32964

04/26/2025 গণঅভ্যুত্থানে আহতদের অবস্থানে স্থবির মিরপুর সড়ক, দুর্ভোগ চরমে

গণঅভ্যুত্থানে আহতদের অবস্থানে স্থবির মিরপুর সড়ক, দুর্ভোগ চরমে

নিজস্ব প্রতিবেদক

২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:৫২

গণঅভ্যুত্থানে আহতরা অসুস্থ শরীর নিয়ে রাজধানীর শিশুমেলা সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। এতে মিরপুর, ধানমন্ডি, ফার্মগেট ও আগারগাঁও সড়কে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। দুই ঘণ্টা ধরে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে যানবাহন। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টা থেকে শিশুমেলার সামনে তিন রাস্তার মোড়ে আহতরা তাদের দাবি আদায়ে অবস্থান শুরু করে। এর আগে গতরাত থেকেই জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) সামনের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, অনেকের হাতে স্যালাইন, ভাঙা পায়ে ব্যান্ডেজ ও ক্রাচে ভর করে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। আন্দোলনকারীদের ‘দালালি না বিপ্লব, বিপ্লব বিপ্লব’, ‘আস্থা নাই রে আস্থা নাই, দালালিতে আস্থা নাই’ চিকিৎসা চাই হয় মৃত্যু না হয় মুক্তি বৈষম্যবিরোধী এমন নানা স্লোগানও দিতে শোনা যায়।

আহতদের দাবি, তাদের রক্তের বিনিময়ে দেশ থেকে স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে। তারা কেউ পুলিশের গুলি খেয়েছে, কেউ টিয়ারশেলে অন্ধ হয়েছেন। আবার কেউ পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। তাদের কারণে যেই স্বাধীনতা সরকার ভোগ করছে, সেই তাদেরই চিকিৎসা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিতে অবহেলা করা হচ্ছে।

নেসার উদ্দীন নামের আহত এক শিক্ষক বলেন, আমি বনশ্রীতে আন্দোলন করেছি। আমরাই হাসিনা সরকারকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছি। আমরা বেঁচে আছি ঠিকই কিন্তু মাঝে মধ্যে মনে হয়, আমরা মরে গেলেই ভালো হতো। আমরা আজ দাবি নিয়ে বসিনি, অধিকার নিয়ে বসেছি। তাদের মধ্যে কেউ রাজনৈতিক দল করছে। কেউ কেউ উপদেষ্টা হয়ে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অফিস করছে। কিন্তু আমাদের নিয়ে তাদের কথা বলার সুযোগ নেই। এটা খুবই দুঃখজনক।

তিনি আরও বলেন, নিজের ও আহত ভাইদের অধিকার পূরণ করতে হলে যদি রাজপথে জীবন দিতে হয়, তাও দেব। আমরা স্বাধীনতা রক্ষা করেছি। তাহলে আমরা কেন মানবেতর জীবনযাপন করবো। আপনারা আহতের ক্যাটাগরি করেছেন। আন্দোলনের সময় তো কোনো ক্যাটাগরি ছিল না।

মো. হাফেজ নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, আমার অবস্থা গুরুতর। আমাদের রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে হবে। এর আগে তারা অনেকবার এসেছে, আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে কিন্তু কথা অনুযায়ী কাজ হয়নি। আমাদের পুনর্বাসন করতে হবে। এছাড়া আমরা যারা আহত হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছি তাদের অতি দ্রুত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাতে হবে। আমাদের কথা শুনতে হবে। আমরা দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে আহত হয়েছি। এখন এই অবস্থায় রাষ্ট্র আমাদের দেখার কথা। কিন্তু রাষ্ট্র দেখছে না বলেই আমরা পথে নেমে এসেছি। তারা এখনও জুলাই ফাউন্ডেশনের টাকাই দেওয়া শেষ করতে পারেনি। এদিকে আমাদের পরিবার অচল হয়ে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য কিছুই করা হয়নি। তারা এগুলো কবে করবে। আমরা মরে যাওয়ার পরে করবে নাকি বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।

আগস্টের আহত যোদ্ধা মোহাম্মদ লিটন বলেন, প্রকৃত ট্রিটমেন্ট দিচ্ছে না। আমাদের স্বীকৃত দেয় না। আশ্বাস দেয় না। আমাদের আন্দোলনে মুলা ঝোলানোর মতো অবস্থা হচ্ছে।

আন্দোলনের ফলে শিশুমেলা থেকে আগারগাঁও লিংক রোডে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। একই সঙ্গে আশপাশের এলাকায়ও তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভের কারণে যান চলাচল বন্ধ। সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট।

এসি পেট্রোল মোহাম্মদপুর তারিকুল ইসলাম বলেন, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে আহতরা সুচিকিৎসার দাবিতে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। এর আগে নিটোরের সামনে অবস্থান নিলেও এখন তারা মিরপুর সড়কে অবস্থান নিয়েছে। এর ফলে শ্যামলি, কল্যাণপুর, আসাদ গেটসহ সংশ্লিষ্ট সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]