জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরীর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করেছে সরকার। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরীর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবশিষ্ট মেয়াদ জনস্বার্থে বাতিল করা হয়েছে বলে বুধবার (১৮ অক্টোবর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী তিন বছরের জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান। সেই হিসাবে এই পদে তার ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিয়োগের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। এখন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করায় এক বছরের বেশি সময় আগেই তাকে এই পদ ছাড়তে হচ্ছে।
নদী রক্ষা কমিশন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর নানান পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনায় ছিলেন মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী।
পরিবেশবিদ ও গবেষকদের আপত্তির মুখে গত ২৫ সেপ্টেম্বর দেশে নদনদীর তালিকা প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। এই তালিকায় নদনদীর সংখ্যা এক হাজার ৮টি; দৈর্ঘ্য প্রায় ২২ হাজার কিলোমিটার। পরিবেশবিদদের অভিযোগ, নদনদীর যে খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে, সেটি ভুলে ভরা। অনেক নদীর ক্ষেত্রে উৎসমুখ, উৎপত্তিস্থল, গতিপথ, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতা উল্লেখ করা হয়নি। একই নদীর নাম এসেছে একাধিকবার। আবার কোথাও কোথাও এলাকার নামকে নদীর নাম বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র জলাশয়কেও নদী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্তত ৫৫টি নদীর ক্ষেত্রে উৎসমুখ ও দৈর্ঘ্য ভুল লেখা হয়েছে। আবার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে অসংখ্য নদী।
উল্লেখ্য, ‘মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলনকারী সিন্ডিকেটের পেছনে একজন নারী মন্ত্রীর হাত রয়েছে’ এমন বক্তব্য দেওয়ার ২৪ দিন পর তাকে পদ থেকে অপসারণ করা হলো।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, নদী দখলদারদের পেছনে রাজনৈতিক শক্তি আছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে যারা বালি উত্তোলন করছেন, তাদের সঙ্গে চাঁদপুরের একজন নারী মন্ত্রীর সম্পর্ক আছে।
জাতীয় নদী কমিশনের চেয়ারম্যান আরও বলেন, হায়েনারা দল বেঁধে মেঘনায় হামলে পড়েছে। মেঘনা থেকে আবার বালু তোলার চেষ্টা চলছে। এখানে শত শত ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হবে। এতে নদীর ক্ষতি হবে, মাছের ক্ষতি হবে, পরিবেশের ক্ষতি হবে। এদের থেকে নদীকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। কারও নাম উল্লেখ না করে মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, চাঁদপুরের এক নারী মন্ত্রীর সঙ্গে এদের সম্পর্ক আছে।
তিনি বলেন, ইজারা দেওয়ার নামে কর্ণফুলী নদী বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও জেলা পরিষদ জড়িত। সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। তিনি আরও বলেন, কর্ণফুলী নদী পরিবেশের দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নদী। একই সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নদী। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করে নদীর জমি খণ্ড খণ্ড করে মেরে ফেলা হচ্ছে।
মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী একজন কীটতত্ত্ববিদ। বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সাবেক সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছিলেন তিনি।