শুক্রবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৫, ১২ই বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


ইসলামে বিশুদ্ধ নিয়তের গুরুত্ব


প্রকাশিত:
২৯ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:১০

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:০৬

ছবি: ফাইল

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যা কিছু করি না কেন সবই নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক কাজে নিয়ত বিশুদ্ধ হতে হবে। আল্লাহ তাআলা মানুষ ও জ্বিন সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য। আর নিয়ত হলো ইবাদতের মূল। নিয়ত ছাড়া ইবাদত পরিপূর্ণ হয় না। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘নিয়ত ছাড়া কোনো আমল গৃহীত হয় না।’ (সুনানে কুবরা: ৬/৪১)

নিয়ত আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ- ইচ্ছা, স্পৃহা, মনের দৃঢ় সংকল্প। শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য কোনো কাজ বা আমলের দিকে মনোনিবেশ করাকে নিয়ত বলে। আমাদের জীবনের প্রতিটি কাজে বিশুদ্ধ নিয়ত থাকা কাম্য। নামাজ, রোজা থেকে শুরু করে সকল কিছুতেই নিয়ত বিশুদ্ধ হওয়া জরুরি। যদি নিয়ত বিশুদ্ধ না থাকে তাহলে কাজটি যতই সুন্দর হোক না কেন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব নয়। আল্লাহর কাছে সেই কাজ গ্রহণযোগ্য হয় না। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, বলে দাও যেন প্রত্যেকেই নিজ নিজ নিয়ত অনুযায়ী কাজ করে। (বনি ইসরাইল: ৮৪)

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা কি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই নিয়ত করি? এই প্রশ্ন থেকে যায়। যারা দুনিয়া লাভের আশায় নিয়ত করে তাদের পরকালীন প্রাপ্তি নেই। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে আখিরাতের ফসল কামনা করে, আমি তার জন্য তার ফসলে প্রবৃদ্ধি দান করি, আর যে দুনিয়ার ফসল কামনা করে আমি তাকে তা থেকে কিছু দেই এবং আখিরাতে তার জন্য কোনো অংশই থাকবে না। (সুরা আশ শুরা: ২০)

অন্য আয়াতে মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, যে ব্যক্তি দুনিয়ার নিয়ত রাখবে, আমি তাকে ইহজগতে যতটুকু ইচ্ছা প্রদান করব। অতঃপর তার জন্য দোজখ নির্ধারণ করব। সে এতে দুর্দশাগ্রস্ত বিতাড়িত অবস্থায় প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আখেরাতের নিয়ত রাখবে এবং তার জন্য যেমন চেষ্টার প্রয়োজন তেমন চেষ্টাও করবে। যদি সে প্রকৃত মুমিন হয় এরূপ লোকদের চেষ্টা কবুল হবে। (সুরা বনি ইসরাইল: ১৮-১৯)

হাদিস শরিফে নিয়তের ব্যাপারে বিশদ আলোচনা রয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের দেহ এবং তোমাদের আকৃতি দেখেন না; বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমল দেখেন।’ (সহিহ মুসলিম: ৬৪৩৭)

হজরত ওমর (রা.) বলেন, ‘আমি মহানবী (স.)-কে বলতে শুনেছি, প্রত্যেক কাজের ফলাফল নিয়ত অনুসারে হয়। প্রত্যেক মানুষ তার কাজের ফলাফল আল্লাহর কাছে তদ্রূপ পাবে, যেরূপ সে নিয়ত করেছে। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে হিজরত করবে, সে অবশ্যই আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টি পাবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি পার্থিব ফায়দা হাসিল করার অথবা কোনো রমণীকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে হিজরত করবে, সে তার ফল তা-ই পাবে, যা সে নিয়ত করেছে।’ (বুখারি: ১)

অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে যে, আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, আল্লাহ (ফেরেশতাদের) বলেন, আমার বান্দা কোনো গুনাহর কাজ করতে চাইলে তা না করা পর্যন্ত তার গুনাহ লেখো না। আর যদি তা করেই ফেলে, তাহলে তা সমপরিমাণ লেখো। আর যদি আমার (মাহাত্ম্যের) কারণে তা ত্যাগ করে, তাহলে তার পক্ষে একটি নেকি লেখো এবং যদি বান্দা কোনো ভালো কাজের ইচ্ছা করল কিন্তু তা না করে, তবুও তোমরা তার জন্য একটি নেকি লেখো। তারপর যদি তা করে, তবে তোমরা তার জন্য কাজটির ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত লেখো।’ (সহিহ বুখারি: ৭৫০১)

নিয়ত এমন এক বিষয়, যার সঠিক ব্যবহারে অভ্যাসগত প্রত্যেক কাজকে ইবাদতে পরিণত করা যায়। যেমন- মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীরা যদি তাদের অর্জিত জ্ঞান দ্বারা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবা করার নিয়ত করে, তাদের পড়াশোনা ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। ঘুম মানবজাতির অবিচ্ছেদ্য কাজ। এতে মূলত কোনো সওয়াব নেই। কিন্তু তাহাজ্জুদের নিয়তে, ঘুমের দোয়া পড়ে ইবাদতের শক্তি বৃদ্ধির ইচ্ছায় ঘুমালে এই ঘুম ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়, আমলনামায় সওয়াব লেখা হবে। সন্তানকে ভালোবাসা যদি নবীজির অনুসরণের নিয়তে হয়, পানি পান যদি ইবাদতের স্পৃহা বাড়ানোর নিয়তে হয় সবই ইবাদতে পরিণত হবে। এভাবে কৃষক, শ্রমিক, মজুর, মৎস্যজীবী, নাপিত, কামার, কুমার, গৃহিণী সবাই যে যার কাজে বিশুদ্ধ নিয়ত করলে ইবাদতে রূপ নেবে এবং সওয়াব লাভ করবে। কেননা রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘সকল আমল (এর ফলাফল) নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করবে তাই পাবে।’ (সহিহ বুখারি: ১)

কোরআন ও হাদিসের আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, নিয়ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশুদ্ধ নিয়ত ছাড়া কোনো আমলই আল্লাহ তাআলার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। কিন্তু বিশুদ্ধ নিয়তের কারণে সবকিছুই পাওয়া হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে প্রতিটি কাজে নিয়ত শুদ্ধ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।


সম্পর্কিত বিষয়:

আল্লাহ

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top