37767

06/25/2025 স্ট্রোক করে বিছানায় বাবা, দুর্ঘটনায় অবশ ছেলের শরীর, বাঁচার লড়াইয়ে একা মা

স্ট্রোক করে বিছানায় বাবা, দুর্ঘটনায় অবশ ছেলের শরীর, বাঁচার লড়াইয়ে একা মা

জেলা সংবাদদাতা, সাতক্ষীরা

২৫ জুন ২০২৫ ১৩:৪৮

সাতক্ষীরা শহরের আলীয়া মাদরাসার পেছনের দাসপাড়া। সেখানে ঘরের কোণে চুপচাপ বসে কাঁদছে নয় বছরের শিশু মিহান। কোমর থেকে পা পর্যন্ত তার শরীর অবশ। পাশে শুয়ে থাকা বাবাও নড়াচড়া করতে পারেন না। স্ট্রোকে দুইবার আক্রান্ত হয়ে তিনিও পক্ষাঘাতগ্রস্ত। সংসারের হাল ধরেছেন মিহানের মা মোমেনা খাতুন। মানুষের সাহায্যই এখন তাদের একমাত্র ভরসা।

জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৩ নভেম্বর। আলীয়া মাদরাসার সামনে রাস্তা পার হচ্ছিল মিহান। হঠাৎ একটি যাত্রীবাহী বাস এসে ধাক্কা দেয় তাকে। শিশুটি ছিটকে পড়ে সড়কে। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। সেখানে দীর্ঘ চিকিৎসায় ব্যয় হয় প্রায় ২০-২২ লাখ টাকা। সহায়-সম্পদ বিক্রি করেও শিশুটিকে পুরোপুরি সুস্থ করা যায়নি। কোমর থেকে নিচ পর্যন্ত আজও অবশ হয়ে আছে তার শরীর। হাঁটতে পারে না, খেলতে পারে না, যেতে পারে না প্রিয় মাদরাসায়।

শিশু মিহান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, ‘আমি আর হাঁটতে পারি না। খেলতে চাই, স্কুলে যেতে চাই। আপনারা সাহায্য করেন প্লিজ।’

ছেলের এমন পরিণতিতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন বাবা আব্দুস সাত্তার। এক সময় দিনমজুর হিসেবে কাজ করলেও সন্তানের চিকিৎসার খরচ যোগাতে সব বিক্রি করে দেন। ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। প্রথমবার সুস্থ হলেও দ্বিতীয়বারের পর আর উঠে দাঁড়াতে পারেননি। এখন বিছানায় নিথর পড়ে আছেন।

মা মোমেনা খাতুন বলেন, ‘মিহান আমার একমাত্র ছেলে। ওকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু এখন চোখের সামনে শুধু অন্ধকার। ঢাকায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে সব শেষ করেছি। এখন খাবার জোটে না, ওর চিকিৎসা কোথা থেকে করব?’

তিনি বলেন, ‘স্বামীও মৃত্যুশয্যায়। ঘরে আয় নেই, সংসার চলে না। মানুষ যা দেয়, তাই খেয়ে বাঁচি। কেউ যদি একটু পাশে দাঁড়াত, হয়তো ছেলেটা আবার হাঁটতে পারত।’

প্রতিবেশীরা বলছেন, এই পরিবার একসময় স্বচ্ছল ছিল। কিন্তু সন্তানের চিকিৎসায় সব বিক্রি করে এখন নিঃস্ব। স্থানীয়ভাবে যতটুকু সম্ভব হয়েছে, সবাই সহযোগিতা করেছেন। তবে এটি এখন আর ব্যক্তিগত নয়, সামাজিক সহায়তা ছাড়া পথ নেই।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অসীম কুমার বলেন, দুর্ঘটনার সময় স্পাইনাল কর্ডে আঘাত পেয়েছে মিহান। তাই কোমর থেকে নিচে অবশ হয়ে গেছে। উন্নত চিকিৎসা পেলে শিশুটিকে অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো সম্ভব। তবে এটি কিছুটা ব্যয়বহুল চিকিৎসা।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোয়াইব আহমাদ বলেন, আমাদের মানবিক সহায়তা ফান্ড থেকে পরিবারটিকে সহযোগিতা করা হবে। এছাড়াও মিহানের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে কীভাবে এগিয়ে আসা যায়, সে উদ্যোগও নেওয়া হবে।

এই পরিবারকে সহযোগিতা করতে চাইলে যোগাযোগ- মোমেনা খাতুন (মিহানের মা) বিকাশ পারসনাল: ০১৮১৪০৯৫৭৫৪।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]