দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানো যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় শান্তি চুক্তি কার্যকর ও ত্রাণ সরবরাহের দাবিতে প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বিখ্যাত হারবার ব্রিজে বিক্ষোভ করেছেন লাখো মানুষ। গাজার ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকট মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপের দাবিতে আয়োজিত রোববারের এই বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়েছেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জও।
প্রায় দুই বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে গাজায় ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা বলছে, খাদ্য সংকটের কারণে গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। খাদ্য সংকট ও অপুষ্টির শিকার হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন।
‘মার্চ ফর হিউম্যানিটি’ নামের ওই বিক্ষোভে অংশ নেওয়া লোকজনের হাতে ক্ষুধার প্রতীক হিসেবে হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে এসেছিলেন। এই মিছিলে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জও অংশ নিয়েছেন।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউ সাউথ ওয়েলসের পুলিশ ও রাজ্যের প্রিমিয়ার গত সপ্তাহে বিখ্যাত হারবার ব্রিজে মিছিল ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন। নিরাপত্তা হুমকি ও যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তারা। তবে রাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট শনিবার এক রায়ে বলেন, হারবার ব্রিজে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা যেতে পারে।
ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে শত শত পুলিশ মোতায়েন করেছে নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া লোকজনকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে, দেশটির আরেক শহর মেলবোর্নেও ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে একই ধরনের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানেও শত শত পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে।
গাজায় অমানবিক যুদ্ধের অবসানে গত কয়েক সপ্তাহে ইসরায়েলের ওপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক চাপ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ফ্রান্স ও কানাডা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ব্রিটেন বলেছে, ইসরায়েল যদি এই মানবিক সংকট নিরসন না করে ও যুদ্ধবিরতিতে না পৌঁছায়, তাহলে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া দেবে।
বিশ্বের প্রভাবশালী এসব দেশের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে ইসরায়েল বলেছে, তাদের এই পদক্ষেপ গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসকে পুরস্কৃত করার সামিল।
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি এই যুদ্ধ গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন গাজার লাখ লাখ মানুষ। বর্তমানে এই উপত্যকায় খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা অমানবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে অস্ট্রেলিয়ার মধ্য-বামপন্থী প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলের ত্রাণ সরবরাহে বাধা দান এবং বেসামরিক মানুষ হত্যা মেনে নেওয়া যায় না। তবে তিনি এখনও ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেননি।
সূত্র: রয়টার্স।