42904

09/11/2025 রাঙামাটিতে বাঁশের বাণিজ্য শত কোটি টাকা ছাড়ালো

রাঙামাটিতে বাঁশের বাণিজ্য শত কোটি টাকা ছাড়ালো

জেলা সংবাদদাতা,রাঙামাটি

১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৩:১১

রাঙামাটিতে কাঠ ও মাছের পর সবচেয়ে বড় ব্যবসা হিসেবে গড়ে উঠেছে বাঁশের বাণিজ্য। প্রতিবছর এই অঞ্চলে শত কোটি টাকার বেশি বাঁশের ব্যবসা হয়ে থাকে, যার মাধ্যমে সরকার পায় কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব। সংশ্লিষ্টদের মতে, বাঁশভিত্তিক শিল্পায়ন ও সুপরিকল্পিত রপ্তানির ব্যবস্থা গড়ে তুললে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি সম্ভাবনাময় খাত হয়ে উঠতে পারে বাঁশ।

জেলার বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, রাজস্থলী, রাঙামাটি সদর ও কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন স্থানেও বাঁশ উৎপাদন হয়। একসময় এসব উপজেলা থেকে প্রায় ৩ কোটি বাঁশ আহরণ করা হলেও বর্তমানে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ কোটির নিচে। এর পেছনে বনভূমি হ্রাস এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চলে উৎপাদন কমে যাওয়াকে প্রধান কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। তবে ব্যক্তি উদ্যোগে বাঁশের বাগান গড়ে তোলায় উৎপাদন কিছুটা বেড়েছে।

রাঙামাটি বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও সৃজিত বাঁশ বাগান থেকে প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ৪৫৭টি বাঁশ আহরণ করা হয়। এ বাঁশের মধ্যে প্রধানত মুলি, ওরা, মিতিঙ্গা, ডুলু, ফারুয়া ও বাইজ্জা প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে মুলি বাঁশ সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়। সরকার প্রতি বাঁশ থেকে ১ টাকা ৪০ পয়সা হারে রাজস্ব আদায় করে।


বাঁশ ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে উঠেছে কুতুকছড়ি বাজার। জেলার সবচেয়ে বড় বাঁশের হাট বসে এখানে। জেলা সদর, নানিয়ারচরের বগাছড়ি, সাবেক্ষ্যং ও ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকরা বন থেকে বাঁশ কেটে এখানে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। প্রতিটি বাঁশ আকার ও জাতভেদে ১৫ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

প্রতিদিন কুতুকছড়ি হাট থেকে কয়েকটি ট্রাকে করে বাঁশ পাঠানো হয় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, ঢাকা ও দেশের অন্যান্য জেলায়। প্রতি মৌসুমে শুধু এই হাট থেকেই প্রায় অর্ধকোটি টাকার বাঁশ বাণিজ্য হয়।

কুতুকছড়ি হাটে বাঁশ বিক্রি করতে আসা নির্মল চাকমা বলেন, নিজের বাগান ও বনাঞ্চল থেকে বাঁশ সংগ্রহ করে হাটে এনেছি। বাঁশের জাত অনুযায়ী দাম ভিন্ন। কিছু বাঁশ ২০ টাকা, আবার কিছু ২০০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। তবে আগের মতো ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে না।

একই হাটের ব্যবসায়ী বিজয় মারমা জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে বাঁশ বাগানের মালিকরা এখানে বাঁশ নিয়ে আসেন। আমরা এগুলো কিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করি। তবে বর্তমানে কংক্রিট নির্মাণসামগ্রীর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাঁশের রাজকীয় বাজার হারিয়ে যাচ্ছে।

প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া বাঁশের উপর ভিত্তি করেই ১৯৫৩ সালে কাপ্তাইয়ে গড়ে ওঠে এশিয়ার বৃহত্তম কাগজ কল ‘কর্ণফুলী পেপার মিল’। এই মিলের প্রধান কাঁচামাল ছিল রাঙামাটির বাঁশ। তবে বর্তমানে কাগজ উৎপাদন বন্ধ থাকায় বাঁশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।

বাঁশ ও বাঁশজাত পণ্য বর্তমানে একটি লাভজনক শিল্প হিসেবে বিবেচিত। হস্তশিল্প, নির্মাণ সামগ্রী, আসবাবপত্রসহ নানাবিধ পণ্যে বাঁশের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এছাড়া পরিবেশবান্ধব উপাদান হিসেবে চীন ও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে বাঁশের সামগ্রীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেড় শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে জাতীয় চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখলেও এখনও পাহাড়ে বাঁশভিত্তিক কোনো শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠেনি। বাঁশের সঠিক ব্যবহার এবং শিল্পোন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রয়োজন যুগোপযোগী পরিকল্পনা।

রাঙামাটি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) সহকারী ব্যবস্থাপক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, এখানে আধুনিক যন্ত্রপাতি আনতে হবে। বাঁশকে যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, তাহলে স্থানীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে এবং নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠবে। এ জন্য সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে বাঁশ শিল্পের প্রসার ঘটানো সম্ভব।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]