মুশফিকের দেখানো পথ ধরেই হাঁটবেন শান্ত?
প্রকাশিত:
১ জুলাই ২০২৫ ১২:৫৫
আপডেট:
১ জুলাই ২০২৫ ১৮:৫১

নাজমুল হোসেন শান্ত আগেও একবার অধিনায়কত্ব ছাড়তে চেয়েছিলেন, তখন বোঝানো হয়েছিল তাকে। শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা সিরিজের পর টেস্ট অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।
এর ফলে তিন ফরম্যাটেই শান্ত আর অধিনায়ক রইলেন না। বাংলাদেশ এক ভালো নেতা হারাল তাতে। যদিও শান্ত ও দলের জন্য এটা শাপে বরই হতে পারে। যদি এই ঘটনার ফলে চলে আসা সুযোগটা ভালোভাবে কাজে লাগানো যায়।
কী সে সুযোগ? শান্তকে শুধু ব্যাটার হিসেবে কাজে লাগানোর সুযোগ। অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার ফলে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ১৯ মাসের পর শান্ত এবার শুধুই নিজের ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দিতে পারবেন। ২০২৩ সালে যে ছন্দে ছিলেন তিনি, সেটাই ফর্ম ফিরে পেতে চেষ্টা করবেন নিশ্চয়ই।
সেটা বাংলাদেশেরও বেশ করে প্রয়োজন। এই প্রজন্মের সেরা ব্যাটারের কাছ থেকে দল এখন নিয়মিত রান চাইবে। অধিনায়ক থাকাকালে শান্তকে অনেক বিষয়ে জড়িয়ে যেতে হয়েছে, যার নিয়ন্ত্রণ তার হাতে ছিল না মোটেও। তবে সেসব এখন অতীত, তিনি ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দিতে পারলে সেটিই হবে সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক।
অধিনায়ক হিসেবে শান্ত ধীরে ধীরে ভিন্ন এক জগতে ঢুকে পড়েছিলেন। বেশ কিছু কাজ করছিলেন বটে, তবে সেসবের স্বীকৃতি মিলছিল না আদৌ। অধিনায়ক হিসেবে তার শেষ ধাক্কা আসে যখন বিসিবি তাকে ওডিআই অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেয়, যে ফরম্যাট নিয়ে তার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাও ছিল।
এরপরই তিনি নিলেন টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত। বিসিবির কর্মকর্তারা এর প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, শান্তর সিদ্ধান্ত তাদের জন্য অপ্রত্যাশিত ছিল।
যদিও শান্ত অধিনায়কত্ব ছেড়েছেন যথাযথ প্রক্রিয়াই অনুসরণ করেই। সিরিজের শেষেই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ওয়ানডে সিরিজের এক সপ্তাহ আগে সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। যদি তিনি শ্রীলঙ্কা সফরের একদম শেষে ঘোষণা দিতেন, তবে বিষয়টি নানা ব্যাখ্যার জন্ম দিতে পারত। আবার প্রথম টেস্টের পর ঘোষণা দিয়ে দিলে তার সেঞ্চুরিকে বোর্ডের প্রতি জবাব হিসেবে দেখা যেতে পারত। কিন্তু সে পথে শান্ত হাঁটেননি। তিনি সিরিজ শেষেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, জানিয়েও দিয়েছেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে অধিনায়ক ছাঁটাই নতুন কিছু নয়। বেশিরভাগ সময়ে অধিনায়ককে আগেই কিছু না বলেই বরখাস্ত করা হয়। এতে মানসিক চাপ বেড়ে যায়। শান্তও কিছুদিন আগে এভাবে পদচ্যুতির শিকার হয়েছিলেন।
তবে সেসবও যে শান্তকে টলাতে পারেনি, তার নজির তিনি দেখিয়েছেন প্রথম টেস্টে। জোড়া সেঞ্চুরি করে শান্ত বার্তাটা দেন। শেষ দিনে বৃষ্টির কারণে জয় হাতছাড়া হলেও শান্ত খেলা ছেড়েছেন মাথা উঁচু করে। মুশফিকুরের সঙ্গে ২৬৪ রানের জুটি এবং দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ১২৫ রান তার ব্যাটিং সামর্থ্যের প্রমাণ।
তার লক্ষ্য হওয়া উচিত অধিনায়ক থাকাকালে যে ফর্মে ছিলেন, সেটাই ধরে রাখা। তখন তিনি টেস্টে ও ওডিআইতে গড় ৪০-এর বেশি ছিল, টি-টোয়েন্টিতেও জিতিয়েছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। এখন তার হাতে স্বাধীনতা আছে নিজেকে প্রমাণ করার। মুশফিকুরের মতো অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর ভালো খেলার দৃষ্টান্তও তার সামনে আছে। মুশফিক অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর ৪০ টেস্টে ৪২.৬০ গড়ে রান করেছেন।
শান্তর জন্য এটা বড় সুযোগ নিজেকে পরবর্তী ১০ বছরের জন্য বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের মূল ভরসা হিসেবে তৈরি করার। বাংলাদেশের ‘সদ্য সাবেক’ অধিনায়ক সে সুযোগটা কীভাবে কাজে লাগাবেন, বিসিবিও তাকে সেটা দেবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এসএন /সীমা
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: