ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী (১৯৯২ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে) স্বাক্ষরিত দ্বিপাক্ষিক সামরিক সহযোগিতা চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করেছে রাশিয়া।
গত শনিবার রুশ সরকারের আইনি পোর্টালে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আদেশটি প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে সামরিক ও কূটনৈতিক কাঠামোর এই সমাপ্তি ঘটলো।
আদেশ অনুসারে- জার্মানি, পোল্যান্ড ও নরওয়ের সঙ্গে একটি চুক্তি বাতিলের পাশাপাশি বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, ডেনমার্ক, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, ক্রোয়েশিয়া, বেলজিয়াম এবং চেক প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে অনুরূপ চুক্তি বাতিল করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিকল্পিত চুক্তি বাতিল প্রক্রিয়া একসময় রাশিয়াকে ইউরোপের সঙ্গে সমন্বিত করার জন্য গড়ে ওঠা নিরাপত্তা সহযোগিতা কাঠামোর ধ্বংসের প্রতীক। চুক্তিগুলো প্রায়শই সামরিক সংযোগ, যৌথ মহড়া ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল, তবে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়ার দখল এবং ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে নিষ্ক্রিয় ছিল।
এরআগে গত অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আগে থেকেই স্থগিত থাকা প্লুটোনিয়াম নিষ্পত্তি চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করেছেন রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই চুক্তি বাতিলের ঘটনা মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং ভেঙে পড়া পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ কাঠামোর ওপর আরও একটি বড় আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
২০০০ সালে স্বাক্ষর হওয়া এই চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশের নিজেদের অস্ত্র ভান্ডারে থাকা উদ্বৃত্ত উচ্চমাত্রার ৩৪ টন করে প্লুটোনিয়াম ধ্বংস করার কথা ছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই দেশের মোট ৬৮ টন প্লুটোনিয়াম দিয়ে প্রায় ১৭ হাজার পারমাণবিক ওয়ারহেড তৈরি করা যেত। চুক্তির লক্ষ্য ছিল এই প্লুটোনিয়ামকে এমনভাবে প্রক্রিয়াজাত করা, যাতে তা আর সামরিক কাজে ব্যবহার করা না যায়।
রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ মূলত ২০১৬ সাল থেকেই চুক্তিটির বাস্তবায়ন স্থগিত রেখেছিল। তবে এবার পুরোপুরি বাতিল করার পেছনে রাশিয়া বেশ কিছু কারণ তুলে ধরেছে।
মস্কোর অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক ‘শত্রুতাপূর্ণ’ পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ন্যাটোর সম্প্রসারণ ঘটিয়ে কৌশলগত স্থিতিশীলতা নষ্ট করেছে।
এছাড়াও চলতি বছরের জুলাইয়ে জার্মানির সঙ্গে সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতার চুক্তি বাতিল করে রাশিয়া। সেই সময়ে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, চুক্তিটি রুশ-জার্মান আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের বর্তমান অবস্থার সঙ্গে একেবারেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়।