40116

08/09/2025 আবার ভাঙছে জাতীয় পার্টি?

আবার ভাঙছে জাতীয় পার্টি?

নিজস্ব প্রতিবেদক

৯ আগস্ট ২০২৫ ১১:৫৯

প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে নেতৃত্ব নিয়ে বিভক্তি দেখা দিয়েছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিত দল জাতীয় পার্টিতে। নেতৃত্ব নিয়ে ফের ভাঙনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে দলটিতে।

জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ আদালতে গড়ানোর পর এবার দলটি ষষ্ঠবারের মতো ভাঙতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত দলটি এরশাদের জীবদ্দশায় চারবার ভেঙেছে। ২০১৯ সালে জি এম কাদের দলের নেতৃত্বে আসার পর এটি আরও একবার ভেঙেছে।

দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বিরোধীরা আজ শনিবার (৯ আগষ্ট ) জাপার নামে কাউন্সিল করতে যাচ্ছে। যদিও জি এম কাদের নিযুক্ত মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এ কাউন্সিলকে অবৈধ আখ্যা দিয়েছেন।

গতবছরের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর রওশন এরশাদের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা একই নামে দল করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর জি এম কাদের সমর্থন করেন অন্তর্বর্তী সরকারকে। কিন্তু অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের প্রবল আপত্তির মুখে সরকারি বৈঠকে জাপাকে ডাকা বন্ধ করা হয়। স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা দিয়ে জাপার কার্যালয়-কর্মসূচিতেও হামলা হয়। এরপর জি এম কাদের সরকারের সমালোচক হিসেবে আবির্ভূত হন।

তার এ ভূমিকার পর জাপার গঠনতন্ত্রের ২০(১) “ক” ধারা সংশোধনের দাবি তোলেন দলটিতে আওয়ামী লীগপন্থি হিসেবে পরিচিত নেতারা, যারা শেখ হাসিনার সময়ে মন্ত্রী-এমপি ছিলেন।

এদিকে, জি এম কাদেরের সভাপতিত্বে গত মে মাসে জাপার প্রেসিডিয়ামে সিদ্ধান্ত হয়, ২৮ জুন দলের কাউন্সিল হবে। তবে প্রধান উপদেষ্টার কর্মসূচির কারণে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না– অজুহাতে এ কাউন্সিল স্থগিত করেন জি এম কাদের। যদিও এতে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন দলটির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব পদে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার।

জি এম কাদের কাউন্সিল স্থগিত করে এ দুজন এবং জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেন। ২০ (১) “ক” ধারার ক্ষমতাবলে আরও চার প্রেসিডিয়াম সদস্যকেও বহিষ্কার করা হয়। এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে জাপার ১০ নেতা মামলা করেন। মামলায় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনে জি এম কাদেরকে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।

এরই ধারাবাহিকতায় নিজেকে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দাবি করে কাউন্সিল ডেকেছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

শুক্রবার রাজধানীর গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “কাউন্সিলের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের বিভেদ মি‌টি‌য়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নবযাত্রা করবে জাপা। কাউন্সিলে সারাদেশ থেকে হাজার হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেট অংশ নেবেন।”

জাপার ভাঙনের ভাষ্যকে নাকচ করে তিনি বলেন, “পৃথক দল নয়, আদালতের আদেশ ও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউন্সিল করছি। নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করেছি। কাউন্সিলে তাদের প্রতিনিধি পাঠাতে জানিয়েছি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর গঠিত শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম বলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে জাপায় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই। কাউন্সিলে গঠনতন্ত্রের বিতর্কিত ধারা বাতিল করা হবে। জাতীয় পার্টি চলবে যৌথ নেতৃত্বে।”

কাউন্সিল আহ্বানের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে হাসিনা সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “৩০ জুলাই আদালত চেয়ারম্যানের সাংগঠনিক কার্যক্রমে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ফলে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবিরতার মুখে পড়ে। তাই রাজনৈতিক বাস্তবতা, আসন্ন নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনের সময়সীমার বিধিবিধান মেনে গঠনতন্ত্রের ২০(২) (খ) ধারা অনুযায়ী যথাযথ সাংগঠনিক উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ ধারার ক্ষমতাবলে গত ৫ আগস্ট আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে প্রেসিডিয়াম সভা হয়। এতে সর্বসম্মতিক্রমে নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা রক্ষায় কাউন্সিল আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়।”

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]