বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী বাসভবনে র্যাগিংয়ের ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাংবাদিক মারধর ও র্যাগিংয়ের ঘটনা আড়াল করতে চাওয়া তদন্ত কমিটিতে সহকারী অধ্যাপক প্রবীর কুমার সাহাকে রেখে কমিটি গঠন করেছে কলেজ প্রশাসন।
রোববার (২৭ আগস্ট) বিকেলে এ কমিটি গঠন করা হয়। এ কারণে সুষ্ঠু বিচার নিয়ে শঙ্কিত র্যাগিংয়ের শিকার ওই শিক্ষার্থী।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ নাজিমুল হক বলেন, অভিযোগ তদন্তে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কলেজের অধ্যাপক উত্তম কুমার সাহাকে প্রধান করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বাকি তিন সদস্য হলেন সহযোগী অধ্যাপক প্রবীর কুমার সাহা, প্রভাষক আনিকা বিশ্বাস ও জহিরুল ইসলাম।
এর আগে কলেজের অধ্যক্ষ ড. ফয়জুল বাশার গণমাধ্যমকে জানান, যে শিক্ষার্থী র্যাগিংয়ের অভিযোগ করেছে সে মানসিকভাবে সুস্থ নয়। তার চিকিৎসার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে সাহায্য চেয়েছে পরিবার। তবে এসব কথা বলার পর মিডিয়ার সামনে আসছেন না ফয়জুল বাশার। রবিবার (২৮ আগস্ট) তার সাথে যোগাযোগের ব্যর্থ চেষ্টা করার পরে তাকে বেশ কয়েকটি ছোট বার্তা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু অধ্যক্ষ কোনো মাধ্যমে কথা বলেননি।
কলেজের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, র্যাগিং শিক্ষার্থীর অভিযোগের স্বপক্ষে বক্তব্য রেকর্ড করার জন্য শনিবার ও রবিবার প্রশাসনিক ভবনে আনা হয়। একই সঙ্গে অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রত্যাহার না হলে একাডেমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ছাত্রলীগ। একই সময়ে, তাদের শিক্ষা শেষ করতে বা আদালতে যাওয়ার জন্য বেছে নিতে বলা হয়।
কলেজ প্রশাসনের এমন চাপে বিপাকে পড়েছেন র্যাগিংয়ের শিকার মেয়েটির অভিভাবকরা। ছাত্রীর মা বলেন, "আমার মেয়ে র্যাগিংয়ের শিকার এবং বিচার চাইতে এসেছে এবং এখন তাকে প্রতিকূল পরিবেশ কাটিয়ে উঠতে হচ্ছে। আমার মেয়ে নির্যাতনের শিকার এবং কলেজের শিক্ষকরা আমার মেয়েকে বলছে আমরা এই নাটকগুলো সাজিয়েছি। আমার মেয়ে অভিনয় করছে।মূলত কলেজ প্রশাসন নির্যাতনকারীদের বাঁচাতে নানা কৌশল অবলম্বন করছে।
শনিবার (২৬ আগস্ট) র্যাগিংয়ের শিকার ওই ছাত্রীর বক্তব্য নেওয়ার সময় সহযোগী চিকিৎসকসহ ৭ সাংবাদিকের ওপর হামলা করেন ছাত্রী হোস্টেলের সুপার অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর প্রবীর কুমার সাহা। যদিও হামলার পরপরই সাংবাদিক নেতাদের মধ্যস্থতায় কলেজের অধ্যক্ষ মো. গণমাধ্যমের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন ফয়জুল বাশার।
এছাড়া ছাত্র র্যাগিং ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সব ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিল করা হয়েছে। শনিবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে কমিটি বিলুপ্ত করে অধ্যক্ষের স্বাক্ষরিত নোটিশ দেওয়া হয়।
সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি বরিশালের অধ্যক্ষ গাজী জাহিদ হোসেন বলেন, যে ছাত্রাবাসে ছাত্রীকে নির্যাতন করা হয়েছে তার দায় এড়াতে পারেন না হোস্টেল সুপার। এছাড়া আমরা দেখেছি ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশ না করতে সাংবাদিকদের হয়রানি করা হয়। ওই শিক্ষক প্রবীর কুমার সাহাকে তদন্ত কমিটিতে রাখলে সুষ্ঠু তদন্ত হবে বলে মনে হয় না। এতে করে নির্যাতনের শিকার মেয়েটি সঠিক বিচার পাবে না।
তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে। বরিশালে এমন ঘটনা ঘটা দুঃখজনক। আমি মনে করি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আবাসনের নিরাপত্তার বিষয়টি যথাযথভাবে তদন্ত করে কঠোর শাস্তি দেওয়া উচিত।
উল্লেখ্য, বুধবার (২৩ আগস্ট) রাতে ছাত্রী হলের ৬০৬ নম্বর কক্ষে ডেন্টালের ৭ম ব্যাচের ছাত্রী ফাহমিদা রওশন ওরফে প্রভা ও ৫০তম ব্যাচের নীলিমা হোসেন ওরফে জুঁইয়ের নেতৃত্বে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রীকে র্যাগিং করা হয়। নির্যাতনে মেয়েটি অচেতন হয়ে পড়লে তাকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তিনি সুস্থ হয়ে শনিবার আবার হলে ফিরে এসে বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানান।
এসব অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত ফাহমিদা রওশন ওরফে প্রভা ও নীলিমা হোসেন ওরফে জুঁইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।