43653

09/23/2025 উচ্চ শুল্কারোপ ও নীতিমালার অভাবে খেলনা শিল্পের সম্ভাবনা কাজে লাগছে না

উচ্চ শুল্কারোপ ও নীতিমালার অভাবে খেলনা শিল্পের সম্ভাবনা কাজে লাগছে না

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:১৯

কাঁচামালে আমদানি নির্ভরতা ও আমদানি পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্কারোপ, প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা এবং সহায়ক নীতিমালার অভাবে খেলনা খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

আজ (মঙ্গলবার) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত “রপ্তানি বহুমুখীকরণ; খেলনা উৎপাদন শিল্পে উদ্ভাবন এবং রপ্তানির সম্ভাবনা” শীর্ষক ফোকাস গ্রুপ আলোচনা সভায় বক্তরা এসব কথা বলেন।

ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (কাস্টমস : নীতি ও আইটি) মুহাম্মদ মুবিনুল কবীর এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডেপুটি ডেভলপমেন্ট ডিরেক্টর মার্টিন ডওসন বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, খেলনা সামগ্রী রপ্তানির বৈশ্বিক বাজার ১০২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; যেটি ২০৩০ সালে ১৫০ বিলিয়নে পৌঁছাবে, সেখানে এ খাতে আমাদের রপ্তানি মাত্র ৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের অনুপস্থিতি, টেস্টিং সুবিধার অপ্রতুলতা, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকারের সীমাবদ্ধতা, ব্যবহৃত কাঁচামালে আমদানি নির্ভরতা ও আমদানি পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্কারোপ, প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা এবং সহায়ক নীতিমালার অভাবে এ খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

এনবিআরের সদস্য মুহাম্মদ মুবিনুল কবীর বলেন, ২০২৩ সালে প্রণীত ট্যারিফ নীতিমালার অনুসারে রাজস্ব বিভাগ শুল্ক আরোপ করে থাকে এবং এ ক্ষেত্রে বিদেশি দাতা সংস্থাগুলোর কিছু সুপারিশ থাকে, যা মেনে চলতে হয়। অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে কোনো নীতি সহায়তা পরিবর্তনের তেমন সুযোগ নেই, তবে আগামী বছরে বাজেট প্রণয়নে এ খাতের প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা প্রদানের বিষয়টি সরকারের বিবেচনার সুযোগ রয়েছে।

এনবিআর সদস্য আরও বলেন, গত ৪০ বছর ধরে তৈরি পোশাকখাতে সহায়তা দেওয়া হলেও এ খাতের সক্ষমতা কতটুকু বেড়েছে তা নিয়ে চিন্তার সময় এসেছে। তাই খেলনা শিল্পের উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা প্রাপ্তির চাইতে নিজেদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানো এবং পণ্যের উদ্ভাবনী কার্যক্রমে বেশি হারে মনোযোগী হওয়ার ওপর তিনি জোরারোপ করেন।

ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডেপুটি ডেভলপমেন্ট ডিরেক্টর মার্টিন ডওসন বলেন, বাংলাদেশে উৎপাদিত খেলনা পণ্য রপ্তানির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এবং ব্রিটিশ সরকার এ খাতে সহযোগিতা করতে বেশ আগ্রহী। বিদ্যমান নীতিমালার সংস্কার ও প্রতিবন্ধকতা নিরসন করা সম্ভব হলে ব্রিটেনে এ খাতের পণ্যের রপ্তানি আরও বহুগুণ বাড়বে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তিনি জানান, ব্রিটিশ সরকার সম্প্রতি রুলস অব অরিজিনের শর্তাবলী সহজীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যা বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের তার দেশে পণ্য রপ্তানি সম্প্রসারণে সহযোগিতা করবে।

তিনি উল্লেখ করেন, এনবিআর শিল্পখাতের কাঁচামালের কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়া সহজীকরণসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা নিরসন করেছে, যা বাংলাদেশের সামিগ্রক রপ্তানি সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি এবং জালালাবাদ পলিমারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম আহমেদ।

তিনি বলেন, প্লাস্টিক খাতে বাংলাদেশে প্রায় ৫ হাজারের মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে ২৫০টি খেলনা সামগ্রী উৎপাদনের সাথে জড়িত এবং এ খাতে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মানুষ কর্মরত রয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা।

তিনি জানান, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে খেলনা সামগ্রী রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৫.২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮৮টি দেশে রপ্তানির মাধ্যমে তা ৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। তবে পণ্যের মান নিশ্চিতকরণ, অপ্রতুল অবকাঠমো, গবেষণা কার্যক্রমের অনুপস্থিতি এবং নতুন পণ্যের ডিজাইন উদ্ভাবনে পিছিয়ে থাকা প্রভৃতি বিষয়ের কারণে এ খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

এ ছাড়াও অনুষ্ঠানটির নির্ধারিত আলোচনায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের পরিচালক ড. অশোক কুমার রয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের জয়েন্ট চিফ (ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেট ডিভিশন) মো. মামুন-উর রশিদ আসকারী, প্রেমিয়াফ্লেক্স প্লাস্টিকস লিমিটেডের ডেপুটি এক্সিকিউটি ডিরেক্টর মো. আনিসুর রহমান, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (বর্জ্য এবং কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনা) ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন, আমান প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রির প্রোপাইটর আমান উল্ল্যাহ, হ্যাসি টাইগার কোম্পানি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার মুসা বিন তারেক এবং রেডমিন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক অংশ নেন।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]