রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান বিএনপির
প্রকাশিত:
৩০ জুন ২০২৫ ১৬:৫৬
আপডেট:
৩০ জুন ২০২৫ ২৩:১৩

সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলটির উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল চীন সফর করে। সেই সফরে চীনের ক্ষমতাসীন চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে কার্যকর ভূমিকার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়।
চীন সফর নিয়ে সোমবার (৩০ জুন) বিকেলে গুলশান বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির মহাসচিব। সেখানে তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন চীন সফরের প্রতিনিধি দলের সদস্য দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, জহির উদ্দিন স্বপন, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল ও চেয়ারপার্সনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, সম্প্রতি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে বিএনপির এক প্রতিনিধিদল চীন সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে আমরা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিরাপদ স্বেচ্ছা এবং সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে চীনের অধিকতর এবং কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা (চীন) বলেছেন যে, অত্যন্ত আগ্রহ ও ঐকান্তিকতার সঙ্গে বিষয়টির (রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে) ওপর কাজ করছেন। মিয়ানমার সরকারকে তারা রাজি করানোর চেষ্টা করছেন। যেন দ্রুত প্রত্যাবাসন করানো যায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, পাঁচ দিনব্যাপী এই সফরে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এবং চীন সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে মতবিনিময় হয়েছে। তাদের মধ্যে ছিলেন- চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটিক্যাল ব্যুরোর সদস্য এবং ন্যাশনাল পিপল’স কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান লি হংসং, সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী মিস্টার লিউ জিয়ানচাও, সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের ভাইস মিনিস্টার মিসেস সান হাইয়ান।
বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তী সম্প্রতি উদ্যাপিত হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা সেই ঐতিহাসিক সম্পর্ক যা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের চীন সফরের মধ্য দিয়ে সূচিত হয়েছিল এবং যা পরবর্তী সময়ে খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রীত্বকালে সফরের মাধ্যমে আরও ঘনিষ্ঠতর হয়েছে। প্রতিটি বৈঠকে চীনা নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক উন্নয়নে এই দুই ব্যক্তিত্বের অবদান স্বসম্মানে ব্যক্ত করেছেন।
ওই বৈঠকে পলিসি ব্যুরোর সদস্য শি- লি-হংসং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, দ্রুতই একটি নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে নতুনভাবে কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে চীনের পক্ষ থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামীতে ডিজিটাল প্রযুক্তি, সেমিকন্ডাক্টর, নবায়ণযোগ্য জ্বালানি, মেডিকেল ও স্বাস্থ্যসেবা, উচ্চশিক্ষা, যোগাযোগ, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, এসএমই বিজনেস, ব্লু ইকোনমি উন্নততর প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে চীনের অধিকতর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। চীনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে ইতিবাচক অবস্থান সুস্পষ্টভাবে উল্লিখিত হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার সুং-ওয়ে-ডং এর সঙ্গে সফরের দ্বিতীয় দিনে আমরা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলেছি। বাংলাদেশের অবকাঠামো, পরিবেশ ও প্রযুক্তি উন্নয়নে তাদের সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছি। বাংলাদেশে শ্রমশক্তির সক্ষমতা, উন্নত বিনিয়োগ পরিবেশ ও বিনিয়োগের নিরাপত্তার বিষয়টিও আমরা ইতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করেছি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, বিগত ১৭ বছরের অনাকাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে সহনীয় করতে ঋণ পরিশোধ সময়সীমা বৃদ্ধি, বিভিন্ন ফি পুনর্বিবেচনা এবং অনুদানের সম্ভাব্যতার বিষয়েও চীনের সহায়তা চেয়েছে বিএনপি। যেটা তারা সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।
চীন কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে দুই বছর মেয়াদী রাজনৈতিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, যা আমরা ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছি।
এসএন /সীমা
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: