২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নবজাতক সন্তানকে হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে গেছেন এক মা।
জন্মের পর থেকেই শিশুটিকে হাসপাতালের নবজাতকদের বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্রের (স্ক্যানু) ৫ নম্বর বেডে রাখা হয়েছে। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। তবে শিশুটি বর্তমানে অনেকটা সুস্থ রয়েছে বলে জানা গেছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এম এ মোমেন জানান, বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) ভোরের দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন এক নারী। হাসপাতালের নিবন্ধন বইতে তিনি নিজের নাম রিমি (২৬), পিতা/স্বামীর নাম মোমিন, কবুরহাট, জগতি, কুষ্টিয়া বলে উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি তাকে (চিকিৎসক মোমেন) জানান, তার পেটে ব্যথা হচ্ছে।
চিকিৎসক ওই নারী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পেরে তাকে হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তির নির্দেশনা দেন। কিন্তু ওই নারী গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি হতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ফলে এক প্রকার বাধ্য হয়েই চিকিৎসক তাকে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তির নির্দেশনা দেন। পরে সকাল ৮টার দিকে তার তীব্র প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে গাইনি বিভাগের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে তিনি নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তানের জন্য দেন। কিছুক্ষণ পর তাকে ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। একপর্যায়ে সদ্য ভূমিষ্ট নবজাতক সন্তানকে ফেলে রেখে কৌশলে পালিয়ে যান ওই নারী।
সেই থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে শিশুটিকে নবজাতকদের বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি রাখা হয়েছে। গত দুদিন ধরে সেখানে তার চিকিৎসা চলছে।
হাসপাতালের পক্ষ থেকে শিশুটির নাম রাখা হয়েছে মোহাম্মদ আলী।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, নবজাতক শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি সান্নিধ্য ধুবই জরুরি। যে কারণে শিশুটির যাতে কোনো ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা না দেয় সেজন্য তাকে হাসপাতালের বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করে রাখা হয়েছে। ওই পরিচর্যা কেন্দ্রের যখন যে নার্স ডিউটিতে রয়েছেন তিনিই পরিচর্যাসহ দেখভাল করছেন। শিশুটির ওজন প্রায় তিন পাউন্ড। বর্তমানে সে অনেকটা সুস্থ রয়েছে।
কুষ্টিয়া সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ মুরাদ হোসেন জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুয়ায়ী শিশুটির ডায়াপার, ফিডার, গুঁড়া দুধ, টাওয়েল, জামা-কাপড় থেকে শুরু করে যখন যা প্রয়োজন হচ্ছে তারা তা সরবরাহ করছেন।
এদিকে শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম শিশুটির সার্বিক খোঁজখবর নিতে হাসপাতালে ছুটে যান। তিনি শিশুটির চিকিৎসার বিষয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় জেলা প্রশাসনের এনডিসি (নেজারত ডেপুটি কালেক্টর) শাহেদ আরমানসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এম এ মোমেন জানান, এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে নবজাতক ওই শিশুটির মাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবজাতক ওই শিশুটির মায়ের বাড়ি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বিত্তিপাড়া বাজার এলাকায়। তার স্বামীর বাড়িও একই উপজেলার কবুরহাট মিয়াপাড়া এলাকায়। তাদের দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তার স্বামী গত ২২ বছর ধরে সৌদিআরব প্রবাসী। কয়েক বছর পর পর ছুটিতে দেশে আসেন। সবশেষ দুই বছর আগে তিনি দেশে এসেছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই নারীর একজন স্বজন জানান, ওই নারী পরকীয়া সম্পর্কে লিপ্ত।
বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে তাদের বলে যে, তার পেটে ব্যথা করছে, গ্যাস হয়েছে। এরপর সে তার মাকে সঙ্গে নিয়ে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর তারা জানতে পারেন, তার পেটে বাচ্চা ছিল। সে একটি পুত্রসন্তান জন্ম দিয়েছে। বাচ্চা জন্ম দিয়েই সে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে এসেছে।’