারুক হোসেনের নামেও তেজগাঁও ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় ২টি মাদক মামলা রয়েছে।
তেজগাঁও বিভাগের তেজগাঁও জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. মাহমুদ খান জানান, পেশাদার অপরাধীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তেজগাঁও থানা পুলিশ দস্যুতা, দস্যুতার চেষ্টা ও ডাকাতির প্রস্তুতির মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ৪৩টি মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলায় ৭৩ জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: