বৃহঃস্পতিবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৫, ১১ই বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


দিল্লির লাড্ডুর সঙ্গে বিয়ের তুলনা করা হয় কেন?


প্রকাশিত:
১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:৪১

আপডেট:
২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:২৪

ছবি- সংগৃহীত

বহুদিন পর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা। সময়ের সঙ্গে কম-বেশি পরিবর্তন এসেছে সবার জীবনেই। কেউ বিয়ে করে সংসারী হয়েছে। কেউবা এখনও উপভোগ করছে স্বাধীন জীবনের আনন্দ। বিয়ের প্রসঙ্গ উঠতেই এক বন্ধু বলে উঠল, ‘বিয়ের কথা আর বলিস না রে ভাই। এতো দিল্লি কা লাড্ডু। জো খায়া ও পস্তায়া। জো নেহি খায়া ও ভি পস্তায়া’।

লাড্ডুর প্রতি ভালোবাসা থাকলেও দিল্লির লাড্ডু চেখে দেখার সৌভাগ্য আমার এখনও হয়নি। কিন্তু বিয়ের সঙ্গে এই লাড্ডুর তুলনা শোনা হয়েছে প্রায়ই। জিজ্ঞাসু মনে প্রশ্ন জাগে, বিয়ের সঙ্গে দিল্লির লাড্ডুর সম্পর্ক কী? কেন এই দুটো বিষয়ের তুলনা করা হয়?

প্রথমেই আসি দিল্লি কা লাড্ডু বা দিল্লির লাড্ডুর কথা। নানারকম মিষ্টির ঐতিহ্যে ভরা শহর এটি। বেসন আর চিনির সিরা দিল্লির লাড্ডুর মূল উপকরণ। এর সঙ্গে মেশানো হয় নানা পদের বাদাম, কিসমিস। আর ভাজার জন্য ব্যবহার করা হয় খাঁটি ঘি। উপাদানের নাম শুনে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কতটা মুখরোচক এই খাবার। কিন্তু এটি খেলে পস্তাতে হবে কেন?

দিল্লিকা লাড্ডুর সঙ্গে পস্তানোর সম্পর্ক নিয়ে অনেক ধরনের ব্যাখ্যা আছে। তবে দুটো ব্যাখ্যা বেশি প্রচলিত। চলুন সেগুলো জেনে নিই-

একটি গল্প প্রচলিত আছে যে একবার এক প্রতারক ব্যবসায়ী কাঠের গুঁড়োর সঙ্গে গুড় মিশিয়ে লাড্ডু বানিয়ে বিক্রি করে। সব লাড্ডু দ্রুত বিক্রি হয়ে গেলে প্রতারক পালায়। পরে যারা লাড্ডু কিনতে আসেন তারা লাড্ডু কিনতে না পেরে আফসোস করেন। অন্যদিকে যারা লাড্ডু কিনেছিলেন তারা ঠকে আফসোস করে। এই ভাবনা থেকে বলা হয়- দিল্লির লাড্ডু খাইলেও পস্তাইবেন, না খাইলেও পস্তাইবেন।

আবার বলা হয়, মুঘল আমলে উত্তর ভারতের নানাঅঞ্চল থেকে সুন্দরী নারী ধরে এনে দিল্লির জেনানা বাজারে চালান করা হতো। এই সুন্দরী ভোগ্যনারীদের ভোগ করতে গিয়ে ভোক্তা নানাভাবে নাকাল হয়েছে। আবার যারা ভোগ করতে পারেনি তারাও আফসোস করে মরেছে। এই কাহিনী থেকেই এসেছে ‘দিল্লি কা লাড্ডু জো খায়া ও পস্তায়া। জো নেহি খায়া ও ভি পস্তায়া’ প্রবাদটি।

দিল্লির লাড্ডুর সঙ্গে পস্তানোর সম্পর্ক নিয়ে একটা ধারণা হলো। কিন্তু এর সঙ্গে বিয়ের তুলনা কেন? এ বিষয়েও নানা মুনির নানা মত। তবে সবার কথা এসে মেলে এক মোহনায়।

দিল্লির লাড্ডু ঘি, বাদাম আর বেসনের মিশ্রণের মুখরোচক এক মিষ্টি। মুখে দিলেই যেন হারিয়ে যেতে হয় অন্য এক স্বাদের ভুবনে। একটা খেয়ে মেটে না তৃপ্তি। পরপর কয়েকটা খেলেই পেট আর মুখের শান্তি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় পস্তানো। একদিকে পকেট ফাঁকা অন্যদিকে ঘি আর বাদামের আধিক্য পেটে গিয়ে শুরু করে গণ্ডগোল। শখের লাড্ডু খেয়ে তখন বদহজমে পস্তাতে হয়। অন্যদিকে যে কখনো দিল্লির লাড্ডু খেল না সে এর স্বাদ থেকে বঞ্চিতই থাকল। আফসোস তো তার করারই কথা।

এবার আসা যাক বিয়ের কথা। অবিবাহিতরা মনে করেন বিয়ে একটি আনন্দদায়ক বিষয়। একজন কাছের মানুষ পাওয়া, একটি সুখের পরিবার হওয়া, গোছালো জীবন— এসব স্বপ্ন কার না থাকে। তাই বিয়ে না করা অব্দি তার জন্য পস্তানোই স্বাভাবিক।

অন্যদিকে, বিয়ে করলেও পস্তাতে হয়। কারণ নানারকম দায়িত্ব তখন মাথায় এসে পড়ে। সংসারের খরচ, নানা নিয়মকানুন আর স্বাধীন জীবনের ইতি টেনে অনেকেই ভাবেন বিয়েটা করেই বুঝি পস্তালাম।

ব্যাখ্যা যাই হোক, স্বাদে কিন্তু দিল্লির লাড্ডু কোনো অংশে কম নয়। কেবল সেটি খেতে হবে বুঝেশুনে, পরিমিত পরিমাণে। ঠিক তেমনি বিয়েও মন্দ কোনো বিষয় নয়। তবে বিয়ের পর অপরপক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে ভালোবাসা, সম্মান আর ভালো বোঝাপড়ার। তাহলেই বিবাহিত জীবন হবে আনন্দের।


সম্পর্কিত বিষয়:

লাড্ডু দিল্লি ঐতিহ্যে বিয়ে

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top