ইরানে মার্কিন হামলায় কোন দেশ কী বলছে?
প্রকাশিত:
২২ জুন ২০২৫ ১৯:৪১
আপডেট:
২২ জুন ২০২৫ ২৩:৩১

ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর নজিরবিহীন হামলার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার মাধ্যমে বৈশ্বিক সংঘাতের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলছে বলে রাশিয়া-চীনসহ অন্যান্যরা অভিযোগ করলেও ইউরোপের কিছু দেশ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পদক্ষেপে সমর্থন জানিয়েছে।
এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব ইরানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে, ওমান—যেখানে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আলোচনা হয়েছে, তারা এই হামলার নিন্দা জানিয়ে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে।
ইরান ঘিরে উত্তেজনা বৃদ্ধির নিন্দা জানিয়েছে মিসর। দেশটি বলেছে, জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের যেকোনও লঙ্ঘনের নিন্দা জানায় মিসর। বিশেষ করে যেকোনও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার ওপর জোর দিয়েছে দেশটি। ওই অঞ্চলের বিপদ আরও সংঘাত ও উত্তেজনার দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে মিসর।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, বর্তমান বিপজ্জনক উত্তেজনা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। সব দেশ বিবেচনা ও সংযম প্রদর্শন করবে বলে আশা প্রকাশ করেছে দেশটি।
ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার নিন্দা জানিয়ে ইরাক বলেছে, শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচিকে লক্ষ্যবস্তু করার মাধ্যমে বিপজ্জনকভাবে উত্তেজনা বৃদ্ধি ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করেছে ওয়াশিংটন। উত্তেজনা প্রশমনে দ্রুত কূটনৈতিক আলোচনার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে বাগদাদ।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী জোসেফ আউন বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। যার ফলে আঞ্চলিক ও একাধিক দেশের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলায় জোরালো নিন্দা জানিয়েছে তেহরানের মিত্র চীন ও রাশিয়া। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থার নজরদারিতে থাকা ওই স্থাপনাগুলোয় হামলার জোর নিন্দা জানায় বেইজিং। যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা জাতিসংঘ সনদের পরিষ্কার লঙ্ঘন। এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেবে জানিয়ে সকল পক্ষকে হামলা বন্ধ ও দ্রুত আলোচনায় ফেরার তাগিদ দিয়েছে চীন।
অন্যদিকে মার্কিন হামলার তীব্র নিন্দা ও সমালোচনা করেছে রাশিয়া। মস্কো বলেছে, ‘‘কোনও ন্যায্যতা ছাড়া একটি সার্বভৌম দেশের ওপর এই হামলা একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত; যা জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক আইন ও নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনার লঙ্ঘন।’’
‘সকল ধরনের আগ্রাসন’ বন্ধের দাবি জানিয়েছে রাশিয়া। সেই সাথে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সকল পক্ষকে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছে মস্কো।
আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কায়া কাল্লাস বলেন, ‘‘ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দেওয়া যাবে না। কারণ এটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হবে।
তিনি বলেন, সব পক্ষকে সংযত হওয়া, আলোচনার টেবিলে ফিরে আসা এবং ভবিষ্যৎ উত্তেজনা এড়ানো উচিত। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন এমন পদক্ষেপ নিয়েছে; যা ইরানকে পারমাণবিক শক্তিতে পরিণত হওয়ার হুমকি ‘হ্রাস’ করতে সহায়ক হবে।
রোববার সকালের দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘‘ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুতর হুমকি। ইরানকে কখনই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দেওয়া হবে না।’’
ব্রিটিশ এই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আমরা ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার এবং এই সংকটের কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানাই।
লাতিন আমেরিকায়, চিলি, বলিভিয়া, ভেনেজুয়েলা এবং কিউবার রাষ্ট্রপ্রধানরা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন। বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট লুইস আর্স এবং কিউবার প্রেসিডেন্ট রাফায়েল দিয়াস-কানেল যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী বলে নিন্দা জানিয়েছে।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর প্রশাসনের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা একটি অবৈধ, অযৌক্তিক এবং অত্যন্ত বিপজ্জনক আগ্রাসনের কাজ।
চিলির প্রেসিডেন্ট গাব্রিয়েল বোরিচ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা এই অর্থে ব্যবহার করা উচিত নয়, তারা মানবজাতি হিসেবে আমরা যেসব নিয়ম তৈরি করেছি, তা লঙ্ঘন করতে পারে।
সূত্র: বিবিসি।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: