11940

04/27/2025 শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির অনুসারীদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ায় পেটানো হলো শিক্ষার্থীকে

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির অনুসারীদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ায় পেটানো হলো শিক্ষার্থীকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

৬ নভেম্বর ২০২২ ০২:১২

রাজধানীর বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের পুরোনো হোস্টেলে এক ছাত্রীকে পেটানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ওই ছাত্রী বলেন, কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সেলিনা আক্তার ওরফে শেলীর কয়েকজন অনুসারীর সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার জেরে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবা আক্তার ওরফে সাইমুনের অনুসারীরা তাঁকে পিটিয়েছেন।

গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এরপর রাত একটার পর ক্যাম্পাসে সংঘর্ষে জড়ান কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা।

ওই ছাত্রীর নাম মাহমুদা আক্তার ওরফে কলি। তিনি সমাজকর্ম বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। তিনি বলেন, গতকাল রাতে কলেজের পুরোনো হোস্টেলের ৩০৭ নম্বর কক্ষে তাঁকে নির্যাতন করা হয়।

মাহমুদা বলেন, ‘সভাপতি পক্ষের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাঁদের কক্ষে গিয়ে আড্ডা দিয়ে কক্ষে ফেরার পরই খাদিজা ও তাঁর অনুসারী মহুয়া আক্তার কক্ষের আলো নিভিয়ে আমাকে মারধর করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি ও খাদিজা একই কক্ষে (৩০৭) থাকি৷ গতকাল রাতে আমি অন্য কক্ষে সিনিয়র আপুদের সঙ্গে আড্ডা দিই।

আড্ডা শেষে কক্ষে ফেরামাত্রই ছাত্রলীগ কর্মী মহুয়া আক্তার আমার মুঠোফোন কেড়ে নেন। এরপর কক্ষের আলো নিভিয়ে খাদিজা আমাকে মারধর করেন। তাঁর কিল-ঘুষি, চড়থাপ্পড় ও চুল টানায় আমি অচেতন হয়ে পড়ি। পরে অন্য সিনিয়র আপুরা আমাকে উদ্ধার করেন। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের সভাপতির অনুসারীদের সঙ্গে মেশা নিষেধ রয়েছে এবং সেই নিষেধাজ্ঞা না মেনে সভাপতির অনুসারীদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ায় তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে বলেও দাবি করেন মাহমুদা।

তবে খাদিজা ইসলাম বলেন, ‘যা বলা হচ্ছে, সেগুলো মিথ্যা ও নাটক।’
বদরুন্নেসা কলেজের পুরোনো হোস্টেলের কয়েকজন ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাতে ৩০৭ নম্বর কক্ষ থেকে চিৎকার ও কান্নার শব্দ শুনে অন্য কক্ষের ছাত্রীরা সেখানে যান। তখন মাহমুদা আক্তার জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পড়েছিলেন। তাঁরা মাহমুদাকে উদ্ধার করে প্রথমে অন্য কক্ষে নিয়ে যান। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

হলের শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ ঘটনার জেরে গতকাল রাত একটার দিকে বদরুন্নেসা কলেজ ক্যাম্পাসে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন সভাপতি সেলিনা ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবার অনুসারীরা। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে কলেজের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেয় চকবাজার থানা-পুলিশ। কিন্তু ভেতরে সংঘর্ষ চলতে থাকলে পুলিশের একটি দল ফটক দিয়ে ভেতরে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করে।

ঘটনার বিষয়ে কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সেলিনা আক্তার বলেন, ‘বদরুন্নেসা কলেজ ছাত্রলীগ সাংগঠনিকভাবে ঐক্যবদ্ধ। ব্যক্তিগতভাবে আমার দিক থেকে কারও প্রতি কোনো বিদ্বেষ নেই। আমার দিক থেকে গতকাল রাতের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে কোনো আপত্তি নেই।’

অন্যদিকে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবা আক্তার বলেন, ‘(গতকাল রাতে) কাউকে মারধর করা হয়নি বলে জানতে পেরেছি। ওই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। বদরুন্নেসা কলেজ ছাত্রলীগ ঐক্যবদ্ধ আছে।’ সভাপতির অনুসারীদের সঙ্গে নিজের অনুসারীদের মিশতে না দেওয়ার অভিযোগকে অপপ্রচার বলে আখ্যা দেন এই নেত্রী।

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাইয়ুম বলেন, ছাত্রীদের দুই পক্ষের মধ্যে সামান্য মনোমালিন্য হয়েছিল। পরে কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ দুই পক্ষের সঙ্গে বসে একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়ে ঘটনার সমাধান করেছেন। বদরুন্নেসা কলেজের কেউ পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি।

গতকালের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে জানান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সাবিকুন নাহার। তিনি বলেন, ‘গতকাল রাত থেকেই ঘটনার সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছিলাম। দুই পক্ষকে ডেকে কথা বলেছি এবং একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]