সোমবার, ২রা জুন ২০২৫, ১৮ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


৪ দিন ধরে বন্ধ চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, ভোগান্তিতে সেবা প্রত্যাশীরা


প্রকাশিত:
৩১ মে ২০২৫ ১৭:০৪

আপডেট:
২ জুন ২০২৫ ০৫:১৩

ছবি সংগৃহীত

রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জুলাই আন্দোলনে আহতদের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মচারীদের সংঘর্ষের জেরে হাসপাতালে সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। টানা চার দিন ধরে দেশের প্রধান চক্ষু সেবা কেন্দ্র বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন হাসপাতালে ভর্তি ও সেবা নিতে আসা শত শত সাধারণ রোগী।

শনিবার (৩১ মে) জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতাল ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

সরজমিনে দেখা যায়, চক্ষু হাসপাতালের প্রধান দুই ফটক তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। পাশের পকেট গেটে অবস্থান করছেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা গার্ডরা। তারা আগত সেবা প্রত্যাশীদের নানাবিধ প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন। এছাড়া হাসপাতালের সব সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালে নেই কোনো চিকিৎসক ও নার্স। হাসপাতাল ভবনের গেটে অবস্থান করছেন পুলিশ ও নিয়মিত গার্ডরা। গেটের সামনে বেঞ্চ ফেলে বসে আছেন তারা। সাথে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত বেশ কয়েকজনকেও অবস্থান করতে দেখা গেছে।

হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্স ও কর্মকর্তা কর্মচারী কেউ না থাকলেও এখনও রয়েছেন জুলাই আন্দোলনে আহতরা। বন্ধ হওয়ার আগে মোট ৫৫ জন জুলাই আহত হাসপাতালটিতে ভর্তি ছিল। যাদের মধ্যে বিষপানে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন এবং একজন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি ছিল। তবে বর্তমানে হাসপাতালটিতে মোট ৮০ জন জুলাই যোদ্ধা রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন আরও ৪০ থেকে ৫০ জন সাধারণ রোগী।

চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট দেশের চক্ষু চিকিৎসায় সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান। ফলে সারাদেশ থেকেই রোগীরা হাসপাতালটিতে আসেন। টানা চারদিন বন্ধ থাকায় শত শত রোগী প্রতিদিন হাসপাতাল এসে ফিরে যাচ্ছে।

কুমিল্লা থেকে আসা গাজী মোহাম্মদ আকতার বলেন, আমার চোখের অপারেশনের তারিখ রোববার (১ জুন)। ইতোমধ্যে সব পরীক্ষা করেছি। গত দুইদিন যাবত একবার করে হাসপাতালে আসছি। গার্ডরা বলছে হাসপাতাল বন্ধ, কবে খুলবে তারা জানে না।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি একজন ক্যান্সার রোগী। চোখের অপারেশনের জন্য কমলাপুরে এক আত্মীয়ের বাসায় থাকছি। কাল অপারেশন করতে না পারলে নতুন করে সব পরীক্ষা করতে হবে। একটা হাসপাতাল কীভাবে বন্ধ থাকতে পারে। কর্তৃপক্ষের দ্রুত সমস্যা সমাধান করা উচিত।’

নারায়ণগঞ্জ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রবিউল বলেন, ‘আমার চোখ শুকিয়ে গেছে। স্থানীয় চিকিৎসক ও স্বজনদের পরামর্শে এখানে এসেছি। এসে দেখি হাসপাতাল চারদিন যাবত বন্ধ। হাসপাতালের মতো সেবা প্রতিষ্ঠান কীভাবে বন্ধ থাকে?’

চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা ফিরে আসুক, চাওয়া ভর্তি থাকা রোগীদের

চার দিন হাসপাতাল বন্ধ থাকলেও চক্ষু বিজ্ঞানে এখনও শতাধিক রোগী ভর্তি রয়েছে। এদের বড় অংশই জুলাই যোদ্ধা। তারা বলছেন, হাসপাতালে থাকা বেশিরভাগ সাধারণ রোগীই চলে গেছে। অল্প কয়েকজন রয়েছে। যাদের অন্য কোথাও যাওয়ার মতো অবস্থা নেই। আমরা চাই, ডাক্তার নার্সরা ফেরত আসুক। আমাদের জন্য না হলেও সাধারণ রোগীদের জন্য আসুক।

জুলাই আন্দোলনে আহত আবু হানিফ বলেন, ‘সাধারণ রোগী কিছু আছে। আর যারা পাঁচ তলায় ছিলেন, তাদেরকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি, তাদের ফাইল রেখে দিয়েছি আমরা। আবার যখন হাসপাতাল চালু হবে তাদেরকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেয়া হবে এবং ফাইল ফেরত দেওয়া হবে। হাসপাতালে এখন খাবার নেই, চিকিৎসক-নার্স কেউ নাই–এসবসহ নানা সংকট বিরাজ করছে হাসপাতালে। সাধারণ রোগীদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কষ্ট আমরা করি, অন্যদের যেন কষ্ট না হয়।’

রিপা আক্তার নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘রোগী নিয়ে হাসপাতালে পড়ে আছি। ডাক্তার-নার্স কেউ নেই। কোনো ওষুধও দিচ্ছে না। রোগীর এমন অবস্থা যে নিয়ে যেতেও পারছি না। আমরা চাই দ্রুত সব স্বাভাবিক হোক।’

হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা গার্ডরা বলেন, কবে হাসপাতাল চালু হবে বা খুলবে এ বিষয়ক কোনো তথ্য নেই। এ বিষয়ে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলতে পারবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, নিরাপত্তা শঙ্কায় কেউ কাজে আসতে চাচ্ছে না। সরকারের উচ্চ মহলের দিকে তাকিয়ে আছে। উনারা বললে, চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজে যোগ দেবে।

এ বিষয়ে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলমের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top