মঙ্গলবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৫, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


অহংকার যেভাবে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করে


প্রকাশিত:
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২৩:৩২

আপডেট:
২৯ এপ্রিল ২০২৫ ২১:১৫

প্রতিকী ছবি

অহংকার পতনের মূল। একথাটি সমাজে বহুল প্রচলিত। তবে অহংকার জিনিসটি মূলত কী?- এমন প্রশ্নের সরল উত্তর হচ্ছে, কোনো বিষয়ে নিজেকে বড় মনে করে অন্য মানুষকে তুচ্ছ মনে করার নামই অহংকার।

শক্তিতে, সামর্থ্যে বয়সে, অভিজ্ঞতায় ত্রিশ বছরের যুবক যতটা সমৃদ্ধ, বার বছরের একটি ছেলে তো সবক্ষেত্রেই সে তুলনায় রিক্তহস্ত। তার ছোট হওয়া এবং তাকে ছোট মনে করা এক অনস্বীকার্য বাস্তবতা। বাস্তবেই যে ছোট তাকে ছোট মনে করা অহংকার নয়। বরং অহংকার হচ্ছে, সে ছোট বলে তাকে তুচ্ছ জ্ঞান করা।

কাড়ি কাড়ি টাকা যার ব্যাংক একাউন্টে সঞ্চিত, সে তো যে দিন এনে দিন খায় তাকে অর্থবিত্তে ছোট মনে করতেই পারে। এটা অহংকার নয়। অহংকার হচ্ছে তাকে তাচ্ছিল্য করা, গরীব বলে তাকে হেয় করা।

এ অহংকার একটি ঘাতক ব্যাধি। পবিত্র কোরআনে নানাভাবে চিত্রিত হয়েছে এই ঘাতক ব্যাধির কথা। একে ঘাতক ব্যাধি বলা হয়, কারণ তা মানুষের অন্তর্জগৎকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়। আর এর পরকালীন ক্ষতি তো রয়েছেই। এই অহংকার শয়তানকে ‘শয়তানে’ পরিণত করেছে, অভিশপ্ত করে দিয়েছে, রহমতবঞ্চিত করেছে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-

سَاَصْرِفُ عَنْ اٰیٰتِیَ الَّذِیْنَ یَتَكَبَّرُوْنَ فِی الْاَرْضِ بِغَیْرِ الْحَقِّ

পৃথিবীতে যারা অন্যায়ভাবে অহংকার প্রকাশ করে তাদেরকে অবশ্যই আমি আমার নিদর্শনাবলি থেকে বিমুখ করে রাখব। -(সূরা আ‘রাফ, আয়াত, ১৪৬)

অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে,

اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ فَالَّذِیْنَ لَا یُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ قُلُوْبُهُمْ مُّنْكِرَةٌ وَّ هُمْ مُّسْتَكْبِرُوْنَ لَا جَرَمَ اَنَّ اللهَ یَعْلَمُ مَا یُسِرُّوْنَ وَ مَا یُعْلِنُوْنَ اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الْمُسْتَكْبِرِیْنَ

‘তোমাদের মাবুদ এক মাবুদ। সুতরাং যারা আখেরাতে ঈমান রাখে না তাদের অন্তরে অবিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে গেছে এবং তারা অহংকারে লিপ্ত। স্পষ্ট কথা, তারা যা গোপনে করে তা আল্লাহ জানেন এবং যা প্রকাশ্যে করে তাও। নিশ্চয়ই তিনি অহংকারীকে পছন্দ করেন না। -(সূরা নাহল, আয়াত, ২২-২৩)

কোরআনের এই আয়াতগুলো থেকে মোটা দাগে তিনটি শিক্ষা দেওয়া হয়েছে-

১. অহংকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ তাঁর নিদর্শন থেকে বিমুখ করে রাখেন। তার অন্তর ও চোখকে তিনি সত্য অনুধাবন এবং সঠিক পথ অবলম্বন থেকে ‘অন্ধ’ করে দেন। পবিত্র কোরআনের কত জায়গায় আল্লাহ জ্ঞানীদের বলেছেন তার নির্দশনাবলি নিয়ে চিন্তা করার কথা। এ চিন্তা মানুষের সামনে আল্লাহ পাকের বড়ত্ব কুদরত এবং আমাদের ওপর তাঁর সীমাহীন অনুগ্রহ ফুটিয়ে তোলে। তখন স্বাভাবিকভাবেই মহান প্রভুর কাছে সে নিজেকে পরিপূর্ণরূপে সঁপে দিতে প্রস্তুত হয়ে ওঠে; কৃতজ্ঞতায় সিজদাবনত হয়। তাই আল্লাহ যদি কাউকে তাঁর ওসব নিদর্শন থেকে বিমুখ করে রাখেন তাহলে সে যে দ্বীনের মূল ও সরল পথ থেকেও ছিটকে যাবে তা তো বলাবাহুল্য।

২. আল্লাহ তাআলার প্রতি যার বিশ্বাস নেই, পরকালে বিশ্বাস নেই, অহংকার তো কেবল তারাই করতে পারে।

৩. অহংকারীকে আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না। কী ইহকাল আর কী পরকাল, একজন মানুষের অশান্তি, লাঞ্ছনা আর সমূহ বঞ্চনার জন্যে এর পরে কি আর কিছু লাগে? ‘আল্লাহ সর্বশক্তিমান’ এ বিশ্বাস যাদের আছে তাদেরকে এ কথা মানতেই হবে-প্রকৃত সম্মান পেতে হলে আল্লাহ তাআলার প্রিয়ভাজন হতেই হবে।

অহংকারের ভয়াবহতা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

لاَ يَدْخُلُ الجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةٍ مِنْ خَرْدَلٍ مِنْ كِبْرٍ، وَلاَ يَدْخُلُ النَّارَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةٍ مِنْ إِيمَانٍ

তিল পরিমাণ অহংকার যার অন্তরে আছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না, আর তিল পরিমাণ ঈমান যার অন্তরে আছে সে দোজখে যাবে না। -(জামে তিরমিজি, হাদীস ১৯৯৮)

অহংকার থেকে মুক্ত থাকতে হলে কী করতে হবে-সে পথও বাতলে দিয়েছে পবিত্র কোরআন। সে পথ শোকর ও কৃতজ্ঞতার পথ। বান্দা যখন শোকর আদায় করবে, কৃতজ্ঞতায় সিজদাবনত হবে, সবকিছুকেই আল্লাহর নিয়ামত বলে মনে-প্রাণে স্বীকার করবে তখন তার কাছে অহংকার আসবে কোত্থেকে? শোকর করার অর্থই তো হল-আমার যা প্রাপ্তি, সবই আল্লাহর নিয়ামত ও অনুগ্রহ। এখানে আমার কোনোই কৃতিত্ব নেই। এ ভাবনা যার মনে সদা জাগরুক থাকে, অহংকার তার মনে বাসা বাঁধতে পারে না।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top