40151

08/10/2025 পারমাণবিক যুদ্ধ নিয়ে সতর্ক করলেন নাগাসাকির মেয়র

পারমাণবিক যুদ্ধ নিয়ে সতর্ক করলেন নাগাসাকির মেয়র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

৯ আগস্ট ২০২৫ ১৬:২৯

জাপানের নাগাসাকি শহরে যুক্তরাষ্ট্রের চালানো পারমাণবিক বোমা হামলার ৮০তম বার্ষিকী পালন করেছেন হাজার হাজার মানুষ। শনিবার নাগাসাকিতে প্রার্থনায় মাথা নত করে মার্কিন পারমাণবিক বোমা হামলার বার্ষিকী পালন করেন তারা। এ সময় নাগাসাকির মেয়র সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক বিভিন্ন সংঘাত আবারও বিশ্বকে পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

১৯৪৫ সালের ৯ আগস্টে জাপানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এই শহরে ১০ হাজার পাউন্ড ওজনের প্লুটোনিয়াম-২৩৯ বোমা ফেলে যুক্তরাষ্ট্র। এই বোমা ‘‘ফ্যাট ম্যান’’ নামে পরিচিত। এই বোমার আঘাতে শহরের প্রায় ২ লাখ মানুষের মাঝে অন্তত ২৭ হাজার জনের প্রাণহানি ঘটে। ১৯৪৫ সালের শেষ নাগাদ তীব্র তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৭০ হাজারে পৌঁছায়।

নাগাসাকির ধ্বংসযজ্ঞের তিন দিন আগে যুক্তরাষ্ট্র ইউরেনিয়াম-২৩৫ বোমা ফেলে হিরোশিমা ধ্বংস করে। এরপর জাপান ১৫ আগস্ট আত্মসমর্পণ করে; এর মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের।

ফ্যাট ম্যানের বিস্ফোরণের সময় স্মরণ করে শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ০২ মিনিটে এক মিনিটের নীরবতা পালন করেন হাজার হাজার মানুষ। এরপর নাগাসাকির মেয়র শিরো সুজুকি বিশ্বনেতাদের জাতিসংঘ সনদের নীতিতে ফিরে যাওয়ার আহ্বানের পাশাপাশি পারমাণবিক অস্ত্র বিলুপ্তির জন্য সুস্পষ্ট পথ দেখাতে বলেন। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এই বিষয়ে আর কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

নাগাসাকিতে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘এটি মানবসভ্যতার টিকে থাকার সংকট। যা আমাদের প্রত্যেকের দিকে দ্রুত এগিয়ে আসছে। জাপানি সংবাদমাধ্যম বলছে, নাগাসাকিতে মার্কিন হামলার ৮০তম বার্ষিকী পালনের ওই অনুষ্ঠানে প্রায় ২ হাজার ৭০০ মানুষ অংশ নিয়েছেন।

বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তির বরাত দিয়ে পারমাণবিক হামলার বাস্তবতা তুলে ধরে মেয়র শিরো বলেন, ‘‘আমার চারপাশে এমন মানুষ ছিল, যাদের চোখের মণি বাইরে বেরিয়ে এসেছে...। অনেকের দেহ পাথরের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল।’’

‘‘এটি কি সেই বিশ্ব নাগরিক দৃষ্টিভঙ্গি নয়, যা আমাদের ভাঙা পৃথিবীকে আবারও একত্রিত করার চালিকা শক্তি হতে পারে,’’ প্রশ্ন করেন সুজুকি। পারস্পরিক বোঝাপড়া ও ঐক্যের ভিত্তিতে এই সংকট সমাধানের আহ্বান জানান তিনি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ও বন্দরনগরী হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র নাগাসাকিকে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বেছে নিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। শহরের পাহাড়ি ভূপ্রকৃতি বিস্ফোরণের প্রভাবকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছিল।

নাগাসাকি পিস মেমোরিয়াল পার্কে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে ৯৫টি দেশ ও অঞ্চল থেকে প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে পারমাণবিক শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলও রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক মজুতকারী রাশিয়াও ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে।

ওসাকা থেকে আসা ১৪ বছর বয়সী পর্যটক দাইজী কাওয়ানাকা মেয়রের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি সত্যিই বিশ্বাস করি, এরকম একটি মর্মান্তিক ঘটনা যেন আর কখনও না ঘটে। আমরা কেবল অঙ্গীকার করতে পারি, শান্তির দিকে এগিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ আমরা নিজেরাই নেব।’’

যুক্তরাষ্ট্রের এই পারমাণবিক বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সংগঠন নিহন হিদানকিয়ো গত বছর পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পায়। জাপানে বেঁচে থাকা এই ব্যক্তিদের ‘‘হিবাকুশা’’ বলা হয়। তারা এখনও তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব ও সামাজিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

সূত্র: রয়টার্স।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]