মঙ্গলবার, ৩রা জুন ২০২৫, ১৯শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


জুমার খুতবা নামাজের আগে, ঈদের খুতবা পরে—হেকমত কী


প্রকাশিত:
১ জুন ২০২৫ ১৩:৪২

আপডেট:
৩ জুন ২০২৫ ০৩:৫২

ছবি সংগৃহীত

জুমার নামাজের আগে খুতবা দেওয়া হয়, অথচ ঈদের খুতবা দেওয়া হয় নামাজের পরে—এটি অনেকের কাছে একটি প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। ইসলামি শরিয়তে এমন ভিন্ন নিয়মের পেছনে রয়েছে সুস্পষ্ট হাদিস, কোরআনি ইঙ্গিত ও হেকমত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উভয় খুতবার সময় নির্ধারণ আল্লাহর রাসুল (স.)-এর সুন্নাহ এবং সাহাবায়ে কেরামের ইজমা দ্বারা সাব্যস্ত।

জুমার খুতবা কেন নামাজের আগে?
পবিত্র কোরআনের ইঙ্গিত অনুযায়ী, জুমার সালাতের জন্য যখন আহ্বান করা হয়, তখন আল্লাহর জিকিরের দিকে ধাবিত হতে বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ‘হে ঈমানদারগণ! যখন জুমার দিনে সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর জিকিরের দিকে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর।’ (সুরা জুমা: ৯)

তাফসিরবিদগণ এই ‘আল্লাহর জিকির’ বলতে জুমার খুতবাকে বুঝিয়েছেন (তাফসিরে কুরতুবি, ইবন কাসির)।

অন্যদিকে, সহিহ মুসলিম ও অন্যান্য হাদিসগ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (স.) সর্বদা জুমার নামাজের আগে দুই খুতবা দিতেন। সাহাবিরাও কখনও নামাজের পরে খুতবা দেননি। এটি ইজমায়ে উম্মত হিসেবে সাব্যস্ত।

আরও পড়ুন: জুমার খুতবা দুই রাকাত নামাজের সমতুল্য?

ঈদের খুতবা কেন নামাজের পরে?
ঈদের নামাজ ফরজ নয়; বরং সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বা ওয়াজিব (হানাফি মতে)। এজন্য ঈদের নামাজশেষে খুতবা দেওয়ার বিধান এসেছে গুরুত্বপূর্ণ নসিহত হিসেবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ السَّائِبِ، قَالَ: شَهِدْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ الْعِيدَ، فَلَمَّا قَضَى الصَّلَاةَ، قَالَ: «إِنَّا نَخْطُبُ، فَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يَجْلِسَ لِلْخُطْبَةِ فَلْيَجْلِسْ، وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يَذْهَبَ فَلْيَذْهَبْ ‘আমি ঈদের দিনে রাসুলুল্লাহ (স.)–এর সঙ্গে উপস্থিত ছিলাম। নামাজশেষে তিনি বললেন- ‘এখন আমরা খুতবা দিব। যে ইচ্ছা করে সে শুনুক, আর যে ইচ্ছা করে চলে যাক।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১১৫৫)

তবে খুতবা শোনাকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। ইবনে আব্বাস (রা.) স্পষ্টভাবে বলেন- وَجَبَ الْإِنْصَاتُ فِي أَرْبَعَةِ مَوَاطِنَ: الْجُمُعَةِ، وَالْفِطْرِ، وَالْأَضْحَى، وَالِاسْتِسْقَاءِ ‘চারটি স্থানে চুপ থাকা (খুতবা শোনা) ওয়াজিব: জুমা, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা এবং ইসতিসকার খুতবার সময়।’ (মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক: ৫৬৪২)

খুতবা আগে-পরে হওয়ার হিকমত বা প্রজ্ঞা কী?
জুমার খুতবা নামাজের অংশ, আর ঈদের খুতবা উপদেশমূলক। ঈদের খুতবা পরে হওয়ায় কেউ তাড়াহুড়া করে (বেশি প্রয়োজন হলে) চলে যেতে চাইলে পারবে, কিন্তু জুমার নামাজে সেই সুযোগ নেই—এটাই রহস্য। কিন্তু তবুও দুই খুতবা শোনাই ওয়াজিব। যদিও ঈদের খুতবার বাধ্যবাধকতায় কিছুটা শিথিলতা রয়েছে।

ঐতিহাসিক ঘটনা
একবার রাসুলুল্লাহ (স.) খুতবা দিচ্ছিলেন, তখন একটি বণিক কাফেলার আগমন ঘটে। কিছু সাহাবি খুতবা ছেড়ে কাফেলার দিকে চলে যান। এর পরিপ্রেক্ষিতে সুরা জুমুার ১১ নম্বর আয়াত অবতীর্ণ হয়। কিছু বর্ণনায় বলা হয়েছে, এই ঘটনার পর খুতবা নামাজের আগে নির্ধারিত হয়। তবে ইমাম ইবনে হাজার ও আল্লামা আলুসি প্রমুখ মুহাদ্দিসরা এই মতকে দুর্বল বলেছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (স.) শুরু থেকেই খুতবা নামাজের আগে প্রদান করতেন। (রুহুল মাআনি: ২৮/১০৫; ফাতহুল বারি: ২/৪৯৩; উমদাতুল কারি: ৬/২৪৭)

মোট কথা, জুমার খুতবা নামাজের আগে হওয়া যেমন প্রশ্নাতীত ওয়াজিব, ঈদের খুতবা নামাজের পরে হওয়াও রাসুলুল্লাহ (স.)-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত হিসেবে সর্বসম্মত অভিমত। উভয় ক্ষেত্রেই খুতবা শ্রবণকে শরিয়ত ওয়াজিব করেছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রত্যেক বিষয়ে ইসলামিক দিক-নির্দেশনা মেনে নেওয়ার এবেং মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top