আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে লিফটকে আবারও বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত এবং শুল্ক-কর বাড়ানোর প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ এলিভেটর, এসকেলেটর অ্যান্ড লিফট ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেলিয়া)। সংগঠনটি বলছে, এই খাতে শুল্কহার ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৩ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে, যা শুধু ব্যবসায়ীদের নয়, ভোক্তা ও আবাসন খাতের ওপরও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বুধবার (১৮ জুন) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বেলিয়ার সভাপতি এমদাদ উর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মো. শফিউল আলম উজ্জ্বলসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতা।
বেলিয়ার নেতারা বলেন, ২০২১–২২ অর্থবছর পর্যন্ত লিফটকে মূলধনি যন্ত্রপাতি হিসেবে আমদানি করা হতো। তখন এই পণ্যের ওপর শুল্কহার ছিল ন্যূনতম। কিন্তু ২০২২–২৩ অর্থবছর থেকে লিফটকে ‘বাণিজ্যিক পণ্য’ হিসেবে ঘোষণা করে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে সরকার। এতে করে খরচ বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তার জন্য লিফটের দাম বেড়ে যায় বহুগুণ।
৪৩ শতাংশ শুল্কে ক্ষতির মুখে ব্যবসা
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রস্তাবিত বাজেটে লিফটের ওপর ১৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর, ৫ শতাংশ অগ্রিম কর এবং নতুন করে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন লিফট আমদানিতে মোট শুল্ক ও কর দাঁড়াচ্ছে ৪৩ শতাংশ। অথচ আগের বছর (২০২৪–২৫) এই হার ছিল মাত্র ২৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
বেলিয়ার সভাপতি এমদাদ উর রহমান বলেন, লিফট কেনা, চুক্তি করা থেকে শুরু করে তা আমদানি ও ইনস্টল করতে সময় লাগে অন্তত কয়েক মাস। ইতোমধ্যে চলতি বছরের জুনের আগেই সহস্রাধিক লিফটের জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে। এসব লিফট পুরোনো শুল্কহার অনুযায়ী বিক্রি হয়েছে। এখন হঠাৎ করে বাড়তি কর আরোপ করায় আমরা বড় আর্থিক ঝুঁকির মুখে পড়ছি। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, ক্রেতারাও অনিশ্চয়তায় পড়বেন।
তিনি বলেন, আগে নির্ধারিত দামে বিক্রি করা পণ্যের জন্য নতুন হারে শুল্ক দিতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলো পথে বসে যাবে। এ অবস্থায় ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে প্রস্তাবিত নতুন শুল্ক হার কার্যকর করার আগে জুন মাসের আগেই খোলা এলসিভুক্ত লিফটের জন্য পূর্ববর্তী করহার বহাল রাখার জোর দাবি জানান তিনি।
আবাসন খাতেও নেতিবাচক প্রভাব
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিউল আলম উজ্জ্বল বলেন, আবাসন খাতের উন্নয়নে লিফট একটি অপরিহার্য উপাদান। কিন্তু অতিরিক্ত শুল্ক-কর বসানোর ফলে এর দাম আকাশচুম্বী হয়ে যাবে। এতে শুধু ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, ধস নামবে পুরো আবাসন খাতে।
তিনি বলেন, লিফটের দাম বাড়লে ফ্ল্যাটের দাম বাড়বে, যা সরাসরি মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। সেই সঙ্গে এই খাতের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী ও হাজার হাজার কর্মীও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
‘মূল্যায়ন ব্যবস্থাও বাস্তবসম্মত নয়’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজার দরের তুলনায় বাংলাদেশে লিফটের কাস্টমস মূল্যায়নও অযৌক্তিক। লিফটের ওজন বিবেচনায় ৬৫ শতাংশ লোহা ও স্টিল, ২৫ শতাংশ কংক্রিট ব্লক এবং বাকি ১০ শতাংশ ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি হয়। অথচ এর মূল্য ধরা হয়েছে প্রতি কেজি ৩ ডলার, যা বাস্তবতা বিবর্জিত।
বেলিয়ার নেতারা বলেন, এই অযৌক্তিক মূল্যায়ন ও শুল্ক হার বাতিল করে লিফটকে আবারও ‘মূলধনি যন্ত্রপাতি’ হিসেবে ঘোষণা করা হোক। পাশাপাশি আমদানি পর্যায়ে বাস্তবসম্মত মূল্যায়ন পদ্ধতি চালুর দাবি জানান তারা।