মঙ্গলবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৫, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়ার পর


প্রকাশিত:
২৯ আগস্ট ২০২০ ০২:৪৮

আপডেট:
২৯ আগস্ট ২০২০ ০৩:১৫

ছবি-সংগৃহীত

করোনার ভ্যাকসিন এখন সবার প্রত্যাশা। ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়ে করোনাকে প্রতিরোধ করা আর সচেতন থাকা এখন একমাত্র উপায়। তবে প্রতিদিন অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন আবার করোনা মোকাবিলা করে সুস্থও হয়ে উঠছেন। করোনা ভাইরাস জনিত রোগ কোভিড-১৯ থেকে বাঁচতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য খাদ্যাভ্যাস যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি করোনা চিকিৎসায় সঠিক পথ্য খুবই জরুরি। কোভিড-১৯ থেকে দ্রুত সুস্থ হতে, জটিলতা কমাতে বা মোকাবিলার জন্য এবং কোভিড-১৯ পরবর্তী স্বাভাবিক জীবনে দ্রুত ফিরে যেতে হলে সঠিক খাদ্যাভ্যাস খুব জরুরি

বর্তমান সময়ে অনেকেই আমাদের কাছে আসছেন কোভিড-১৯ পরবর্তী সমস্যা নিয়ে। এ রোগ চলাকালীন সময়ে প্রোটিন ও ক্যালরি সঠিক পরিমাণে যারা গ্রহণ করেন তাদের পরবর্তী সময়ে কম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার পর শরীরের নিজস্ব রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে শরীরকে সুস্থ করে তোলে। এ সময় রোগের বিরুদ্ধে কাজ করতে গিয়ে শরীরের ‘ইমিউন ডিফেন্স সিস্টেম’ অনেক দুর্বল হয়ে পরে। তাই সঠিকভাবে শরীরে পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করা না হলে শরীর প্রচুর দুর্বল হয়। সে জন্য কভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠার পরও অনেক যত্ন নিতে হবে শরীরের।

ক্যালরি

শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে। তবে ব্যক্তি বিশেষে এ চাহিদা কম-বেশি হতে পারে। যেমন, ডায়াবেটিক রোগীর জন্য এই চাহিদা তার রক্তের গ্লুকোজ ও শারীরিক ওজনের ওপর নির্ভর করবে। আবার যাদের ওজন বেশি বা স্থূলতার সমস্যা আছে তাদের ক্যালরি চাহিদা নির্ভর করবে তাদের বি এম আই ও অন্যান্য সমস্যার ওপর। তবে ক্যালরি চাহিদা পূরণ ঠিকমতো না হলে, রোগী দুর্বল হয়ে যাবে।

শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে। তবে ব্যক্তি বিশেষে এ চাহিদা কম-বেশি হতে পারে। যেমন, ডায়াবেটিক রোগীর জন্য এই চাহিদা তার রক্তের গ্লুকোজ ও শারীরিক ওজনের ওপর নির্ভর করবে। আবার যাদের ওজন বেশি বা স্থূলতার সমস্যা আছে তাদের ক্যালরি চাহিদা নির্ভর করবে তাদের বি এম আই ও অন্যান্য সমস্যার ওপর।
কোভিড-১৯ কালীন অবস্থায় বেশির ভাগ রোগীর খাওয়ার রুচি কমে যায়। তাই অল্প খাবারে অধিক পুষ্টি ও ক্যালরি প্রদানের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। দৈনিক ক্যালরি চাহিদার ৪৫ থেকে ৫৫ শতাংশ নিতে হবে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট থেকে, ১৫-২০ ভাগ নিতে হবে প্রোটিন থেকে আর ২৫- ৩০ শতাংশ ফ্যট বা চর্বি জাতীয় খাবার থেকে নিতে হবে। সুষম খাবার গ্রহণ তাই নিশ্চিত করতে হবে।

প্রোটিন

করোনা সংক্রমণের পর যেমন প্রোটিনের চাহিদা বৃদ্ধি পায়, ঠিক তেমনি করোনা নেগেটিভ এর দিন থেকে পরবর্তী এক মাস পর্যন্ত প্রোটিন বাড়িয়ে খেতে হবে। কিডনি রোগী ব্যতীত সবার প্রোটিনের পরিমাণ বাড়িয়ে খেলে মাংসপেশি ক্ষয় প্রতিরোধ করা যায়। অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন কমা, চুল পরা, ত্বকের ক্ষতি ও পরবর্তীতে শরীর ব্যথার সমস্যা অনেক কমানো যায় এভাবে। তাই, নরম মাছ, মুরগির মাংস, ডিম এক বা দুটি, দুধ ও দই, দুধে তৈরি খাবার, পাতলা ডাল ইত্যাদি খেতে হবে। যাদের রুচি কম থাকবে, তাদের বাদাম ও ডাল এড়িয়ে চলা ভালো।

চর্বি
ওমেগা ৩ এবং ওমেগা ৬ সমৃদ্ধ খাবার, প্রাকৃতিক চর্বি যুক্ত খাবার— যেমন, তেল যুক্ত মাছ, ঘি, ডিম, পিনাট বাটার, অলিভ ওয়েল, রান্নার উদ্ভিজ্জ তেল, মুরগির মাংস, দুধ ইত্যাদি খেতে হবে। যাদের ফুসফুসে বেশি সমস্যা হয়েছিল এবং যাদের হার্টের কোনো সমস্যা নেই তাদের ৩৫ শতাংশ ক্যালরি চর্বিজাতীয় খাবার থেকে নেওয়া ভালো। তবে কোভিড-১৯ পরবর্তী এক মাস পর আবার স্বাভাবিক পরিমাণে চর্বিজাতীয় খাবার খেতে হবে।

ভিটামিন ও মিনারেল

করোনা ভাইরাস থেকে শরীরকে রক্ষা করতে শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক দুর্বল হয়ে পরে। করোনা সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পর শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সচল ও পুনরায় কার্যকরী করে তুলতে যথেষ্ট ভিটামিন ও মিনারেল প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে চুল পরা ও ত্বকের ক্ষতি কমাতেও ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর প্রয়োজন হয়।

করোনা সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পর শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সচল ও পুনরায় কার্যকরী করে তুলতে যথেষ্ট ভিটামিন ও মিনারেল প্রয়োজন হয়
করোনা সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পর শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সচল ও পুনরায় কার্যকরী করে তুলতে যথেষ্ট ভিটামিন ও মিনারেল প্রয়োজন হয়ছবি: প্রথম আলো
কোভিড-১৯ পরবর্তীতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন বা সাপ্লিমেন্ট খেতে হয়। যেমন, ভিটামিন ডি,ভিটামিন সি, ফলিকঅ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, আয়রন ইত্যাদি খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। তবে সবাই সব রকম সাপ্লিমেন্ট খাবে তা নয়। ব্যক্তি বিশেষে এই চাহিদা ভিন্ন হয়। তবে প্রাকৃতিকভাবে শরীরে ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা পূরণে ফল, ফলের জুস (চিনি ছাড়া), ডাবের পানি, সবজিও প্রোটিন যুক্ত খাবার নিয়মিত খেতে হবে। যেমন, মাংস, মাশরুম ও সবজি দিয়ে স্যুপ করে খেলে অনেক ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যাবে। সবজি দিয়ে ডাল রান্না করে তাতে লেবু দিয়ে খেলে অনেক আয়রন পাওয়া যাবে। এভাবে একটু রকমফের করে খেলে উপকার পাওয়া বে। শরীর পুনরায় আগের মতো হবে।

তরল

কোভিড-১৯ চিকিৎসা ও প্রতিরোধে যেমন প্রচুর তরলজাতীয় খাবার খাওয়া জরুরি, ঠিক তেমনি পরবর্তীতেও শরীরকে চাঙা করতে ও সুস্থ রাখতে সঠিক পরিমাণে তরল খাবার খেতে হয়। যেমন, লাচ্ছি, লেবু পানি, ফলের জুস, দুধের পাতলা সাগু, স্যুপ, পাতলা জাউ, ডাবের পানি ও আদা লেবুর রং চা ইত্যাদি খেতে হয়। সাধারণত প্রতি দুই ঘণ্টায় অল্প অল্প করে কিছু তরল খাওয়া ভালো। তবে কিডনি রোগী যাদের কোভিড-১৯ হয়েছে এবং রোগ থেকে সেরে ওঠার পর কারও যদি পায়ে বা শরীরের কোথাও পানি থাকে, তবে তাকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তরল খেতে হবে মেপে।

সুষম খাবারের পাশাপাশি কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। সেগুলো হলো

• পরিমিত ঘুম: কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। সকালে ঠিকমতো উঠে নাশতা খেতে হবে।

• সঠিক সময় ও পরিমাণ মতো খাবার খেতে হবে।

• বেশি রাত জাগা থেকে বিরত থাকতে হবে।

• হালকা হাঁটা চলা করতে হবে।

• খাওয়ার সময় পানি পান থেকে বিরত থাকতে হবে।

• আলাদা লবণ, কোনো প্রকার চিনি, ভাজা পোড়া ও শক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।

• রান্নায় পরিমিত তেল, মসলা ব্যবহার হবে।

• সহজে হজমযোগ্য নরম খাবার খেতে হবে। যেমন, জাউ ভাত, পেঁপে বা লাউ দিয়ে মাছ, সবজির ভর্তা, সাগু পায়েস, পুডিং, ফলের কাস্টার্ড, পায়েস, স্মুদি, ফলের পিউরি ইত্যাদি।

• ডাক্তারের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে।

• শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে হবে।

• ডাক্তারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে এবং শরীরের অবস্থা জানাতে হবে।

• হাসিখুশি, প্রাণবন্ত থাকতে হবে।

করোনা আমাদের জীবনে নতুন একটা অধ্যায়, যা এখনো পুরো বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি। তাই সুস্থ থাকতে বিজ্ঞানসম্মত জীবন যাপনের কোনো বিকল্প নেই।

লেখক: প্রধান পুষ্টিবিদ, এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকা

সূত্র: প্রথম আলো


সম্পর্কিত বিষয়:

করোনা ভাইরাস

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top