পৃথিবীতে বেশিরভাগ প্রাণির আছে নিজস্ব ভাষা। আকার-ইঙ্গিত, অঙ্গ-ভঙ্গি বা মুখ দিয়ে শব্দ করার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় মনের অভিব্যক্তি। এটাই ভাষা। প্রাণিরা প্রথম ভাষা শেখে মায়ের কাছ থেকে। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষেরও রয়েছে নিজস্ব ভাষা।
মনের অভিব্যক্তি নিজের ভাষায় বলতে পারার স্বাধীনতা সহজ নয়। বাংলা হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র ভাষা, যার জন্য মানুষ উৎসর্গ করেছে নিজের জীবন। তাই ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ১৯৯৯ সালে স্বীকৃতি দেয় ইউনেসকো। এর থেকেই বুঝা যায় বাংলা ভাষার প্রতি মানুষের নির্ভশীলতা।
বাংলা ভাষা কিভাবে এলো?- তা জানতে হলে চলে যেতে হবে প্রাগৈতিহাসিক যুগে। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় সব ভাষা এসেছে আর্যদের কথ্য ভাষা ‘আদি প্রাকৃত’ থেকে।
বিভিন্ন তথ্যে জানা যায়, খ্রিষ্ঠপূর্ব ২৫০০ সালে ইন্দো-ইউরোপীয় থেকে ইন্দো-ইরানিয়ান এবং ইন্দো-আরিয়ান ভাষার উদ্ভব। এই ইন্দো-আরিয়ান ভাষা’র শতম থেকে আর্য ভাষার উৎপত্তি। এরপর ১৫০০ থেকে ১২০০ খ্রিষ্ঠপূর্বাব্দে আর্যরা আসে ভারতীয় উপমহাদেশে।
খ্রিষ্ঠপূর্ব ১০০০ থেকে ৮০০ সালে আর্যরা ভারতে প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের ভাষাও পরিবর্তিত হয়। উদ্ভব হয় আদি প্রাকৃত ভাষা। খ্রিষ্ঠপূর্ব ৪০০ থেকে ২০০ সালের দিকে এই প্রাকৃত থেকে উৎপত্তি ছয় ভাষার। এর একটি গৌড়ী প্রাকৃত। গৌড়ী প্রাকৃত ভাষা ধারাবাহিকভাবে গৌড়ী অপভ্রংশ, বঙ্গ-কামরূপী হয়ে উদ্ভব দু’টি ভাষার। এর একটি অসমিয়া। আর অপরটি আমাদের প্রিয় ভাষা বাংলা।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ৬৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু হয় বাংলা ভাষার ব্যবহার। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. কাজী দীন মুহাম্মদের মতো এদেশের ভাষাবিদরা মনে করেন, প্রাকৃত অপভ্রংশের গৌড়ীয় রূপ থেকে এসেছে বাংলা। তিনটি স্তরে বিবর্তিত হয়ে আমরা পেয়েছি আজকের বাংলা ভাষা।
৯০০ থেকে ১৪০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ছিল বাংলার প্রথম স্তর। একে বলা হয় প্রাচীন বাংলা। এই সময়ে লেখা হয় প্রাচীন গানের বই ‘চর্যাপদ’। আমি-তুমি ধরণের সর্বনাম ব্যবহার শুরু তখন থেকেই।
১৪০০ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ছিল বাংলার দ্বিতীয় স্তর বা মধ্যযুগ। এ স্তরে লেখা হয় চন্ডীদাসের শ্রী কৃষ্ণ কীর্তন।
১৮০০ খিস্টাব্দ পরবর্তী সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত হচ্ছে বাংলার তৃতীয় স্তর বা আধুনিক বাংলা। বর্তমানে ভাষা হিসেবে বাংলাকে যা দেখছি, তা হচ্ছে এই স্তরের।