1749

04/25/2025 ক্যাসিনোবাজরা প্রকাশ্যে, অভিযানেও ভাটা

ক্যাসিনোবাজরা প্রকাশ্যে, অভিযানেও ভাটা

বিশেষ সংবাদদাতা

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৮:৪৫

হঠাত্ করেই শুদ্ধি অভিযান, একে একে ধরা পড়ে ক্ষমতাসীন দলের অনেক বড় নেতা। ক্যাসিনোকাণ্ডে তোলপাড় শুরু হয় গোটা দেশে। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান অনেকে। ঠিক এক বছর আগে র্যাব-পুলিশের শুরু করা এই শুদ্ধি অভিযানেও এখন ভাটার টান। তেমন কোনো অভিযান দেখা যাচ্ছে না। বিদেশে পালিয়ে থাকা অনেক নেতাই দেশে এসে প্রকাশ্য রাজনীতিতেও সক্রিয়। অনেকেই পুরোনো টেন্ডার ব্যবসাও শুরু করেছেন। কেউ কেউ গ্রেফতারের পর জামিনে ছাড়াও পেয়েছেন।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ গতকাল  বলেন, ক্যাসিনো অভিযানের ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে ১৩টি মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। একটি মামলার তদন্ত চলছে। শিগিগর চার্জশিট দেওয়া হবে। মামলাগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমরা মামলাগুলো তদন্ত করে শিগিগর চার্জশিট দেব।’

২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর প্রথম দিনই ফকিরাপুলের ইয়াংমেনস ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। ঐদিন সন্ধ্যায় গুলশানের বাসা থেকে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ৬ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের সীমান্ত এলাকা থেকে র্যাব গ্রেপ্তার করে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে।

শুদ্ধি অভিযানের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসে গণপূর্তের ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমের টেন্ডার বাণিজ্য। জি কে শামীম ও খালেদ মাহমুদ গণপূর্তের ৩ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন গ্রুপের কাজের টেন্ডারবাজি নিয়ন্ত্রণ করে। গ্রেপ্তার হন মোহামেডান ক্লাবের পরিচালক মো. লোকমান হোসেন ভূইয়া, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনো পরিচালনাকারী এনামুল হক আরমান, কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ শফিফুল আলম ফিরোজ, অনলাইন ক্যাসিনোর প্রধান সমন্বয়কারী সেলিম প্রধান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান, মোহাম্মদপুরের ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা ময়নুল হক ওরফে মনজু। ক্যাসিনো অভিযান শুরুর পর অনেকেই গা ঢাকা দেন। কেউ কেউ থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতে আত্মগোপন করেন।

প্রায় তিন মাস ধরে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্লাব সিলগালা করে দেওয়া হয়। এসব ঘটনায় ‘জুয়া খেলার’ অপরাধে একটিও মামলা হয়নি। সব মামলা হয়েছে মাদক, মানি লন্ডারিং ও অস্ত্র আইনে। জুয়া খেলা বন্ধে প্রচলিত আইনটি ১৫০ বছরেরও অধিক পুরোনো। ঐ আইনে ‘ক্যাসিনো’ বলে কোনো শব্দই নেই। এ কারণে আইনটির কোনো কার্যকারিতাও নেই।

ক্যাসিনোবাজরা প্রকাশ্যে :

অভিযান শেষ হওয়ার পরে দেশে ফেরেন যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ, কেন্দ্রীয় সদস্য মিজানুর রহমান, ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি এস এম রবিউল ইসলাম সোহেল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রের ইজারাদার আলী আহমেদ ও গুলিস্তান এলাকার দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলুসহ অন্তত ৩০/৩৫ জন। অভিযানে গ্রেফতার হওয়া কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ ও মোহামেডান ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া জামিনে বেরিয়ে গেছেন। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, সাবেক দপ্তর সম্পাদক আনিসুর রহমান ও সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের ব্যাংক হিসাব তলব করে। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তিন সংসদ সদস্যসহ ২৩ জনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

ক্যাসিনো বন্ধে ৪৯ অভিযান

ক্যাসিনোবিরোধী মোট ৪৯টি অভিযান পরিচালিত হয়। এর মধ্যে ৩২টি র্যাব এবং ১৭টি অভিযান পুলিশ পরিচালনা করে। এসব অভিযানে ২৭৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে ঢাকায় ২২২ জন এবং ঢাকার বাইরে ৫৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এই সময়ের মধ্যে ১১টি ক্যাসিনো ও ক্লাবে অভিযান চালিয়েছে র্যাব।

রয়েছে টেন্ডারবাজির অভিযোগ

টেন্ডারবাজির অভিযোগে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ কয়েকটি পদে পরিবর্তন আনা হয়। এরপরও টেন্ডারবাজি থেমে নেই। সম্প্রতি গণপূর্তের অধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত্ প্রকল্পে রূপপুর গ্রিনসিটি রেসিডেন্সিয়াল কমপ্লেক্সের ১৬টি ভবনের আসবাবপত্র সরবরাহে ৫৫ কোটি ৯০ লাখ টাকার কাজ বড় দুইটি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যেই টেন্ডার দাখিল করে। এরপরও অধিক মূল্যে টেন্ডার দাখিল করা অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ঐ কাজ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে সরকারের প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। গণপূর্তের একজন শীর্ষ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে এই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা ওয়াসায় সম্প্রতি একজন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজির অভিযোগ ওঠে। ঐ প্রকৌশলী তার স্ত্রীর নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বানিয়ে ৪০ লাখ টাকার কাজ নিয়েছেন বলে অভিয়োগ উঠেছে।

২১ মামলায় চার্জশিট

ক্যাসিনো ও টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানের ঘটনায় দায়ের করা হয় ৫৪টি মামলা। এর মধ্যে ১৪টি মামলার তদন্ত করে র্যাব। ১৩টি মামলার চার্জশিট আদালতে প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া এখনো একটি মামলা তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে। বাকি ১৮টি মামলা তদন্ত করে পুলিশ। পুলিশের তদন্ত করার মামলাগুলোর মধ্যে আটটি মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে। এছাড়া ক্যাসিনো ও টেন্ডারবাজির অভিযোগে ২৭ জনের বিরুদ্ধে দুদক ২২টি মামলা দায়ের করেছে।

 

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]