মঙ্গলবার, ১৭ই জুন ২০২৫, ৩রা আষাঢ় ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


কারখানা চালু করতে সরকারের হস্তক্ষেপ চান বেক্সিমকোর কর্মীরা


প্রকাশিত:
২৩ জানুয়ারী ২০২৫ ১৫:৫১

আপডেট:
১৭ জুন ২০২৫ ১৭:৫৩

ছবি সংগৃহীত

লে-অফ প্রত্যাহার করে কারখানা চালু করতে সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন বেক্সিমকো গ্রুপের কর্মীরা। একইসঙ্গে ব্যাংকিং কার্যক্রম ও ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলার অনুমতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। পাশাপাশি কারখানা ও ব্যবসা চলমান রেখে সব ধরনের বকেয়া বেতন এবং কোম্পানির ঋণ পরিশোধের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি জানানো হয়।

বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন সালমান এফ রহমান। মূলত তার নির্দেশনায় গ্রুপটি পরিচালিত হতো। এছাড়া তিনি আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। জানা গেছে, আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গ্রুপটি বেকায়দায় পড়ে। অনেক প্রতিষ্ঠান ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় খেলাপি হয়ে আর্থিক সংকটে পরে। যার কারণে গ্রুপটির অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সৈয়দ মো. এনাম উল্লাহ বলেন, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের গার্মেন্টস ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এগুলোতে কর্মরত প্রায় ৪২ হাজার চাকুরিজীবীকে লে-অফের আওতায় জনতা ব্যাংকের ঋণ সুবিধায় জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত বেতনাদি দেওয়া হচ্ছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এ বিশাল জনবলকে আর কোনও প্রকার আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হবে না। যার পরিপ্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারি-২০২৫ মাস থেকে ১৬টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। এগুলোতে কর্মরত প্রায় ৪২ হাজার মানুষ চাকুরি হারাবে। সেইসঙ্গে এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি ওয়ালা, দোকানদার, অটো রিকশা চালক, স্কুল-মাদ্রাসা-কিন্ডার গার্ডেন বন্ধ হয়ে যাবে। যার সঙ্গে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আছে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের জীবন ও বেচে থাকার সব মৌলিক চাহিদা।

তিনি বলেন, বেক্সিমকোর মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন এবং বাংলাদেশের সব চেয়ে বড় গ্রুপ বন্ধ হয়ে গেলে কর্মীরা চাকুরি হারাবেন। তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় ২ লাখ পরিবারের সদস্যসহ এই শিল্প ও কর্মজীবীদের কেন্দ্র করে গড়ে উঠা কর্মসংস্থানের আরও প্রায় ৮ লাখ মানুষের রিজিক বন্ধ হয়ে যাবে। এই ৪২ হাজার কর্মজীবী মানুষের মধ্যে প্রায় ২ হাজার প্রতিবন্ধী, শতাধিক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এবং ৫ হাজারের বেশী ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি রয়েছেন যাদেরকে আমরা পরম মমতায় আর যত্নে সমাজ ও পরিবারের বোঝা হওয়া থেকে রক্ষা করছি। সরকারের সিদ্ধান্তের যদি কোনো পরিবর্তন না হয় তাহলে এরা সবাই মানবেতর জীবনের দিকে এগিয়ে যাবে। প্রায় ৪২ হাজারের নতুন বেকার এবং ব্যবসা-বাড়িভাড়া বঞ্চিত লাখো মানুষ নৈরাজ্য আর অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে গিয়ে নতুন সংকট তৈরি করবে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে লে-অফ প্রত্যাহার করে ১৬টি বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলা হয়, বেক্সিমকো শুধু বাংলাদেশে নয় এশিয়া মহাদেশের একটি বড় ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল গ্রুপ এবং শুধুমাত্র বেক্সিমকো গার্মেন্টস ডিভিশনই আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিমাসে প্রায় ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে প্রধান ভূমিকা পালন করতো। আজ সেই গার্মেন্টস ও সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলোকে বন্ধ করে রাখায়, ব্যাংকিং সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রাখায় সরকার ও জনগণ সেই বিশাল বৈদেশিক মুদ্রা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যা আমাদের জাতীয় আয় ও রিজার্ভ ঘাটতির অন্যতম কারণ।

সংবাদ সম্মেলন থেকে বেক্সিমকোর ব্যাংকিং ও ব্যাক টু ব্যাক এলসি সুবিধা প্রদান করার দাবি জানিয়ে বেক্সিমকোর এই কর্মী বলেন, ব্যাংকিং ও এলসি সুবিধা ছাড়া দেশি-বিদেশি কোনো ব্যবসা বাণিজ্যই করা যায় না। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, ৬ মাস যাবত বেক্সিমকোর গার্মেন্টস ডিভিশনের সব ব্যাংকিং ও এলসি সুবিধা বন্ধ রাখা হয়েছে। একদিকে কারখানা বন্ধ, উৎপাদন নেই অন্যদিকে দায় দেনার পরিমাণ প্রচার করে তা পরিশোধের জন্য সব প্রকার চাপ অব্যাহত আছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বলতে হয়, আয় থেকে দায় শোধ-ব্যাংকিং ও ঋণ ব্যবস্থাপনার মূলমন্ত্র যদি হয়ে থাকে তাহলে বেক্সিমকো গ্রুপের সব দায়-দেনা নিয়মিতভাবে পরিশোধের জন্য বন্ধ রাখা প্রতিটি কারখানা খুলে দিয়ে উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরুর করার কোন বিকল্প নেই।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেক্সিমকো গ্রুপের নামে নানা অনিয়ম করে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে অর্থপাচার করেছে। যার প্রমাণ পেয়েছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। ১৪ আগস্ট ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে সালমান এফ রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিচার কার্যক্রম চলমান, তিনি এখন কারাগারে আছেন।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top