শুক্রবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৫, ১২ই বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


মুমিনের জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তার উপায়


প্রকাশিত:
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৬:৩৬

আপডেট:
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:০০

ফাইল ছবি

মহান আল্লাহ অত্যন্ত ভালোবেসে এবং অনন্য প্রক্রিয়ায় সর্বোত্তম সৃষ্টি হিসেবে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীর অন্য সব কিছু সৃষ্টি করেছেন শুধু মানুষের কল্যাণে। মানুষের জীবন একান্ত আল্লাহর দান। কাজেই জীবনকে আল্লাহর আমানত হিসেবে মূল্যায়ন করতে হবে। জীবনকে ভালোবেসে জীবনের প্রতি দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতার কোনো অবকাশ নেই। ধ্বংসাত্মক কোনো কিছুর দিকে জীবনকে ঠেলে দেওয়া যাবে না। জীবনের প্রতি সদাচার বিষয়ক ইসলামের নির্দেশনা এমন—

আল্লাহর কাছে শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা : মহান আল্লাহ শান্তিদাতা। তিনি কারো শান্তি, নিরাপত্তা, সুস্থতা ও কল্যাণ চাইলে কোনো শক্তি তা প্রতিহত করতে পারে না। কাজেই শান্তি, নিরাপত্তা ও কল্যাণ আল্লাহর কাছে কামনা করতে হবে। সুখে-দুঃখে তাঁকেই স্মরণ করতে হবে। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আজান ও ইকামাতের মধ্যে দোয়া কবুল হয়।’ তিনি (আনাস) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, তাহলে আমরা কী কামনা করব? রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের নিরাপত্তা কামনা করো।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৫৩৯৪)

আল্লাহর স্মরণে শান্তি অন্বেষণ : মানুষ মনের শান্তি লাভের জন্য অনেক কিছু করে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে সেগুলো মনকে শান্তি দিতে পারে না। শান্তির অনন্য উপকরণ হলো, আল্লাহর স্মরণ। আল্লাহ বলেন, ‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়; জেনে রেখো, আল্লাহর স্মরণেই চিত্ত প্রশান্ত হয়; যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, পরম আনন্দ এবং শুভ পরিণাম তাদেরই।’ (সুরা রাদ, আয়াত : ২৮-২৯)

হালাল ও সুষম খাদ্য গ্রহণ : জীবনের জন্য উপযোগী, সুষম ও হালাল খাবার ও পানীয় গ্রহণ করতে হবে। ক্ষতিকর, ধ্বংসাত্মক ও হারাম খাদ্য-পানীয় বর্জন করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘হে মানবজাতি, পৃথিবীতে যা কিছু হালাল ও পবিত্র খাদ্যবস্তু আছে তা থেকে তোমরা আহার করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৬৮)

ধূমপান ও মাদকদ্রব্য পরিহার : মাদকদ্রব্যও মানুষকে অসামাজিক, অসুস্থ ও অপরাধপ্রবণ অমানুষে রূপান্তর করে, মৃত্যুই যার করুণ পরিণতি। জীবনকে ভালোবেসে জীবন ধ্বংসাত্মক এসব বিষয় থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো এবং নিজেদের হাতে নিজেদের ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না। তোমরা সৎকাজ করো, আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণ লোককে ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৫)

পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন জীবন-যাপন : দৈহিক রোগ-ব্যাধি থেকে নিরাপদ থাকতে শরীর ও পরিধেয় পোশাক-পরিচ্ছদ পবিত্র ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পাত্রে খাবার খেতে হবে। সেই সঙ্গে খাদ্যদ্রব্যও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরও ভালোবাসেন। (সুরা বাকারা, আয়াত : ২২২)

আবু মালিক আল-আশয়ারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৫৬)

স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়া : সুস্থতা মহান আল্লাহর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকা ও ইবাদত-বন্দেগির জন্য সুস্থতা একান্ত প্রয়োজন। সুস্থতার মূল্যায়ন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও রোগ প্রতিরোধ বিষয়ে ইসলাম যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করেছে। যেমন—রাসুল (সা.) সুস্থতা ও রোগ প্রতিরোধে গুরুত্ব দিয়েই আবু কায়েস (রা.)-কে রোদে দাঁড়াতে নিষেধ করেন। আবু কায়েস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুল (সা.)-এর কাছে এমন অবস্থায় উপস্থিত হলেন যখন তিনি ভাষণ দিচ্ছিলেন। আবু কায়েস (রা.) রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে গেলেন। রাসুল (সা.) নির্দেশ দিলে তিনি স্থান ছেড়ে ছায়ায় চলে এলেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮২২)

সাধ্যের বাইরে ইবাদত নয় : আল্লাহ মানুষের ওপর মৌলিক বেশ কিছু ইবাদত-বন্দেগি অপরিহার্য করেছেন। যেমন—নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত। আল্লাহ প্রত্যেক ইবাদতের মধ্যেই দৈহিক ও আর্থিক সক্ষমতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। নামাজের ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশনা হলো, যথাসময়ে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে হবে। দাঁড়াতে সক্ষম না হলে বসে, বসেও সক্ষম না হলে শুয়ে নামাজ আদায় করতে হবে। রমজানের রোজা আদায়ে একেবারেই অক্ষম হলে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ফিদিয়া বা কাজা আদায় করতে হবে। আর্থিক সক্ষমতা না থাকলে জাকাত অপরিহার্য হবে না। আর্থিক ও দৈহিক সামর্থ্য না থাকলে হজ ফরজ হবে না। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ কারো ওপর এমন কোনো কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেননি, যা তার সাধ্যাতীত।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৮৬)

নিজের প্রতি অযাচিত আচরণ নয় : জীবন আল্লাহপ্রদত্ত আমানত হিসেবে তাতে অনর্থক হস্তক্ষেপ করা যাবে না। অপ্রয়োজনে রক্তপাত করা বা অঙ্গহানি করা যাবে না। স্বেচ্ছায় বৈরাগ্য জীবন অবলম্বন করা যাবে না। বিনা প্রয়োজনে দেহকে কোনো ধরনের ঝুঁকির মধ্যে নিক্ষেপ করা যাবে না। সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদ জীবনযাপন করতে হবে। আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রা.) বলেন, আমি সারা বছর রোজা রাখতাম এবং প্রত্যেক রাতে কোরআন খতম করতাম। তিনি বলেন, নবী (সা.) বিষয়টি জানতে পেরে আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমি তাঁর কাছে এলাম। নবী (সা.) আমাকে বলেন, ‘আমাকে জানানো হয়েছে যে তুমি সারা বছর ধরে রোজা রাখো এবং প্রতি রাতে কোরআন খতম করো।’ আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী, আমি তো এর মাধ্যমে কল্যাণই কামনা করি। নবী (সা.) বলেন, ‘তোমার জন্য প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখাই যথেষ্ট।’ আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমি এর চেয়ে বেশি রাখতে সক্ষম। নবী (সা.) বলেন, ‘তোমার ওপর তোমার স্ত্রীর অধিকার আছে, তোমার ওপর তোমার মেহমানের অধিকার আছে, তোমার ওপর তোমার শরীরের অধিকার আছে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৭৮৭)

আত্মহত্যার চিন্তাও নয় : জীবন আল্লাহর দান, যা অতি মূল্যবান। মূল্যবান জীবনকে অবমূল্যায়ন করে নিজের জীবনকে নিজে হত্যা করার নাম আত্মহত্যা। এটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। আর যে কেউ সীমা লঙ্ঘন করে, অন্যায়ভাবে তা করে আমি অচিরেই তাকে আগুনে প্রবেশ করাব। আর তা আল্লাহর পক্ষে খুব সহজ।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ২৯-৩০)

জীবন অতি মূল্যবান নিয়ামত। কাজেই ইসলামের নির্দেশনা হিসেবে পরিমিত খাদ্য গ্রহণ, বিশ্রাম, শরীরের প্রতি যত্নশীল এবং স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন হতে হবে। সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদ জীবন-যাপনের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি সুচারুভাবে সম্পাদন করতে সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top