৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্বস্তিতে থাকার কথা থাকলেও এখনও কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ পড়ছে এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যকে হত্যার ঘটনা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি এই প্রশ্ন তুলেছেন। রিজভী বলেন, জাতীয় সঙ্গীতের পক্ষে কথা বলায় ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যকে হত্যা করা হয়েছে। এটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী ছাত্রদলের প্রকাশনা ও প্রচার সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্যকে হত্যার বিচারের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ৫ আগস্টের পর এক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা সবাই একটু স্বস্তিতে থাকতে চেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শিক্ষক-ছাত্ররা নির্বিঘ্নে ক্লাসে যাবে, ক্লাস থেকে বের হবে। এখন কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অরাজক পরিস্থিতি, তরুণ ছাত্রের লাশ ক্যাম্পাসের মধ্যে। এখন তো আর আওয়ামী দোসররা নেই। এখন যারা ক্ষমতায় আছেন; সকল দল যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, তারা সমর্থন করেছেন। তাহলে এখন কেন লাশ পড়বে? গত পরশুদিন রাত ১২টার সময় ছাত্রদল নেতা সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে। কি অন্যায় করেছিল সাম্য? আমার তো মনে হয় এখানে রাজনৈতিক কারণ আছে। তিনজন ভবঘুরে সাম্যকে কেন হত্যা করবে? কয়েকদিন আগে শাহবাগে জাতীয় সঙ্গীত বন্ধের জন্য একটা আন্দোলন চলছিল। সাম্য জাতীয় সঙ্গীতের পক্ষে একটা পোস্ট করেছে। এটাই কি সেই কারণ?
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আমরা দেখেছি ফ্যাসিবাদী আমলে পার্শ্ববর্তী দেশের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলায় আবরারকে হত্যা করা হয়। আজ জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকা, ৭১ এবং স্বাধীনতার পক্ষে কথা বললে তাদের জীবন চলে যায়। অর্থাৎ যারা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, দেশের স্বাধীনতার পক্ষে, যারা জাতীয় সঙ্গীতের পক্ষে তাদের জীবন চলে যায়। আমি এজন্যই বলেছি, নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক কারণ আছে।
পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, আপনারা ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখুন। ভবঘুরেদেরকে গ্রেফতার করেছেন, মানুষ এসব বিষয় সহজভাবে নেয় না। মানুষ সহজভাবে নিত যদি, সবসময় সত্য এবং ন্যায় অনুসন্ধান করে যথাযথ ব্যবস্থা নিত। কিন্তু সেটা তারা নেয়নি। যেমন আবরার হত্যাকাণ্ডে নেননি, তেমনি আরও অন্যান্য ঘটনায়ও নেননি। আজকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হাসিনা নেই, দোসররা নেই, রক্তপাত হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তারপরও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাকাণ্ড হচ্ছে। জানুয়ারি মাসে তোফাজ্জল নামে একজনকে হত্যা করা হয়েছে। ক্যাম্পাস হবে শান্তির জায়গা, এখানে থাকবে শান্তির পতাকা। সেখানে কেন রক্তপাত হবে। এটা তো হওয়ার কথা নয়।
রিজভী বলেন, গতকাল ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে গিয়েছে ছাত্রদলের নেতারা। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মারা গেছে। আপনি বিরক্ত হয়েছেন, ক্ষুব্ধ হয়েছেন, আপনি তুইতোকারি করেছেন ছাত্র নেতাদেরকে। আপনি শুনতে চান না। কারণ, সাম্য ছাত্রদল করে। আপনার রাজনৈতিক চিন্তা দর্শন কি সেটা আমরা ইতোমধ্যে জেনে ফেলেছি। যারা জাতীয়তাবাদের পক্ষে ওখানে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে ছাত্র সংগঠন করে সেটা আপনি পছন্দ করেন না। আপনার উচিত ছিল প্রথমে সেই লাশ দেখা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। ভাইস চ্যান্সেলররা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠা করার কাজে নেমে যান, তাহলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনোই শান্তি বয়ে আনবে না।
অন্তবর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা কাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন সেটা আমরা জানি না। আপনাদেরকে আমরা সমর্থন করেছি, এখনও করে যাচ্ছি। কিন্তু এনসিপি যখন যমুনার দিকে যায়, তখন তাদেরকে সাদরে বরণ করেন। আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা তাদের আবাসনের জন্য গেলো, তখন আপনারা তাদেরকে উপহার দিলেন লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ডগ্রেনেড। অন্তবর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বে আপনারা রয়েছেন। আপনারা তো সুশীল সমাজের লোক। কিন্তু আপনাদের আচরণের মধ্যে এই দ্বিচারিতা কেন? আপনাদের আচরণের মধ্যে এই বিভাজন কেন?
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব মোকছেদুল মোমিন মিমুন, সাবেক ছাত্রনেতা মেহবুব মাসুম শান্ত, ওমর ফারুক কাওসার, ছাত্রদল নেতা ডা. তৌহিদ আওয়ালসহ উত্তরবঙ্গ ছাত্র ফোরামের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।