প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়কে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। চলমান এই যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সিএনএন টিভিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। সাক্ষাত্কারের প্রথম অংশ মঙ্গলবার সকালে (২১ মার্চ) ইউএস-ভিত্তিক কেবল নিউজ নেটওয়ার্কে (সিএনএন) প্রচারিত হয়, দ্বিতীয় অংশটি সেই রাতেই প্রচারিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি মনে করি সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই যুদ্ধ বন্ধে বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে।
যুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে মন্তব্য করতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে কোনো সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাস করি। যে কোনো বিরোধ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। আমরা কখনই কোনো ধরনের আগ্রাসন বা কোনো সংঘর্ষকে সমর্থন করি না।' তিনি ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে প্রচেষ্টা চালানোর জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
বিখ্যাত সাংবাদিক রিচার্ড কোয়েস্টের দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা ইউক্রেনের যুদ্ধ, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং ঋণের মাধ্যমে চীনের তৈরি করা মৃত্যুফাঁদ এবং রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাস করি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি খুবই পরিষ্কার, 'সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়।'
"আমরা এটি অনুসরণ করছি, তাই যখন আমরা কোন মানবাধিকার লঙ্ঘন বা আক্রমণ দেখি, আমরা অবশ্যই এর বিরোধিতা করি," তিনি বলেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, যুদ্ধ এক পক্ষের দ্বারা চালানো যায় না, উভয় পক্ষের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি, প্রতিটি দেশের নিজস্ব ভূখণ্ডে (স্বাধীনভাবে) বসবাস করার এবং নিজস্ব ভূখণ্ড রক্ষা করার অধিকার রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে চীন বাংলাদেশের সাথে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তার দেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে সমর্থনকারী প্রতিটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বাড়ছে।
তিনি বলেন, 'আমরা চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ভারত সবার কাছাকাছি। যারা আমাদের উন্নয়নে সহযোগিতা করছেন আমরা তাদের পাশে আছি। চীন বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী। তারা বিনিয়োগ করছে এবং কিছু নির্মাণ করছে, "এটাই মূল লাইন," তিনি জোর দিয়ে বলেন, "আমরা কারো উপর নির্ভরশীল নই।"
চীন থেকে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা খুবই সতর্ক। আমরা বেশিরভাগই বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিই। চীন থেকে আমাদের ঋণ খুব কম। এটা এমন নয়। শ্রীলঙ্কা নাকি অন্য কেউ।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার বিনা কারণে কোনো ঋণ বা কোনো মেগা প্রকল্প নেয় না। কোনো মেগা প্রকল্প বা ঋণ নেওয়ার সময় আমরা বিবেচনা করি কোন প্রকল্প থেকে আমরা রিটার্ন পেতে পারি এবং আমরা সুবিধাভোগী হব।
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বাংলাদেশের কী প্রয়োজন জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে চাপ দিতে। শুধু তাই নয়, আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে সংলাপও শুরু করেছি। দুর্ভাগ্যবশত তারা সঠিকভাবে সাড়া দিচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার এরইমধ্যে চীন, আসিয়ান দেশ, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে কথা বলেছে এবং মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে দেশটির ওপর চাপ দেওয়ার জন্য তাদের অনুরোধ করেছে।
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যবশত মিয়ানমার সরকার কারো কথাই শুনছে না। এটাই সমস্যা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশিদের (এক কোটি) প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় দেওয়ার কথা বিবেচনা করে মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা (১২ লাখ) বাংলাদেশের জন্য একটি ‘বড় বোঝা’ হয়ে উঠছে। কারণ দেশটিতে অতিরিক্ত জনসংখ্যা থাকা সত্ত্বেও তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের (রোহিঙ্গাদের) খাওয়াতে হবে। আমাকে তাদের (রোহিঙ্গাদের) খাওয়াতে হবে। আমাকে তাদের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে।