আখতার হোসেনের ওপর হামলার ঘটনায় নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেলের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এসব দাবি জানান।
তিনি বলেন, গতকালের ঘটনায় হামলাকারীদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেলকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। ঘটনা সম্পূর্ণ তদন্ত করে নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ফ্যাসিবাদের জমানায় নিয়োগ করা আওয়ামী দোসরদের ফরেন মিনিস্ট্রি থেকে অপসারণ করতে হবে। উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর হামলাকারী হিসেবে যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই গণহত্যার বিচার স্বচ্ছ ও ত্বরান্বিতকরণ করতে হবে । দল হিসেবে সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ট্রাইব্যুনালে এখনো দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার শুরু হয়নি। আমরা ট্রাইব্যুনালের কাছে এটার আবেদন জানাব। সরকারের পক্ষ থেকেও যাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। যাতে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ গত ১৫ বছরের মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড তদন্ত করে সেটার বিচার কার্যক্রম শুরু করা হয়।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার জবাবদিহিতা চাওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কেন বারবার দেশের বাইরে এ ঘটনাগুলো ঘটছে। আমরা বিভিন্ন সময় দেখছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক যে নিয়োগগুলো দেওয়া হচ্ছে সেটা নিয়ে নানা বিতর্ক হচ্ছে। ফ্যাসিবাদের জমানায় যারা নিয়োগ হয়েছিল তারা সম্পূর্ণরূপে অপসারণ হয়নি। তারা থেকে গেল কেন? থেকে যাচ্ছে সেই বিষয়ে কোনো স্পষ্ট জবাব আমরা পাইনি। ফলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে বসে তার কাছে আমরা এ দাবিগুলো পেশ করব। আমরা জবাব চাইব, আমাদের বিদেশে যে অ্যাম্বাসিগুলো রয়েছে তারা কেন আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং কেন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী তৎপরতা বন্ধ করতে পারছে না।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আওয়ামী লীগ যে নানা তৎপরতা দেশে ও বিদেশে করছে, দেশকে অস্থিতিশীল করা, গণঅভ্যুত্থানের নেতা, শহীদ পরিবার এবং আহতদের লক্ষ্য করে তাদের আক্রমণ করা, সাইবার জগতে তাদের নিয়ে নানাভাবে নেতিবাচক এবং প্রোপাগান্ডা ছড়ানো– এই সবকিছু যে চলমান রয়েছে, তারই ধারাবাহিকতা হিসেবে গতকালের ঘটনাকে দেখতে হবে।
বিচার নিশ্চিত করার বিষয়টা আমরা বারবার বলে আসছি। সেই জায়গায় দুর্বলতা আছে দেখেই আওয়ামী লীগ এত তৎপরতা করার সুযোগ পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের বাইরে সাধারণ কোর্টে যে মামলাগুলা হয়েছে, সেখানে জামিন দেওয়া হচ্ছে। অনেক আসামি জামিন পেয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। অনেক এলাকায় আওয়ামী লীগের লোকেরা ছাড়া পেয়ে প্রকাশ্যে চলাফেরা করছে। শহীদ পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে। জুলাইয়ে যারা আহত হয়েছিল তাদের হুমকি দিচ্ছে। অনেক জায়গায় হামলার ঘটনা আমরা দেখেছি। ছোট ও বড় পর্যায়ে নানা ধরনের ঘটনা দেশে ঘটছে। দেশের বাইরেও আমরা দেখতে পাচ্ছি।
সরকারের সর্বস্তরে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো রয়ে গেছে জানিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, তাদেরকে অপসারণ করতে হবে, চিহ্নিত করতে হবে। শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যে বিচারের কথা বলছি সেই বিচার দ্রুততার সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে। গতকালের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আজ বিকেলে শাহবাগে আমাদের জাতীয় নাগরিক পার্টির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল হবে। দেশের সব জেলা ও মহানগরে গতকালের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল হবে।