41058

08/20/2025 ২৩ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি এক লাখ ১০ হাজার কোটি

২৩ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি এক লাখ ১০ হাজার কোটি

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

২০ আগস্ট ২০২৫ ১১:২৭

দেশে দীর্ঘদিনের অনিয়ম আর লুটপাটে ক্ষতবিক্ষত ব্যাংক খাত। সরকার পরিবর্তনের পর সেই ধাক্কা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশের ২৩টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। এসব ব্যাংকের ঘাটতির মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। দেশের ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অঙ্ক।

গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ১৯টি ব্যাংকের ঘাটতি ছিল এক লাখ ৭১ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। মার্চ প্রান্তিকে ঘাটতির অঙ্ক কিছুটা কমলেও ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩-এ। এর কারণ, ডিসেম্বরভিত্তিক ২৮টি ব্যাংককে ঋণ পরিশোধে ছাড় বা বিলম্বের সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। ফলে কাগজে ঘাটতি কম দেখালেও বাস্তবে ব্যাংকগুলোর অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের ঝুঁকির বিপরীতে মূলধনের অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ, যেখানে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ন্যূনতম ১০ শতাংশ থাকা জরুরি। ছাড়ের সুবিধা না থাকলে এ হার ঋণাত্মক হয়ে যেত। গত বছরের শেষে এ হার ছিল মাত্র ৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে—১৮ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৭৬৮ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ৫ হাজার ৮২২ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ৪ হাজার ৪৭০ কোটি, বেসিক ব্যাংকের ৩ হাজার ৫০৬ কোটি এবং রাকাবের ঘাটতি ২ হাজার ৫১১ কোটি টাকা।

ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংক সর্বোচ্চ ঘাটতিতে—১৭ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ঘাটতি ৭ হাজার ৭৯০ কোটি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ৬ হাজার ৪৫৪ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ৩ হাজার ৯৮১ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ৯৮০ কোটি, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ১ হাজার ৪৯৯ কোটি এবং এক্সিম ব্যাংক ৫২১ কোটি টাকা।

বেসরকারি খাতের মধ্যে আইএফআইসি ব্যাংকের ঘাটতি কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা, যা আগে ছিল ৯ হাজার ২৯ কোটি। ন্যাশনাল ব্যাংকের ঘাটতি কমে ৬ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকায় নেমেছে। তবে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঘাটতি বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৭৮২ কোটি এবং এবি ব্যাংকের ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা। পদ্মা ব্যাংকের ঘাটতিও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৭১ কোটি টাকা।

মার্চ প্রান্তিকে নতুন করে ঘাটতিতে পড়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংক, যার ঘাটতি এক হাজার ১৭১ কোটি টাকা। সীমান্ত ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৬ কোটি এবং ইউসিবি ব্যাংকের ৯৫৪ কোটি টাকা। এ সময় বিদেশি মালিকানাধীন হাবিব ব্যাংকও ঘাটতিতে পড়েছে, যার পরিমাণ ৩৬ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এই ঋণের চাপেই ২৩টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]