ক্যাম্পাসের জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ভারতের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। রোববার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিরোধ মেটাতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় না বসলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
অমর্ত্য সেনের বাসভবন ‘প্রতীচী’ বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাস এলাকায়। গত বেশ কয়েক মাস ধরে বিশ্বভারতীর কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করে আসছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অবৈধভাবে দখল করেছেন অর্থনীতি নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এই বাঙালি অধ্যাপক।
অমর্ত্য সেনের বাবা আশুতোষ সেন বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৪৩ সালে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এক একরের কিছু বেশি জমি ইজারা নিয়েছিলেন। পরে ওই জমিতে বাসভবন ‘প্রতীচী’ নির্মাণ করেন অমর্ত্য সেন।
বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের দাবি— আশুতোষ সেনকে তৎকালীন কর্তৃপক্ষ ১ দশমিক ২৫ একর জমি ইজারা দিয়েছিল; কিন্তু অমর্ত্য সেনের প্রতীচী ও তারা বাসভবনসংলগ্ন জমির পরিমাণ ১ দশমিক ৩৮ একর। অর্থাৎ কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, ইজারার জমির পাশপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দশমিক ১৩ একর জমি দখল করেছেন অধ্যাপক সেন।
কর্তৃপক্ষের রোববারের নোটিশে অনুসারে, ১৯৪৩ সালে বিশ্বভারতী ও আশুতোষ সেনের মধ্যে স্বাক্ষরিত ইজারার নিবন্ধিত দলিল ও ২০০৬ সালে কর্মসমিতির সিদ্ধান্ত থেকে স্পষ্ট—আশুতোষ সেন বা অমর্ত্য সেনকে ১ দশমিক ৩৮ একর জমি তো দূর, বিশ্বভারতীর কোনো জমিরই মালিকানা দেওয়া হয়নি।
পাশপাশি অধ্যাপক সেনকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে নোটিশে বলা হয়, ‘আলোচনায় না বসলে কর্তৃপক্ষের সামনে একমাত্র মামলার রাস্তা খোলা রয়েছে। তার (অমর্ত্য সেন) আত্মগরিমা ও বিশ্বভারতীর সুনাম রক্ষার জন্য যা করা দরকার, তা করতে অধ্যাপক সেনকে অনুরোধ করা হচ্ছে।’
এদিকে, বিশ্বভারতী ও অমর্ত্য সেনের মধ্যে চলমান এই বিবাদের মধ্যেই শনিবার একটি সরকারি নথি প্রকাশ্যে এসেছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, , শান্তিনিকেতনের ১.৩৮ একর জমি দীর্ঘমেয়াদি লিজ় দেওয়া হয়েছিল অমর্ত্যের বাবা প্রয়াত আশুতোষ সেনকে।’
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় যে জেলার অন্তর্গত, সেই বীরভূমের জেলা প্রশাসক বিধান রায়ও সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘প্রশাসনের কাছে যে নথি রয়েছে, সেই অনুযায়ী অমর্ত্যে সেনের পরিবারের নামে ১ একর ৩৮ শতক জমি দীর্ঘমেয়াদি লিজ়ে রয়েছে।’
জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক সূত্রেরও দাবি ছিল, সেন পরিবারকে যে ১.২৫ একর জমিই লিজ় দেওয়া হয়েছিল, তার সপক্ষে কোনও ‘রেকর্ড’ নেই।
ইতোমধ্যে প্রতীচীতে অমর্ত্য সেনের সঙ্গে দেখা করে তার পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।