আল্লাহ মানুষকে যে পরীক্ষা করেন
প্রকাশিত:
১০ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:২৭
আপডেট:
১৩ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:৫৪

আজ এসএসসি পরীক্ষা শুরু। একে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনার শেষ নেই। কেমন প্রস্তুতি নিলাম, কতটা নেওয়া জরুরি ছিল, প্রশ্ন কেমন আসতে পারে—কত দুশ্চিন্তাই না কাজ করে শিক্ষার্থীদের। এমনকি অভিভাবকরাও সন্তানের পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন।
কিন্তু আমরা কি জানি গোটা পৃথিবীটাই পরীক্ষাগার? আমরা সবাই সে পরীক্ষাগারের পরীক্ষার্থী? পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনি (আল্লাহ) সেই সত্তা, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। আর তাঁর আরশ ছিল পানির ওপর, যেন তিনি যাচাই করতে পারেন, তোমাদের মধ্যে কে কর্মে শ্রেষ্ঠ...।’ (সুরা হুদ: ৭)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘পৃথিবীতে যা কিছু আছে, আমি তা তার জন্য শোভা বানিয়েছি, যেন আমি পরীক্ষা করতে পারি মানুষের মধ্যে আমলে কে শ্রেষ্ঠ।’ (সুরা কাহাফ: ৭)
আয়াতে বলা হচ্ছে- সৃষ্টিজগতে যতকিছু আছে, ধন-সম্পদ, খনিজ পদার্থ, গুপ্তধন, বিপরীত লিঙ্গ, সন্তান সন্ততি, ক্ষমতা—সবই দুনিয়ার শোভা। এগুলোর মাধ্যমে মহান আল্লাহ মানবজাতিকে পরীক্ষা করেন। কারা এগুলোর ভেতর থেকেও দুনিয়াপ্রীতি সংবরণ করে মহান আল্লাহর নির্দেশনা মোতাবেক জীবন পরিচালনা করে। আর কারা এগুলোর লোভে পড়ে আল্লাহর হুকুম থেকে দূরে সরে যায়। এজন্য নবীজি (স.) তাঁর উম্মতদের দুনিয়ার চাকচিক্যের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।
হজরত আবু সাঈদ আল-খুদরি (রা.) বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (স.) ভাষণ দিতে দাঁড়ালেন। তিনি ভাষণে বলেন, নিশ্চয়ই দুনিয়া সবুজ-শ্যামল ও লোভনীয়। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ায় তোমাদের খলিফা (প্রতিনিধি) বানিয়েছেন। তিনি দেখবেন যে তোমরা কেমন কাজ করো। সাবধান! দুনিয়া সম্পর্কে সতর্ক হও এবং নারীদের সম্পর্কেও সতর্ক হও। (ইবনে মাজাহ: ৪০০০)
আমাদের উচিত বিষয়গুলো অনুধাবন করা। যে পরীক্ষা আমাদের করা হচ্ছে, তাতে উত্তীর্ণ হওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। যেমনটি দুনিয়ার পরীক্ষার্থীরা চেষ্টা করেন। দুনিয়াতে আপনি চাইলে আমলের মাধ্যমে ও গুনাহ ত্যাগের মাধ্যমে উত্তম বান্দা হতে পারেন, আবার চাইলে অধম বান্দাও হতে পারেন। ইচ্ছা আপনার। কিন্তু একটা কথা মনে রাখা জরুরি যে, দুনিয়ার পরীক্ষায় ফলাফল খারাপ হলে আবারও পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ আছে, কিন্তু আল্লাহর পরীক্ষার সময় পার হয়ে গেলে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ নেই।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করো, তোমাদের কারো মৃত্যু আসার আগে। কেননা তখন সে বলবে, হে আমার রব, যদি আপনি আমাকে আরো কিছুকাল পর্যন্ত অবকাশ দিতেন, তাহলে আমি দান-সদকা করতাম। আর সৎ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। আর আল্লাহ কখনো কোনো প্রাণকেই অবকাশ দেবেন না, যখন তার নির্ধারিত সময় এসে যাবে। আর তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।’ (সুরা মুনাফিকুন: ১০-১১)
মূলত আমাদের সৃষ্টিই করা হয়েছে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য। ‘তিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য। কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।’ (সুরা মুলক: ২)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে জীবন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: