হৃতিক রোশনের বহুল প্রতীক্ষিত সিনেমা ‘ওয়ার ২’ মুক্তি পেয়েছে আজ। যশরাজ ফিল্মসের স্পাই ইউনিভার্স সবসময়ই দর্শক ও অনুরাগীদের কৌতূহল জাগিয়ে রেখেছে। দুর্দান্ত অ্যাকশন, ঝকঝকে ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট এবং বলিউডের তাবড় সুপারস্টারদের সংমিশ্রণ দিয়ে পর্দায় ম্যাজিক দেখানোর ইতিহাস রয়েছে বরেণ্য প্রযোজক আদিত্য চোপড়ার। এই তালিকায় যেমন রয়েছেন শাহরুখ খান ও সালমান খান, টাইগার শ্রুফ, হৃতিক রোশন।
পাশাপাশি এবার নতুন সংযোজন দক্ষিণী সুপারস্টার নন্দমুরি তারক রামা রাও জুনিয়র, যিনি পরিচিত এনটিআর জুনিয়র নামেও। ওয়ার টু সিনেমায় হৃতিক রোশন আর জুনিয়র এনটিআরের অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চারকে পর্দায় রূপ দিয়েছেন অয়ন মুখোপাধ্যায়, যাঁকে বলা হয়ে থাকে ভারতীয় সিনেমার ভিএফএক্স ও ভিজ্যুয়াল ম্যাজিকের মাস্টারমাইন্ড।
‘ওয়ার ২’ সিনেমার শুরুটা হয় এক সংঘর্ষ দিয়ে। গল্পে দেখা যাবে মেজর কবির (হৃতিক রোশন) এবং বিক্রম (জুনিয়র এনটিআর) দুজনই দেশপ্রেমিক, কিন্তু তাদের বিশ্বাস আলাদা। একজন শপথ নিয়েছে যে কোনো মূল্যেই মিশন সম্পন্ন করবে, অন্যজন বিশ্বাস করে শত্রুকে আগে বোঝা প্রয়োজন। এই দ্বন্দ্ব দর্শকদের টেনে নিয়ে যায় ইউরোপের গলি থেকে মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমি, স্পেনের সালামাঙ্কা শহরের রঙিন রাস্তা থেকে আবুধাবির সমুদ্রতীর পর্যন্ত। গল্প অনুযায়ী হৃতিক এবং এনটিআর একে অপরকে সম্মুখ সমরে দেখা যাবে।
অন্যদিকে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গানে তাদের দেখা গেছে ডান্স ফ্লোরেও। গত বৃহস্পতিবার যশরাজ ফিল্মস-এর পক্ষ থেকে সিনেমার ‘জনাব-এ-আলি’ গানের মাত্র ৩৫ সেকেন্ডের ঝলক প্রকাশ করতেই সামাজিক মাধ্যমে ঝড় ওঠে। এই গানের দৃশ্য হৃতিকের নিখুঁত মুভস এবং জুনিয়র এনটিআরের উচ্ছ্বসিত স্টেপ যেন নাচ নয়, আত্মার মিলন। কেউ কাউকে জায়গা ছেড়ে দেননি। এ বলে ‘আমায় দেখ তো’, ও বলে ‘আমায়…’।
এই গানের শরীরী হিল্লোলে যেমন ঝড় তুললেন ‘গ্রিক গড’-খ্যাত হৃতিক রোশন, তেমনি ডান্স স্টেপের মারপ্যাঁচে পাল্লা দিলেন দক্ষিণী সুপারস্টার।
গানটির মাত্র ৩৫ সেকেন্ড দেখেই সামাজিক মাধ্যমে ভক্তরা বলছেন, “এবার একেবারে শেয়ানে শেয়ানে টক্কর।” কেউ কেউ আবার ভবিষ্যদ্বাণী করছেন, “ভারতীয় সিনেমার দুই সুপারস্টারের পারফরম্যান্স ইতিহাস তৈরি করবে।” কারণ, হৃতিককে বলা হয় ‘বলিউডের মাইকেল জ্যাকসন’, আর এনটিআর বিশ্বের মঞ্চে ‘নাটু নাটু’ নাচের জন্য প্রশংসিত।
শুটিং চলাকালীন নানা রোমাঞ্চকর ঘটনা ঘটেছে। স্পেনে গাড়ি ধাওয়ার দৃশ্যে হৃতিকের গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাতের রেলিংয়ে ধাক্কা খায়, তবুও হৃতিক নিজের স্টান্ট শেষ করে থেমেছিলেন। আবুধাবির নৌকা চেজের শুটিংয়ে এনটিআর ঠান্ডা পানিতে দুই ঘণ্টা কাটান। সিনেমায় কিয়ারা আদবানিকে দেখা যাবে এক স্মার্ট, সাহসী এবং নিজের দায়িত্বে অবিচল অফিসার হিসেবে। তাঁর প্রথম অ্যাকশন দৃশ্যে ১৪ বার টেক নিতে হয়েছিল, কারণ তিনি চাইছিলেন প্রতিটি মুভ নিখুঁত হোক। কিয়ারা বলেন, ‘আমি নাচে যতটা কষ্ট পাই না, অ্যাকশনে তার দ্বিগুণ কষ্ট হয়।’
হৃতিক বলেন, “ওয়ার ২ আমার জন্য শুধু আরেকটি অ্যাকশন ফিল্ম নয়, এটা দুই ভিন্ন জগতের মিলন।” এনটিআর যোগ করেন, “বলিউডে আসার আগে ভয় ছিল, আমাকে গ্রহণ করবে কিনা। কিন্তু হৃতিকের সঙ্গে প্রথম শটেই সেই ভয় উধাও হয়ে গেল।’
হৃতিক এবং এনটিআরের শুটিং টানা ৭৫ দিন চলেছে। হৃতিক বলেন, ‘আমরা সহ-অভিনেতা হিসেবে শুরু করেছিলাম, এখন ভাই হয়ে গেছি।’ এনটিআর জানিয়েছেন, প্রথম দিনের আলিঙ্গনেই তাঁর সব দ্বিধা কেটে গিয়েছিল। কারণ, আমরা দক্ষিণীর শিল্পীরা বলিউডের সিনেমায় অভিনয়ের সময় মনে হয়, তারা আমাদের ঠিকঠাক মতো গ্রহণ করবে তো। আমার সেই ধারণা আর নেই।’ এনটিআর আরও বলেন, ‘এই সিনেমার মাধ্যমে আমি যেমন বলিউডে অভিনয় করেছি, ঠিক তেমনি এই সিনেমার মাধ্যমে হৃতিক দক্ষিণের সিনেমায় কাজ করেছেন।’
ওয়ার টু সিনেমার দৃশ্যধারণ হয়েছে ভারতের পাশাপাশি আবুধাবি, জাপান, ইতালি, স্পেন এবং রাশিয়ায়। প্রায় ৪০০ কোটি টাকার বাজেটে নির্মিত ছবিতে হৃতিক পেয়েছেন ৪৮ কোটি, এনটিআর ৩০ কোটি, কিয়ারা ১৫ কোটি এবং পরিচালক অয়ন ৩২ কোটি।
৫১ বছর বয়সেও হৃতিক মাত্র পাঁচ সপ্তাহে এই সিনেমার জন্য আট-প্যাক অ্যাবস করেছিলেন। ট্রেইনার ক্রিস গেথিন ও সঙ্গিনী সাবা আজাদের সহায়তায় তিনি প্রতিদিন রাত ৯টার মধ্যে শুতে গেছেন এবং কঠোর রুটিন বজায় রেখেছেন। হৃতিক ইনস্টাগ্রামে জানিয়েছেন, এই পাঁচ সপ্তাহে তিনি কোনো আপস করেননি, এমনকি ঘুমের নিয়ন্ত্রণও বজায় রেখেছেন।
ছবি মুক্তির কয়েক দিন আগে সেন্সর বোর্ড বড়সড় পরিবর্তন এনেছে। মোট ছয়টি দৃশ্যে কাটছাঁট করা হয়েছে। গান ‘আওয়ান জাওয়ান’-এর কিয়ারার বিকিনি দৃশ্যও কমানো হয়েছে। সিনেমাটি পুরো ভারতজুড়ে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে হিন্দি, তেলেগু এবং তামিল ভাষায়।
‘ওয়ার ২’-এর অ্যান্ড ক্রেডিটে লুকিয়ে আছে দুটি চমক, যা স্পাই ইউনিভার্সের পরবর্তী অধ্যায়কে নির্দেশ করবে। দর্শকরা এই মুহূর্তগুলো মিস করলে গোটা ইউনিভার্সের রহস্যের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবেন। গোপন মিশন, শ্বাসরুদ্ধকর ধাওয়া, বিস্ফোরক মোড় সব মিলিয়ে ‘ওয়ার ২’ শুধু সিনেমা নয়, এটি স্পাই ইউনিভার্সের পরবর্তী অধ্যায়ের প্রবল সূচনা। সিনেমার একদম শেষ মুহূর্তে উন্মোচিত দুটি রহস্য বদলে দেবে শুধু ছবির ভাগ্য নয়, পুরো ইউনিভার্সের ভবিষ্যৎ পথচলা।